রাজেশ খান্নার ডেট কোনওমতেই পরিবর্তন করা যাবে না। এদিকে শর্মিলা শক্তি সামন্তকে জানিয়েছেন তিনি সত্যজিৎ রায়ের ছবির অফার পেয়েছেন।
'আরাধনা' ছেড়ে 'অরণ্যের দিনরাত্রি’
শেষ আপডেট: 23 May 2025 12:25
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) ১৯৭০ সালে নির্মাণ করেন কালজয়ী ছবি 'অরণ্যের দিনরাত্রি' (Aranyer Dinratri)। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে তখন গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কারের দৌড়ে ছিল এই ছবি। ৫৫ বছর পর, ছবিটির ফোর-কে সংস্করণ এবার প্রদর্শিত হল কান চলচ্চিত্র উৎসবে। সিনেমার প্রদর্শনী উপলক্ষে কানে হাজির ছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র দুই প্রবীণ অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore) ও সিমি গারেওয়াল। রেড কার্পেটে হেঁটে দুই বর্ষীয়সী আভিজাত্যের ঝড় তুললেন। অথচ এই 'অরণ্যের দিনরাত্রি' ছবির শ্যুটিংয়ের ডেট দেওয়াই সম্ভব ছিল না শর্মিলা ঠাকুরের পক্ষে। কারণ তখন তিনি শক্তি সামন্তের 'আরাধনা' (Aradhana) ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিলেন।
কিন্তু শর্মিলা ঠাকুরের গডফাদার ছিলেন সত্যজিৎ রায়। সত্যজিতের 'অপুর সংসার' দিয়েই চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে শর্মিলা ঠাকুরের। তাই তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া শর্মিলার পক্ষে সম্ভব ছিল না। দীর্ঘ এক মাসের আউটডোর ছিল এই ছবির। এদিকে তখন রাজেশ খান্না আর শর্মিলা ঠাকুরের 'আরাধনা'র শ্যুটিং শুরু হয়ে গেছে। সেই সময় দার্জিলিং-এ রাজেশ খান্নার লিপে কিশোর কুমারের 'সপনো কি রানি' গানের শ্যুটিং চলছিল।
প্লট ছিল শর্মিলা ঠাকুর টয়ট্রেনে বসে বই পড়ছেন আর তাঁকে দেখে গান গাইছেন রাজেশ খান্না ও সুজিত কুমার। তখন রাজেশ খান্নার ডেট পাওয়া বিশাল ব্যাপার ছিল। কারণ তিনি ১২ জন প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করছিলেন। রাজেশ খান্নার ডেট কোনওমতেই পরিবর্তন করা যাবে না। এদিকে শর্মিলা শক্তি সামন্তকে জানিয়েছেন তিনি সত্যজিৎ রায়ের ছবির অফার পেয়েছেন।
শক্তি সামন্ত আর সত্যজিৎ রায়, দু'জনেই ছিলেন বাঙালি পরিচালক এবং তাঁরা একে অন্যকে শ্রদ্ধাও করতেন। সত্যজিতের ছবির জন্য শর্মিলাকে ডেট ছেড়ে দেন শক্তি সামন্ত। আদতে দর্শকদের ঠকিয়েছিলেন শক্তি সামন্ত।
'সপনো কি রানি' গানের শুটিংয়ে রাজেশ খান্না (Rajesh Khanna) ও তাঁর বন্ধুর চরিত্রে সুজিত কুমারের দৃশ্যগুলি দার্জিলিংয়ে শ্যুট হয়েছিল, কিন্তু সেখানে শর্মিলার ট্রেনের দৃশ্যগুলি স্টুডিও শ্যুট করা হয়েছিল, পিছনে প্রজেকশন ব্যবহার করে। রাজেশ খান্না একদমই শর্মিলা ঠাকুরকে দেখে এই গানে লিপ দেননি। অথচ রাজেশ খান্নার জীবনের শ্রেষ্ঠ রোম্যান্টিক গান এটি। যা ভাবাই যায় না। সেই সময় সত্যজিৎ রায়ের 'অরণ্যের দিনরাত্রি’র শ্যুটিং করতে ব্যস্ত ছিলেন শর্মিলা।
মেনস্ট্রিমে 'আরাধনা' হিটের নজির গড়ে। এই হিন্দি ছবি পরে বাংলায় ডাবড হয়ে রিলিজ করলেও সুপারহিট হয়। তেমন সত্যজিতের 'অরণ্যের দিনরাত্রি’র বাংলা সহ সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে।
দুটি ছবি এতটাই দর্শকনন্দিত হয় যে বোঝাই যায়নি শর্মিলা ঠাকুর ঐ দৃশ্যে আদৌ ছিলেন না। সত্যজিৎ রায় আর শক্তি সামন্তের সাহচর্য সেদিন শর্মিলা পেয়েছিলেন বলেই আজকের কান চলচ্চিত্র উৎসবের এই গৌরবময় দৃশ্যের সাক্ষী হতে পারল সারা বিশ্ব।