রাতুল-রূপাঞ্জনার বিয়ের তারিখ কিন্তু আইকনিক সিনেমার নামে। '১৯ শে এপ্রিল'। শাশুড়ির সঙ্গেও জামাইয়ের আড্ডার কমন টপিক সিনেমা।
জামাই আদর। গ্রাফিক্স - দিব্যেন্দু দাস
শেষ আপডেট: 2 June 2025 05:53
'সোহাগে আদরে বাঁধা পড়ে আমি,ভালোবেসে যাই,
স্মৃতির সাগরে ডুবে গিয়ে আমি,ভালোবেসে যাই।
ভ্রমণের শেষে ফিরে এসো তুমি আগের মতো,
কেউ বসে আছে তোমার অপেক্ষায়।
আধখানা ভোরে আলোরেখা হয়ে
ভালোবেসে যাই।'
বিয়ের এক বছর ঘুরে গেছে এই জুটির। টলিপাড়ার অভিনেত্রী-পরিচালক জুটি রূপাঞ্জনা মিত্র (Rupanjana Mitra) ও রাতুল মুখোপাধ্যায়( Ratool Mukherjee)। এ বছর তাঁদের দ্বিতীয় জামাইষষ্ঠী। তবে আজকের জামাইষষ্ঠী (Jamaisasthi) এক্সক্লুসিভ আড্ডায় (Exclusive Interview) থাকছেন রূপাঞ্জনার মা শুক্লা মিত্র (Sukla Mitra) এবং জামাই রাতুল মুখোপাধ্যায়। যাঁরা দু'জনেই দু সময়ের পরিচালক।
শুক্লা মিত্র নয়ের দশক থেকেই পরিচালক প্রযোজক ছিলেন। টলিউডের মহিলা পরিচালকদের মধ্যে শুক্লা মিত্রের নামটিও থাকবে। রবি ঠাকুরের 'গোরা' চলচ্চিত্র করেছিলেন তিনি। মনে পড়ছে রবি ঠাকুরের তিনটি কবিতার চিত্ররূপ নিয়ে তিনি তৈরী করেন তিনটি ছোট ছবির সমাহারে 'তিন তনয়া' ছবি। তিন নায়িকার গল্প। যার একটি চরিত্রে ছিলেন রূপাঞ্জনা। এই ছবির সংগীত পরিচালকও গৌতম মিত্র। ছোট পর্দাতেও শুক্লা মিত্রকে পেয়েছি নানা সময়ে। প্রথম যুগের জি বাংলার 'চোখের বালি' সিরিয়াল ভুলি কী করে। যাতে বিনোদিনীর চরিত্রে সাদা থান পরে রূপাঞ্জনা ক্যারিয়ারের শুরুতেই নজর কেড়ে নেন। ঐশ্বর্য রাইয়ের সঙ্গে টক্কর দিতে পারে রূপাঞ্জনার অভিনয় বিনোদিনী রূপে। ঐশ্বর্যর আগেই সিরিয়ালে বিনোদিনী হন রূপাঞ্জনা। এদিকে রাতুলও এই সময়ের নামী পরিচালক।
আবার রূপাঞ্জনার বাবা হলেন সঙ্গীতশিল্পী গৌতম মিত্র, যাকে বলা হত আশির দশকের হেমন্ত। সুদর্শন গৌতম মিত্রের কন্ঠ ছিল একদম হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতোই। তাঁর নিজের মৌলিক গান হিট করেছিল তৎকালীন পলিডোর মিউজিক কোম্পানি থেকে। 'লাল পাহাড়ি' ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন গৌতম মিত্র। তাঁর সুরে এই ছবিতে গান গেয়েছিলেন আশা ভোঁসলে। তখনকার দূরদর্শনের সিরিয়ালেও গৌতম মিত্রর কন্ঠে শোনা যেত গান। আধুনিক গানের পাশাপাশি তিনি নিজের পরিচয় তৈরী করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবেই। পঁচিশে বৈশাখের সকাল গুলোতে তাঁর কন্ঠেই শ্রোতারা পেতেন হেমন্ত কন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ছোঁয়া। রসিক গানপাগল সুপুরুষ গৌতম বাবু সঙ্গীতের শিক্ষক রূপে শ্রদ্ধার আসনে। সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর পার করে এখনও তিনি সতেজ কন্ঠে।
আজ জামাইষষ্ঠীর গল্পে শাশুড়ি মা শুক্লা মিত্র বললেন 'আমি কিন্তু নিজের হাতে বাজার করি রোজ। অন্য কারও বাজার করা আমার পছন্দ হয় না। বাজারে গিয়ে টাটকা যা সব্জি, মাছ পাব সেটাই কিনব। সে দামি ইলিশ মাছও হতে পারে, বাটা মাছও হতে পারে। একটা স্পেশাল জায়গার বাটা আছে যার স্বাদ দামি মাছকেও হার মানায়। আমি বাজারে ভাল টাটকা কী এসেছে দেখে, তারপর ঠিক করি কী কী পদ রাঁধব। রান্না আমার কাছে আর্ট। আমার জামাই আমার হাতের রান্না খেতে ভীষণ পছন্দ করে। আজ আবার রূপাঞ্জনার শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদ, রূপাঞ্জনা-রাতুলকে রেস্তোরায় খেতে নিয়ে যাবে দুপুরে। বৌমাষষ্ঠী যাপন। আজকের ষষ্ঠী তো সব সন্তানের মঙ্গল কামনায় করা হয়। তাই আমি রাতের ডিনার পাঠাব ওঁদের। আজ আমি রাঁধলাম চিকেন চাপ, লেমন রাইস, পমফ্রেট সর্ষে নারকেল পাতুরি, পরোটা আর ম্যাঙ্গো পুডিং। ওরা বেশি খেতে পারে না একসঙ্গে। আবার আমার নাতি তো মাছ একদম খায় না, পাঠার মাংস খায় না, তাই চিকেন চাপ আরও করলাম। সঙ্গে মেয়ে-জামাই-নাতিকে নতুন জামা-কাপড় পাঠাব।'
রাতুল-রূপাঞ্জনার বিয়ের তারিখ কিন্তু আইকনিক সিনেমার নামে। '১৯ শে এপ্রিল'। দু'জনের প্রেমের প্রধান পছন্দের বিষয় ছিল সিনেমা। আবার শাশুড়ির সঙ্গেও জামাইয়ের আড্ডার কমন টপিক সিনেমা। পরিচালক জামাই রাতুল মুখোপাধ্যায় বললেন 'আমার শাশুড়ি মা নিজে যেহেতু একজন পরিচালক, তাই আমাদের দুজনের বন্ডিংটা শুরু থেকেই খুব ভাল। বাংলা ক্লাসিক ছবি নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়। আর ওঁনার হাতের রান্নার ভীষণ ভক্ত আমি। শাশুড়ি মায়ের হাতের সর্ষে ইলিশ ভাপা চমৎকার হয়। যেটা হাত চেটেপুটে খাই। উনি নিজে হাতে বাজার করে রান্না করেন। খাঁটি জিনিস ভাল চেনেন। যার সঙ্গে ওঁর রান্নার শৈলি মিলে অসাধারণ এক একটা পদ তৈরি হয়। যেমন দুধ লাউ যে একটা আইটেম হয় সেটা আমি আমার শাশুড়িমার হাতেই প্রথম খেয়েছিলাম। এখন তো রূপাঞ্জনার থেকে আমি বেশি নানারকম রান্নার জন্য মায়ের কাছে আবদার করি। আমাদের ছেলে রিয়ানকেও বলি দাদু-দিদুনের বাড়ি কদিন থেকে আসতে, যাতে ওর পুষ্টি লাগে গায়ে। শাশুড়ি মা সব্জির এত রকম রেসিপি জানেন যা ভাবাই যায় না। ওপার বাংলার বিরল সব রেসিপি ওঁর কাছে আছে। বিভিন্ন রকম পাতা বেটে কী দারুণ সুস্বাদু রেসিপি বানান। সেদিক থেকে আমি খুব ভাগ্যবান। আজকের জামাইষষ্ঠীর স্পেশাল রান্না খাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। '
জামাইয়ের সঙ্গে শ্বশুর-শাশুড়ির রসায়ন কতটা জমে? রাতুল বললেন ' শ্বশুরমশাই গৌতম মিত্রর সঙ্গে আমার গানের আসর খুব জমত প্রথম থেকেই। 'নিশি না পোহাতে' গানটি শ্বশুরমশাইয়ের খুব প্রিয়। যেটা আমরা একসঙ্গে মাঝেমধ্যেই গাই। তবে আজকাল খেলা আর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয় বেশি। শাশুড়ি মা-ও আমার গানের খুব ভক্ত।'
শুক্লা মিত্রের কথায় 'আমাদের বাড়িতে পরনিন্দা-পরচর্চা একেবারেই হয় না। গান-বাজনা, সিনেমা আর রাজনীতি নিয়ে আমাদের আড্ডা হয়। রাতুল বয়সে ছোট হলেও ভীষণ পরিণত মনের, তাই আমাদের বন্ডিং এত ভাল।'