মৌচাকের শ্যুটিং, মিঠু একদিন বলল আমার কাজ করতে ভাল লাগছে না। বলে শ্যুটিং বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল। এরকম ব্যবহার বাকিরা সহ্য করবে কেন? উগ্র ব্যবহার মাঝেমধ্যেই প্রকাশ পেত। কিন্তু মেয়েটা তো ভাল ছিল আচার ব্যবহারে। কতদিন দেখা হয় না, কথা হয় না।
গ্রাফিক্স - দিব্যেন্দু দাস
শেষ আপডেট: 20 June 2025 07:18
সত্তর দশকে যৌবন সরসী রূপ নিয়ে রুপোলি পর্দায় আগমন হয় এক নায়িকার, তিনি ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ মিঠু মুখার্জী। যার রূপে দেহসৌষ্ঠবে ছিল অটুট যৌন আকর্ষণ আবার দেবী মুখের মিশেল। দীনেন গুপ্তর ছবি ‘মর্জিনা আবদাল্লা’-তে মিশরীয় লাস্যে মর্জিনা করে সারা বাংলায় প্রথম সারির নায়িকাতে চলে আসেন মিঠু। এরপর 'মৌচাক', 'চাঁদের কাছাকাছি', 'হোটেল স্নো ফক্স', 'আশ্রিতা' প্রায় প্রতিটি ছবিতেই তুমুল জনপ্রিয়তা পান মিঠু মুখোপাধ্যায়। কিন্তু বহুকাল লোকচক্ষুর আড়ালে তিনি। কেমন আছেন মিঠু? শুরুর দিনের সে সব গল্প মিঠুর জন্মদিনে দ্য ওয়াল আড্ডায় বলতে বসলেন তাঁর সহঅভিনেত্রী রত্না ঘোষাল।
মৌচাক ছবিতে মিঠু ছিলেন নায়িকা আর রত্না বাড়ির পরিচারিকা চাঁপার চরিত্রে। কিন্তু রত্না ঘোষাল মিঠুর থেকে অভিজ্ঞতায় অনেকদিনের সিনিয়র অভিনেত্রী। দু'জনে কাছাকাছি বয়সের।
রত্না ঘোষাল দ্য ওয়ালকে বললেন 'আমার তো প্রথম ছবি বিজয় বসুর 'রাজা রামমোহন'। ১৯৬২ সালে আমি শুরু করি। মিঠু এল ইন্ডাস্ট্রিতে সাতের দশকে। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের 'মৌচাক' ছবিতেই মিঠুর সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। আমি সিনিয়র অভিনেত্রী বলে মিঠু কিন্তু আমাকে সেই সম্মানটা দিত। আমাদের মধ্যে খুব বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল 'মৌচাক' করতে গিয়ে। আরও অনেক ছবিতেই ওঁর সঙ্গে কাজ করেছি। 'স্বয়ংসিদ্ধা'তেও ছিলাম আমি। সার্দান অ্যাভিনিউতে অশোক হলে মিঠুর অনেক উঁচু তলায় ফ্ল্যাট ছিল। সেখানেও গিয়েছি। মিঠুর সঙ্গে ওঁর মা থাকতেন। ওঁর দিদি মঞ্জুলা দাসও আসতেন। মিঠু কিন্তু খেতে খুব ভালবাসত। মৌচাকের শ্যুটিংএ প্রচুর খাবার কিনে রোজ মিঠু নিয়ে আসত। আমাদের খাওয়াত। ওঁর মনটা বড় ছিল।'
মিঠু মুখার্জী মানেই সেভেন্টিজ সেক্সি ডিভা। এই বিষয়ে রত্না বললেন 'মিঠুর তো সেক্সি ফিগার ছিল। তাহলে সেই আবেদন তখন ঝড় তুললে দোষ কী! খুব সুন্দরী তো মিঠু ছিল। অল্প সময়েই শীর্ষস্থানিয়া অভিনেত্রী হয়ে যায়।'
মিঠু মুখার্জীর ব্যক্তিগত জীবন, মদ্যপান নিয়ে অনেক গসিপ শোনা যেত। রত্না বললেন 'তখন মদ কে না খেত! মহুয়া, মিঠু মদ সবাই খেত! তার মানে কী তাঁরা উচ্ছৃঙ্খল। মিঠু এখনকার অভিনেত্রীদের মতো মোটেই খুল্লামখুল্লা ছিল না। পরে তো বম্বে চলে যেতে আমাদের সঙ্গে ওঁর দুরত্ব তৈরি হয়। 'আশ্রিতা' ছবি মিঠু প্রযোজনা করল। বিশাল হিট। সে ছবিতেও কিন্তু মিঠু আমাকে নিয়েছিল।
এখন কী মিঠুর সঙ্গে রত্নার যোগাযোগ আছে? রত্না বললেন 'নাহ না! কতদিন কথা হয় না। ওঁর শেষ ছবি 'আশ্রিতা' তো বিশাল হিট করেছিল নাইন্টিজে। 'আশ্রিতা' হিটের সাফল্যে মিঠু আমাকে বলেছিল আবার ছবি বানাবে এবং নিজে নায়িকাও হবে। কিন্তু আর তো ছবি করে উঠতে পারল না। এত হিট ছবি করার পর এই প্রস্থান বেশ অবাক করা।'
মিঠু মুখার্জীর প্রস্থানের কারণ কী? রত্নার কথায় 'এক বম্বে গিয়ে অসফল হল। দ্বিতীয়ত ভীষণ খামখেয়ালি ছিল মিঠু। মৌচাকের শ্যুটিং মিঠু একদিন বলল আমার কাজ করতে ভাল লাগছে না। বলে শ্যুটিং বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল। এরকম ব্যবহার বাকিরা সহ্য করবে কেন? উগ্র ব্যবহার মাঝেমধ্যেই প্রকাশ পেত। কিন্তু মেয়েটা তো ভাল ছিল আচার ব্যবহারে। কতদিন দেখা হয় না, কথা হয় না। সেটাই মিস করি আজ ওঁর জন্মদিনে।'