একাকীত্বের দিনগুলো রাজেশ খান্না এই বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন। নেশা আর একাকীত্ব ছিল তাঁর সঙ্গী। কোনও ফ্যান লেটার বা মিডিয়ার আলো তাঁর কাছে আসত না।
রাজেশ বাংলোটির নাম পরিবর্তন করে 'আশীর্বাদ' রাখেন।
শেষ আপডেট: 19 May 2025 14:22
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বলিউড ইতিহাসে কোন বাংলোকে ঘিরে এমন ঘটনা খুবই বিরল। যে কজন অভিনেতা বম্বের এই বাংলো কিনেছিলেন, প্রত্যেকের জীবনে অভিশাপ ঘনিয়ে আসে। সত্যি কী ভূতের অভিশাপ লেগেছিল এই বাংলোতে? কোন রহস্যের থেকে এই বাংলো সবার জীবন ছাড়খাড় করে দিয়েছিল?
বলিউডের তিন যুগের তিন হিরো কিনেছিলেন এই বাংলো কিন্তু কপাল পুড়েছিল তিনজনেরই। বাংলোর নাম পাল্টেও সমস্যার কোনও কিনারা হয়নি।
বম্বের কার্টার রোডের এই বাংলো স্বাধীনতার আগে এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবার তৈরি করেছিলেন। তখন কী নাম ছিল এটির তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এরপর পাঁচের দশকের সুপারস্টার হিরো ভারতভূষণ প্রথম কেনেন এই বাংলো। তিনি 'বৈজু বাওরা', 'মির্জা গালিব', 'গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া', 'বরসাত কি রাত'-এর মতো ছবি করে সাফল্য অর্জন করেছিলেন। এত হিটের পর বাংলো কেনার পর আচমকাই ভারতভূষণের সব ছবি ফ্লপ হতে থাকে। তাঁর এত লোকসান বেড়ে যায় যে ঋণের দায়ে এই বাংলো তাঁকে বিক্রি করে দিতে হয়। এরপর আর কিন্তু ভারতভূষণ ভাগ্য ফেরেনি। শেষ হয়ে যায় তাঁর যুগ।
ভারতভূষণ ছেড়ে দেবার পর এই বাংলোতে আর কেউ থাকতে চাননি। এক বন্ধুর পরামর্শে ষাটের দশকের সুপারস্টার হিরো রাজেন্দ্র কুমার মাত্র ৬০ হাজার টাকায় কেনেন এই বাংলো। এই বাঙলোতে ভূতুড়ে প্রভাব আছে তা কিন্তু জানতেন রাজেন্দ্র কুমার। রাজেন্দ্রকে অভিনেতা মনোজ কুমার 'ভূতের বাংলো' গুজবে বিশ্বাস না করতে বলেছিলেন এবং সেখানে যাওয়ার আগে তাকে পূজা করার পরামর্শ দেন।
'সঙ্গম' ছবির হিরো রাজেন্দ্র কুমার তাঁর মেয়ের নামে বাংলোটির নাম রেখেছিলেন 'ডিম্পল'। সেই বাংলোয় থাকার পরেও তিনি সফল হতে থাকেন। খুলে ফেলেন প্রযোজনা সংস্থা। ভাবেন সব অভিশাপ কেটে গেছে। কিন্তু ১৯৬৮-৬৯ সাল থেকে রাজেন্দ্র কুমারের ছবিগুলি ব্যর্থ হতে শুরু করে। প্রোডাকশন হাউস উঠে যায় তাঁর।
সাতের দশকে রাজেশ খান্না যখন ইন্ডাস্ট্রিতে নামকরা হিরো হন, তখন তিনি জানতে পারেন রাজেন্দ্র কুমার তাঁর বাংলো বিক্রি করতে চান। রাজেশ তাঁকে অনেক বোঝান, বাংলো না বিক্রি করতে কিন্তু রাজেন্দ্র কুমার অবশেষে রাজেশকে মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকায় বাংলোটি বিক্রি করেন। রাজেশ বাংলোটির নাম পরিবর্তন করে 'আশীর্বাদ' রাখেন। সেই সময় রাজেশ খান্না সবার থেকে বড় সুপারস্টার। তাঁর 'আশীর্বাদ' বাড়ি দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষের ঢল নেমে যেত। মুম্বইয়ের দ্রষ্টব্য স্থান হয়ে গিয়েছিল রাজেশ খান্নার 'আশীর্বাদ'। পরের পর হিট হতে থাকে তাঁর ছবি। হিটের নিরিখে তিনি মেগাস্টার হয়ে ওঠেন। ঠিক যেন রাজেন্দ্র কুমারের গল্প যেন। রাজেশ খান্নার স্ত্রী ডিম্পল কাপাডিয়া এই বাড়িতেই বেশ কিছুদিন ছিলেন। যে বাড়ির নামও আগে ডিম্পল ছিল। রাজেশ-ডিম্পলের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয় এই বাড়িতেই। অন্যদিকে ১৯৭৫ সালের পর থেকে রাজেশ খান্নার কাজ কমে যায়। তাঁর জায়গা নিয়ে নেন অমিতাভ বচ্চন।
জীবনে একাকীত্বের দিনগুলো রাজেশ খান্না এই বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন। নেশা আর একাকীত্ব ছিল তাঁর সঙ্গী। কোন ফ্যান লেটার বা মিডিয়ার আলো তাঁর কাছে আসত না। ভাবা যায় না এক সুপারস্টারের এমন প্রস্থান। 'আশীর্বাদ' বাংলোতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
২০১৪ সালে একজন শিল্পপতি ৯০ কোটি টাকায় বাংলোটি কিনেছিলেন। কিন্তু এই অভিশপ্ত বাংলোতে তিনি আর থাকেননি। শেষমেশ এই বাংলো ভেঙে ফেলা হয়। শেষ হয় তিন অভিনেতার স্মৃতিকথা। শেষ হয় অভিশপ্ত ঘটনার ইতিহাস।