Latest News

Browsing Category

গল্প

অদৃশ্য বশীকরণ

গৌর কারক বাস চলছে আপন গতিতে। মসৃণ রাস্তা। রাস্তায় খাল-ডোব নেই। থাকলেও বোঝা যায় না। লাক্সারি বাস। এ বাসে ঝাঁকুনি সেভাবে লাগে না। তবু আমার ঘুম আসছে না। বাসে আমার ঘুম হয় না। চাকরি করি। ডেলি প্যাসেঞ্জার। বাসে একঘণ্টা দশ-কুড়ি মিনিটের পথ। কয়েকজন…

মানুর ঝাবরাচাচা ও একটা দেশি মুরগির গল্প

নীহারুল ইসলাম যদিও এই গল্প ঝাবরাচাচাকে নিয়ে। কিংবা বলা ভাল এটা একান্তভাবে মানুর ঝাবরাচাচার গল্প। যার আসল নাম গিয়াসুদ্দিন সেখ। কিন্তু সেই নাম কবে কোথায় হারিয়ে গিয়ে কীভাবে শুধু ‘ঝাবরা’ নামটিই প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়, যারা তাকে জন্ম থেকে চেনে কেউ-ই…

ভারত ভালবাসা

ঋষি গৌতম মাধবকাকাকে আমরা কমবেশি এড়িয়ে চলি। তিনি হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত সব প্রশ্ন করে বসেন। যেমন জম্বুদীপ কেন নাম হল? ভারতবর্ষ নামটা কোথা থেকে এল? ব্রহ্মদেশ ভারত থেকে কত সালে বিচ্ছিন্ন হয়? এই সব। সব প্রশ্নের উত্তর আমাদের যে অজানা তা নয়, কিন্তু…

প্রাংশুপুরাণ

প্রতিভা সরকার '‘আঃ মাহা, বড় কষ্ট!’’ শয্যায় পাশ ফিরতে গিয়ে অর্ধস্ফুট স্বরে কাতরোক্তি করে ওঠে নবীন শ্রাবক ন্যায়াপুত্ত। তার শরীরের রক্তমুখী স্ফোটকগুলি বেদনায় বিষিয়ে ওঠে। অবচেতনে বোধহয় তার মনে ফিরে আসে তার স্নেহস্বরূপা মাতামহীর কথা, যার কাছে…

সহযাত্রী

সুন্দর মুখোপাধ্যায় আমার পাশে বসে এতক্ষণ ঝিমোচ্ছিল যে লোকটা, স্টেশন আসার আগে ধড়মড় করে উঠে বলল, “চলে এল?” আমি ব্যাগটা কাঁধে নিতে নিতে ঘাড় হেলালাম। লাস্ট লোকাল ফাঁকা, দরজার মুখে আগে থেকে যাবার দরকার নেই। বাইরে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মাঝে…

মন্থন

উজ্জ্বল রায় মাঝরাতে ওয়াক তোলার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ক্ষমার। তাকিয়ে দেখে মা পাশে নেই। মশারি তুলে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে, মা উঠোনে উবু হয়ে বসে নালির ধারে বমি করছে। বাথরুম অবধি যাওয়ার আর ওনার তর সয়নি...। দেখেই মাথায় রাগ চড়ে গেছিল ক্ষমার। ‘তখনই…

ঝাঁপ

গৌতম সাহা এইখানে জীবন অনেক সহজ। অনেক শান্ত। অনেক স্থির। সাদাকালো ছবির মতো। কোনও ধামাকা নেই। নেই কোনও মেগা ব্যাপার। জীবন খুব ঢিমে লয়ে চলে যাচ্ছে। তার শান্ত একটা গতি আছে। সেই গতি টের পাওয়া যায় না। জীবন বলতে যা বোঝায়, ঠিক সেইরকম বলা যায় না।…

মাটির গন্ধ

সায়ন্তনী বসু চৌধুরী হুস করে একটা সরু বাঁক ঘুরেই অফিসের রুপোলি ইনোভাটা গ্রামের রাস্তাটা ধরে ফেলল। মাঠের ধারের এবড়োখেবড়ো পথ। তার ওপর এখানে সেখানে জল আর কাদা জমে আছে। হবে নাই বা কেন? সকালে চড়া রোদ্দুর উঠলে সন্ধেরাতের দিকে রোজই তেড়ে বৃষ্টি।…

কোনও একজন

অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী কত বয়স হবে রাঙাপিসির? ষাট? নাকি পঁয়ষট্টি? দূর থেকে দেখা যাচ্ছে, রাঙাপিসি আসছে। তাকে এখনও দেখেনি। দেখলে চিনতে পারবে কিনা, সন্দেহ। সামনে একটা বাস এসে দাঁড়াল। ফাঁকা। হেমন্তর দুপুরে বাস বোধহয় ফাঁকাই যায়। যাক, এই বাসে সে উঠছে…

সভা-কাণ্ড

ঋতা বসু স্কুলে যাবার আগে লেখার টেবলে বসে অভ্যেসমতো কম্পিউটারের চাবি টেপাটেপি করছিল অমলকুমার। তার আসল নাম অজয়। অমল নামের প্রতি তার দুর্বলতা ছোটবেলা থেকেই। ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিল অমলকুমার। কী জানি কেন তার মনে হত ফার্স্ট হওয়ার সঙ্গে অমল নামের…

যন্ত্রমানব

বিশ্বদীপ চক্রবর্তী রূপালি আজকাল স্বপনের সঙ্গে হেঁটে তাল রাখতে পারে না। কেমন ঝমঝমিয়ে হাঁটে যেন লোকটা। মেল ট্রেনের পারা। নাকি এই দেশে এসে দুটো পাখা গজিয়েছে! অথচ আগে কেমন গঙ্গার ধার ধরে আঙুলে আঙুল ঠেকিয়ে হেঁটেছে। এমনও হয়েছে হাঁটতে হাঁটতে…

উড়ো পাখি

রাজা মুখোপাধ্যায় বিয়ের পর মাস-ছয়েক কাটতে না-কাটতেই অশান্তি শুরু হল সংসারে। সংসার বলতে শুধু আমি আর আমার বউ। কাজের সূত্রে বাইরে থাকা তাই অভিভাবকের তদারকি নেই আর কী। কিন্তু থ্রি বিএইচকে এই ফ্ল্যাটটিতে নতুন অশান্তি, আমার বউ নাকি আর পাখি দেখতে…

অলীকের পেছনে

দেবাশিস পাল বুড়োর চায়ের দোকানের বেঞ্চের এককোণে গুটিসুটি মেরে বসে চা খাচ্ছিল সহদেব। ওর কান ছিল এ-দিকে। পাড়ার চায়ের দোকান। সকালের খবরের কাগজটা একবার চোখ বুলিয়ে নেবার জন্য অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে এখানে। বুড়ো ভাল লোক। চা খাও বা না-খাও, ওর…

ভূমিকম্প

ঋভু চট্টোপাধ্যায় রজত ঠেকে যেতে টুকাই বলে ওঠে, ‘এই যে মাস্টার, তোর ছাত্রীর বাবার অবস্থা শুনেছিস?’ --‘কোন ছাত্রী?’ --‘আরে, ওই যার কথা তুই সবচেয়ে বেশি শোনাতিস, তিতলি না কী যেন নাম।’ --‘না তো, কেন, কী হয়েছে?’ --‘ওর বাবা তো ভয়ঙ্কর কাজ করে রেখে…

শাশ্বতী

দেবদাস কুণ্ডু শাশ্বতী মেডিক্যাল কলেজের সিস্টার। পাঁচবছর আগে রামপুরহাট সদর হাসপাতাল থেকে ট্রান্সফার হয়ে মেডিক্যাল হাসপাতালে পোস্টিং পেয়েছে। এখন গাইনি ওয়ার্ডে ডিউটি। মর্নিং ডিউটি থাকলে শাশ্বতী খুব ভোর-ভোর ওঠে। ঘরের বাসি কাজগুলো করে নিয়ে…

গাছ কথা

নির্মলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় নিশীথবাবু শান্তশিষ্ট নিরীহ মানুষ। কথা কম বলেন। কারও সাত-পাঁচে থাকেন না। অবশ্য অন্যভাবে বলা যায়, উনি সাত-পাঁচেই থাকেন। প্রোমোটার বারোতলার এই বিশাল বাড়িটার নাম রেখেছিল ‘চাঁদের হাসি’। এ তল্লাটে এত উঁচু বাড়ি একটাই।…

আখর

রাজা সিংহ দেওয়ালটার দিকে তাকিয়ে থমকে গেল সারি। পুরনো বাংলোর হলদে দেওয়াল বেয়ে নেমে এসেছে লোহার জলনিকাশি পাইপ। লোহার পাইপ রোদে-জলে জীর্ণ। সেই পাইপ বেয়ে মরচেরঙা জল বেরিয়ে ভিজে আছে দেওয়ালের বেশ কিছুটা। ম্যালের বড় রাস্তা ছেড়ে একটা রাস্তা উঠে…

দশতলায় সেদিন…

ছন্দক বন্দ্যোপাধ্যায় পথচলতি খেয়ালে নাকতলা থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম মেট্রো স্টেশনের পাশে পনেরোতলা আন্ডার-কন্সট্রাকশান বাড়িটায় পৌঁছতে সুতপার ঠিক আধঘণ্টা সময় লাগল, আগের ট্রেনটা মিস করল-– তা না হলে বড়জোর পনেরো-বিশ মিনিট লাগার কথা। বাড়িটা আপাতত…

মেহেরুন্নেসার ভারতবর্ষ

হামিরউদ্দিন মিদ্যা দিঘিটার একটা অন্য নাম থাকতেও পারত। এ-গাঁয়ের মানুষ আর কোনও নতুন নামকরণ করেনি। সেই কোনকাল আগে নাকি দামোদরের বান ধেয়ে এসেছিল, আর বানের পানি খুবলে নিয়েছিল নদীপাড়ের অনেক জমির মাটি। পরে পলির চর ফেলে ফেলে নদীটা অনেকদূর পিছিয়ে…

জল পড়ে পাতা নড়ে

মানস সরকার একবার পিছন ফিরে তাকালাম। মনে হল, কেউ ডাকল। সের’ম কাউকে চোখে পড়ল না। এগিয়ে গেলাম। হালকা রঙের আদ্দির পাঞ্জাবি পরে আছি। তাও শরীরে ঘামের প্রলেপটা বুঝতে পারছি। সকাল থেকেই মেঘলা ছাইরঙা আকাশ। বৃষ্টি আবার নামব-নামব করেও নামছে না। অথচ মন…

আমি, সে ও দর্শন

শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য কালকের দিনটা মনে আছে তো। কুড়িবছর কাটিয়ে দিলাম তোমার মত একটা অপোগণ্ডর সাথে। বলো, কী গিফট দেবে? ঈপ্সিতা আমার দিকে পাশ ফিরেছে ‘গিফট চাই-গিফট চাই’ চোখ নিয়ে । বই পড়া ছাড়ো, আগে বলো, কী দেবে? বইয়ের সিকিভাগ…

জীবনঠান্ডা

মৃত্তিকা মাইতি মাটির দাওয়ায় বসে ঘরের প্র‌তিটা কোনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল গৌরী। কড়ি-বরগাগুলো পোড়া কাঠের রং নিয়ে মাথার ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে। টালির চালে জায়গায় জায়গায় মাকড়শারা মশারি টাঙিয়ে ফেলেছে। কারও যত্নের হাত পৌঁছায়নি ওই অবধি। ঘাড় বেঁকিয়ে…

নীলুর জন্যে

রাজেশ কুমার সূর্য নিভতেই মানিকের মনে পড়েছিল, আজ ছেলেটার জন্মদিন। যেমন-তেমন নয়, ঠিক পাঁচবছর পূর্ণ করল নীলু, তার একমাত্র সন্তান। শেষ ট্রিপের প্যাসেঞ্জার নামিয়ে সে বড় রাস্তায় অটো সাইড করে। তারপর সোজা নেমে আসে পতিরামের হাটে। মাটির তৈরি ছোটছোট…

গুঁগা সরেনের জীবন

অমিত মাহাত ।। এক।। গুঁগা সরেনের ঝুপড়ির পিঁদাড় বরাবর এই পথটা সোজা চলে গেছে ঢাঙিকুসুম অব্দি। সেখান থেকে ডুংরিবন। ছাতি ফাটানো তেষ্টার শুরুয়াৎ। কিন্তু জল মেলা ভার। খিদে মেটানো তো দূর। চাষমাটি'ই এখানে দুর্লভ। খুব কাকভোরে –– যদিও কাক নামের…

রবে নীরবে

সুব্রত বসু সারাদিন নন-সিগন্যাল জোনে থাকার পর অফিসে ঢোকা মাত্রই মোবাইল ফোনের মেসেজ টিউনের শব্দ বলে দিচ্ছিল একের পর এক মেসেজ আসছে। চেয়ারে বসে এক নিশ্বাসে এক গ্লাস জল খেয়ে ফেললাম। টেবিলে একটা ফাইল পড়ে আছে বটে, তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। পরে…

একটি সম্বর্ধনা সভার বৃত্তান্ত

সত্যবান মিত্র ''… আমাদের এই ছোট্ট শহর অরূপনগরের প্রবীণতম মানুষ শতাব্দী–প্রাচীন শ্রী ভোলানাথ দাস ও তাঁর সুযোগ্য পত্নী দয়াময়ী দেবীকে বরণ করা হল। আপনারা যেরকম স্বতস্ফূর্ত এবং উচ্ছ্বসিত দীর্ঘ করতালি দিয়ে আপনাদের আনন্দ জ্ঞাপন করলেন সে জন্য…

ভোট পর্ব

অমিত ভট্টাচার্য চার রাস্তার মোড়। প্রথমে ডানদিকের রাস্তা বরাবর রিক্সাটা সোজা গিয়ে ফিরে এল। তারপর বাঁদিকের রাস্তা। কিছুক্ষণ পর ফের ব্যাক। সবশেষে মোড়ের মাথায় রতনের চায়ের দোকানের সোজাসুজি বিশের রিক্সা ঢুকছে দেখে রতনের ঠাওর হলো, কিছু একটা হয়েছে।…

চতুরাশ্রম

সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় এক রিটায়ার্ড অবিনাশ দত্তগুপ্ত পার্কে হাঁটছিলেন রুটিন মাফিক। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মনে হল ট্র্যাক থেকে বেরিয়ে পড়ছেন । থেবড়ে বসে পড়লেন ধুলোতে। মনোজবাবু পিছনে ছিলেন। লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে এলেন। অবিনাশকে দু’হাত লাগিয়ে…

অন্ধকারের জন্য

সুবীর মজুমদার রাত প্রায় পৌনে আটটা । বিপ্লব স্নান সেরে সবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছে। আজ অফিসে তার বড় ধকল গেল। লম্বা মিটিং, তারপর মিনিটস রেডি করে ওকে বেরতে হয়েছে। সোফায় বসা বিপ্লবের হাতে মৃদুলা মোবাইলটা দিয়ে বলল, অজয়দার ফোন। মৃদুলা রান্নায়…

পিছুটান

কাকলী দেবনাথ বিশাখার আজ শ্রাদ্ধ। দেশের দুই প্রান্ত থেকে দুই ছেলে আর সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে মেয়ে উড়ে এসেছে। মায়ের শ্রাদ্ধে কোনও রকম খামতি রাখতে চায় না ওরা। বিশাল বড় ল্যামিনেশন করা ছবিটা ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে। দামি সার্টিন কাপড়ের…

অপ্রাণীবাচক

রাজ্যশ্রী ঘোষ একটা শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়া দিয়ে গরমের সকালটা শুরু হয়েছিল। এমন সকালে ঘুম থেকে উঠেই যারা কলুর বলদের মত আবার একটা ব্যস্ত দিনের ঘানি ঘোরানোর তোড়জোড় করতে থাকে, তাদের চোখে সকালটার কোনও বৈশিষ্টই হয়তো তেমন করে ধরা পড়ে না। কারণ কোন…

ইন্দুপ্রভা

চিরঞ্জয় চক্রবর্তী 'ইন্দুপ্রভা' নামটা শুনে পথিকের পছন্দ হয়নি। এখনও এইরকম নাম কেউ দেয়? ভাবলেই অবাক লাগে। নামটা শুনলে মনে হয় সাদা থান পরে একজন সাদা চুলের বুড়ি সামনে এসে দাঁড়াবে। নামটা শোনার থেকে মনটা খচখচ করছে। ঘুমের মধ্যেও উঠে বসেছে। সন্দেহ…

মেঘার অপ্রাপ্তি ও প্রাপ্তি

দেবদাস কুণ্ডু  ফেব্রুয়ারি মাস। নরম আলোর মতো রোদ। শীত রয়েছে বাতাসে, ডিউটি ব্যাগ আর টিফিন নিয়ে হাসপাতাল। ডিউটি শেষ দুটোয়। নার্সিংরুমে ড্রেস চেঞ্জ করে পরে নিল চুড়িদার। বাইরে একটা শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে। জানলার সামনে দাঁড়াতে বুঝল কাঁচের…

ধূসর ছায়া

বিপুল দাস এক বাঁ পায়ের কড়ে আঙুলে ব্যান্ডেজ বেঁধে অফিসে এসেছে অসিত। ভয় পেয়েছিল, ভেবেছিল কোথাও আলটপকা গুঁতো লেগে গেলে যদি রক্ত পড়তে শুরু করে। বাসে কেউ পা মাড়িয়ে দিলেও সেটা হতে পারে। আবার অফিসেও হতে পারে। আর, রক্ত যদি গলগল করে বেরোতে শুরু করে,…

সহজপাচ্য      

                         ঋভু চট্টোপাধ্যায় বাইরের দরজায় দুপুর। শর্মিলা দিদিমণি সেই মাত্র কিচেনশেড থেকে এসে অফিসে বসল। তিনজনের স্কুলে একজন না এলে বাকি দুজনের ওপর চাপ পড়ে যায়। শর্মিলাদিই হেডদি, বাকি আছে করবী আর গিয়াস। অন্য দিন গিয়াস এই…

কথোপকথন

সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বিকেল এখন ফুরোনোর অপেক্ষায়। আকাশের আলো ক্রমশ কমছে। ঘরের পর্দাগুলো ভালো করে টেনে দিয়ে একটা মোমবাতি জ্বালান রমা। আঁচল দিয়ে ফটোফ্রেমের কাঁচ মুছে সোজা করে রাখেন ছবিটা। তবু স্পষ্ট হয়না অনিমেশের চাহনি। চশমা পরা চোখদুটির…

 মঙ্গলকাব্য

ঋতা বসু বালিগঞ্জ স্টেশনের কাছ থেকে একটা প্রাইভেট বাসের গুমোট খোলের মধ্যে অগুণতি তিরিক্ষি মেজাজের নারীপুরুষের মধ্যে লুটোপুটি খেতে খেতে শেয়ালদা স্টেশনে পৌঁছে নূপুর একটু দম নিল। সে একটা ফাঁকা জায়গা খুঁজছিল যেখানে দাঁড়িয়ে একটু দম নেওয়া যায়।…

সাঁওতাল পরিবার

শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য সাঁওতাল পরিবারের সামনে দাঁড়িয়ে পৌষালি চক্রবর্তী। মুনমুন বলল, এগুলো কী রে? রাক্ষস রাক্ষস দেখতে। — যাহ্‌, এটা ফেমাস স্কাল্পচার। স্যান্ঠাল ফ্যামিলি। রামকিঙ্কর বেজ বানিয়েছিল। — ফ্যামিলি! কী রকম ফ্যামিলি রে? কে দাঁড়িয়ে কে…

সিনেমার ভিতরে আমি  

মানস সরকার - কী ব্যাপার, আপনি এখনও বেরোননি? এই সপ্তাহে ওদের হল শো কিন্ত চারটে থেকে নয়, চারটে পনেরো থেকে। আপনার বোধহয় মনে নেই। নিজের বুশশার্টের বাঁ পকেটের উপর একবার হাত বুলিয়ে নিয়ে আমাকে কথাগুলো ছুড়ে দিলেন হল-ম্যানেজার। অল্প হেসে আমি ঘাড়…

মাঝি

হামিরউদ্দিন মিদ্যা পুব পাড়ে দাঁড়িয়ে গাছপালার ফাঁকফোকর দিয়ে যদি তাকাও, তাহলে দেখতে পাবে বাড়িটি। বাঁশঝাড়ের পেছনে খড়ের ছাউনি মাটির দু-চালা। বাড়ির সামনে একটি ঝাঁকড়া কুলগাছ। সরকাঠির বেড়া দেওয়া এক চিলতে উঠোন। ভেতরে কলতলা। হাওয়ার ঝাপটায় শুকনো…

গল্প: মোতিয়া

রাজ্যশ্রী ঘোষ সরু মেঠো পথটা বহু পুরনো। সে পথ ডাইনে বামুন পাড়া বাঁয়ে কৈবত্য পাড়া ফেলে একে একে ঘোষ পাড়া, বোস পাড়া, কুমোর পাড়া, বোষ্টম পাড়া হয়ে গ্রামের প্রান্তে মরা নদীটার কোলে এসে মিশেছে। নদীর অন্য পারে মাঝি পাড়া। এই নদী তার সরু সুতোর মত…

স্থানান্তর

সোমনাথ ঘোষাল আজানের শব্দটা যেন ভোরের কুয়াশায় মিশে গিয়ে, মইরুলের কানে খুব আলতো করে ফুঁ দিচ্ছে। মইরুল ঘুম থেকে ওঠে। মায়ের মুখটা আলোর সুর মেখে আছে। খুব ভাল লাগে। মনে মনে প্রণাম করে নেয়। মইরুলের কাছে, সেই আল্লা আর সেই দুর্গা। এখানে সব ঘরগুলো…

গল্প: উইমেন আর ফ্রম ভেনাস

সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়   ‘আমার স্ত্রী মানুষ নয়।’ বাইরে থেকে দেখলে লোকটাকে স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। সিঁথি কেটে, পাট করে আঁচড়ানো চুল, পরিপাটি পোশাক-আশাক। চোখের চাহনিতেও কোনো অসুস্থতার চিহ্ন নেই।  ভালো করে নজর করছি দেখে আবার বলল, ‘বিশ্বাস করুন,…

গল্প : জননী – শ্যামলী আচার্য

কম্বলগুলো সব পরপর সাজানোই থাকে। নীলা একটা একটা করে টেনে নামায়। কোনটা গোলাপি, ফুলছাপ, মেরুন, বাদামি। অনেক রকম রং। একটু স্যাতসেঁতে। বোঁটকা গন্ধ। বহুদিন ডাঁই করে রাখা। রোদে দিলে হত। এই ঘরটায় তেমন রোদ ঢোকে না। আলো ঢোকার রাস্তাও কম। একটা বড়সড়…

ভূমিকম্প পরিবার

সন্ধেবেলা মদ খেতে বসার পরে জীবনটা বদলে গেল। আমার একার জীবন নয়, দুনিয়াটাই বদলে গেল। সন্ধেবেলা যখন ফাঁকা মাঠে তিন বন্ধু বিয়ার খেতে বসেছিলাম, তখন একদম স্বাভাবিক চারিদিক। পাখিরা ফিরে যাচ্ছিল বাসায়। রাতপাখিরা অবশ্য তখনও বের হয়নি। তারা আরও একটু…

 চার পুরুষ

টানটান করে ভাঁজ করা নরম রুমালটা অপালার বন্ধ দু’চোখের ওপর আলতো করে রাখে অণু। তারপর আলগোছে তার দু'হাতের আট আঙুল অপালার চাপা দেওয়া চোখের ওপর রাখে। কপাল, চুল, সিঁথি ছুঁতে ছুঁতে মাথার ভেতরের চিন্তাগুলো বিলীন করে দেয়। ক্রমশ চিন্তাশূন্য হয়ে যায়…

আরশি

হলদে রোদ                      ঘড়িতে প্রায় সাড়ে এগারোটা। হেমন্তের শেষ। রোদ তাই দ্রুত সরছে পুবদিকের জানলা থেকে। আদ্যন্ত পড়ে খবরের কাগজটা গুছিয়ে ভাঁজ করে রাখছিলেন নালন্দা। আগে ছিল ‌না। তবে এখন জলখাবারের পর খুঁটিয়ে খবর পড়া অভ্যেস করে…

নবরাত্রি

ভরি দুনিয়া মে জি নেহি লগতা / জানে কিস চিজ কী কমি হ্যায় অভি… খুব গভীর থেকে উঠে আসছে থোকা থোকা যন্ত্রণা। এক প্রবল জলোচ্ছ্বাস যেন। ড্রইংরুমের চার দেওয়ালে সুরের মায়াজাল বুনে চলেছে গুলাম আলির ভরাট গলা। সাউন্ড সিস্টেমে লো টিউনে বাজছে গজল। দরদী…

সন্ধেবেলার গল্প

মঙ্গলা মুদির গল্প দেশের বাড়ি গেলাম এক বছর পর। মেজঠাকুমা যখন গেল শ্রাবণে মারা গেল, ঘাটে ওঠার দিন গেছিলাম। তারপর এই। একেবারে বাৎসরিক কাজে। দেশের বাড়ি আর আসা হয় না। চাকরি, সংসার নিয়ে একবারে নাজেহাল অবস্থা। হপ্তায় একটা দিন ছুটি। সেদিন আর কোথাও…

ঝুমকো

রাত ১২.১টা, ২১/৫/১৮.... আলো জ্বলে উঠলো স্ক্রিনে, প্রতিবছরের মতো এবারেও কয়েকটা বাক্য... "শুভ জন্মদিন ঝুমকো। ভালো থাকার চেষ্টা টা এইভাবেই করে যাস, আজকাল বড্ড আলাদা লাগে, সাজতে শিখেছিস বেশ, যা আগে কোনোকালে পারতি না, আমি দেখি আর অবাক…