অনন্ত রাধিকার বিবাহে মুকেশ আম্বানির সঙ্গে বিল গেটস।
শেষ আপডেট: 29th July 2024 20:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একুশ শতককে মোটামুটি বিলিওনেয়ারের যুগ বললেও খুব একটা অত্যুক্তি হয় না।
এক বিলিয়ন মানে একের পিঠে ক'টা শূন্য? চট করে, না গুনে অনেকেই বলতে পারবেন না। পোশাকি অর্থে, এক বিলিয়ন মানে একশো কোটি! 'ফোর্বস' দৈনিকের হিসেবে, এই মুহূর্তে আমেরিকায় মোট ৮১৩ জন বিলিওনেয়ার বা শতকোটিপতি আছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছে চিন। বিলিওনেয়ারের সংখ্যা ৪৭৩। তৃতীয় স্থানে? ভারত। ২০০ জন বিলিওনেয়ার রয়েছেন ভারতে।
ঠিক কত সম্পত্তি আছে তাঁদের? কিছুদিন আগে অবধি অনন্ত আম্বানি-রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের খবর আলো করে ছিল আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। এখনও স্পষ্ট হিসেব নেই, ঠিক কত খরচ হয়েছে। সারা পৃথিবীর তাবড় সেলিব্রিটিকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল অতিথি হিসেবে। হেন ধুমধাম নেই, যা করতে বাকি রেখেছেন আম্বানি পরিবার। সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের মত মধ্য আয়ের দেশে, যেখানে এখনও অনেক মানুষ নিয়মিত খেতে পান না, সেখানে এই রাজকীয় জাঁকজমক কি ভাল দেখায়?
অনেকের মতে, বিলিওনেয়ারের অস্তিত্বটাই কেমন দৃষ্টিকটু!
অর্থনীতিবিদরা তুলনা দেখান, যদি আমরা সারা পৃথিবীর একাশিজন সর্বোচ্চ ধনবান ব্যক্তিকে একটি বাসে তুলে দিই, তাঁদের মিলিত সম্পত্তি পৃথিবীর চার বিলিয়ন... অর্থাৎ চারশো কোটি মানুষের মোট সম্পত্তির সমান হবে!
অনন্ত-রাধিকার বিয়ের প্রেক্ষিতে অনেকেই তর্কে মেতেছিলেন, মুকেশ আম্বানির সম্পত্তি আছে, তাই তিনি খরচ করছেন। এখানে কার কী বলার থাকতে পারে? সবার উচিত মুকেশের মত পরিশ্রম করা। তাহলে তাঁরাও উন্নতি করতে পারবেন। কিন্তু অক্সফ্যামের ২০২৩ সালের একটি রিপোর্ট বলছে, 'প্রত্যেক বিলিওনেয়ার আসলে একটি নীতির ভ্রান্তি। যেখানে মানুষের সম্পত্তি ক্রমশ কমছে, দারিদ্র্য বাড়ছে এবং মাথা গোঁজার ঠাঁই জোগাড় করতেই খরচ বাড়ছে, সেখানে এইভাবে বিলিওনেয়ারদের সংখ্যা বেড়ে চলা মানে আমাদের মানতে হবে, আমরা এমন একটা আর্থিক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছি, যারা আসলে মানবকল্যাণের জন্য যথেষ্ট সক্রিয় নয়।'
পাল্টা অবশ্য অনেকেই বলছেন, বিলিওনেয়ারদের সংখ্যা বাড়া মানে তো আসলে সম্পদের সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের জোগান। মার্কিন অর্থনীতিবিদ মাইকেল স্ট্রেন যেমন বলছেন, আমাদের আরও অনেক বেশি বিলিওনেয়ারের দরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম নর্ডহস যেমন দেখিয়েছেন, প্রযুক্তিগত আবিষ্কার থেকে যে পরিমাণ আর্থিক বৃদ্ধি হয়, তার মাত্র ২ শতাংশ যায় আবিষ্কারকদের কাছে। বাকি সবটাই যায় সমাজের কল্যাণে। অধ্যাপক স্ট্রেনের মতে, বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট, জেফ বেজোস বা ইলন মাস্ক সকলেই এই গোত্রে পড়েন। যাদের আবিষ্কারের সুফল আজ পাচ্ছে গোটা দুনিয়া, এমনকি মহাকাশ গবেষণাও।
বস্তুত, এই দুনিয়াতে এমন শতকোটিপতি বিরল নন, যারা আয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টা দানধ্যান করেন। এই যেমন ধরা যাক, বিল গেটস ও ওয়ারেন বাফেট। পৃথিবীর দুই ডাকসাইটে বিলিওনেয়ার মিলে তৈরি করেছেন "দ্য গিভিং প্লেজ"। উদ্দেশ্য, জীবদ্দশায় নিজেদের অন্তত অর্ধেক সম্পত্তি বিশ্বের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য দান করা।
আরও একটা প্রশ্ন করা যায়। বিলিওনেয়ার হওয়ার প্রাথমিক শর্ত কী? শুধু কি কঠিন পরিশ্রম?
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আসলে কঠিন পরিশ্রম করলে ধনী হওয়া যায়। কিন্তু শতকোটিপতি, মহাধনবান হতে গেলে মানুষকে এমন কিছু দিতে হবে, যা তাদের প্রয়োজন বা যা তারা চায় এবং পেলে উপভোগ করে।
যেমন ধরা যাক, গুগল। এককালে গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিনের পেটেন্ট বেচতে এক মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল। সেও যদিও কম নয়। কিন্তু কোনও ক্রেতা পাওয়া যায়নি। আজ গুগলের বাজারদর আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি! স্রেফ প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিনের সম্পত্তিই মরোক্কোর মোট জিডিপির সমান। ১৩৫ বিলিয়ন।
ভারতের প্রথম মহিলা বিলিওনেয়ার কিরণ মজুমদার শ'। শুরু করেছিলেন বিয়ার তৈরি দিয়ে। পরে ঝোঁকেন ওষুধ তৈরির গবেষণায়। আজ তাঁর সংস্থা বায়োকন এশিয়ার সবচেয়ে বড় ইনসুলিনের উৎপাদক।
বিলিওনেয়ারদের সাফল্য আরও নানা ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। চিনের জ্যাক মা-র কথা ধরা যাক। আলিবাবা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। বিশ্ববিখ্যাত উদ্যোগপতি। কিন্তু বলা হয়, জ্যাক মায়ের সাফল্যের পিছনে দুটো বড় ফ্যাক্টর সমান্তরালভাবে কাজ করেছিল। এক, সেই সময় উল্কার বেগে উত্থান অনলাইন কেনাকাটার। দুই, চিনের আগ্রাসী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নীতি। দুইয়ে দুইয়ে চার করেই ইতিহাস গড়ে ফেলেন জ্যাক মা।
আবার কিছুক্ষেত্রে, বিলিওনেয়ারদের সবটাই নির্ভর করে ভাগ্যের ওপর। যেমন, বিল গেটস বা মার্ক জুকেরবার্গ। কোনওদিন ভাবতেই পারেননি, একদিন ইন্টারনেট দুনিয়ায় তাঁরা বিপ্লব তৈরি করবেন। ভাগ্যক্রমে বিল গেটস এমন স্কুলে পড়েছিলেন, সেই ষাটের দশকের আমেরিকায় যেখানে কম্পিউটারের ছায়া পড়েছিল। পপ তারকা রিহানা যেমন ভাগ্যক্রমে অডিশনে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। সুযোগ, চাহিদা, হিসেব... এমন অনেক কিছুর ওপরেই একশো কোটির ঘরে পৌঁছনো নির্ভর করে।