বাজারের চোখ এখন হরমুজ প্রণালীর দিকেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান পুরোপুরি প্রণালী বন্ধ না করে বেছে বেছে জাহাজ চলাচলে বাধা দিতে পারে। তাতে রফতানি বন্ধ না করেও বিশ্ববাজারে আতঙ্ক তৈরি করা সম্ভব।
প্রতীকী ছবি
শেষ আপডেট: 23 June 2025 03:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইরানের পরমাণু ঘাঁটিতে ইজরায়েলের মদতে আমেরিকার হামলার পর পশ্চিম এশিয়ায় ফের যুদ্ধ পরিস্থিতি। তার জেরেই সোমবার তীব্র ধস নামল এশিয়ার শেয়ার বাজারে। তেলের দাম ছুঁয়েছে গত পাঁচ মাসের সর্বোচ্চ সীমা। বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের চোখ এখন তেহরানের প্রতিক্রিয়ার দিকে।
ইরান বিশ্বের নবম বৃহত্তম তেল উৎপাদক দেশ। দিনে প্রায় ৩৩ লক্ষ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে তেহরান, যার অর্ধেক রফতানি হয়, বাকি যায় দেশের ঘরোয়া চাহিদা মেটাতে। ফলে, ইরান যদি আমেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার পথে যায়, তা হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা, ইরান যদি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সমুদ্রপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়। এই সংকীর্ণ জলপথ দিয়েই বিশ্ববাজারের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ তেল এবং এক-চতুর্থাংশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) আসে। অতীতে এই হুমকি ইরান দিলেও তা কার্যকর করেনি। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ইতিমধ্যেই ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার প্রস্তাবে সিলমোহর দিয়েছে বলে দাবি করেছে ইরানের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম।
এই পরিস্থিতির প্রতিফলিত হয়েছে বাজারে। ব্রেন্ট তেলের দাম ২.৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ব্যারেল প্রতি ৭৯.১২ ডলার, অন্যদিকে আমেরিকান ক্রুড অয়েল ২.৮ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ৭৫.৯৮ ডলারে।
বিশ্ববাজারে এই অস্থিরতার জেরে সোমবার এশিয়ার শেয়ার সূচকগুলি পড়েছে একের পর এক—
ইউরোপীয় বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব—
তবে আমেরিকার শেয়ার বাজার তুলনামূলকভাবে কিছুটা স্থিতিশীল।
বাজারের চোখ এখন হরমুজ প্রণালীর দিকেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান পুরোপুরি প্রণালী বন্ধ না করে বেছে বেছে জাহাজ চলাচলে বাধা দিতে পারে। তাতে রফতানি বন্ধ না করেও বিশ্ববাজারে আতঙ্ক তৈরি করা সম্ভব।
কমনওয়েলথ ব্যাঙ্ক অফ অস্ট্রেলিয়ার কমোডিটি বিশ্লেষক বিবেক ধর জানিয়েছেন, যদি ইরান আংশিকভাবে হরমুজ প্রণালীতে বাধা সৃষ্টি করে, তা হলে ব্রেন্ট তেলের দাম ব্যারেল প্রতি কমপক্ষে ১০০ ডলার ছুঁতে পারে।
এদিকে সোনার দাম সামান্য ০.১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩,৩৬৩ ডলার প্রতি আউন্সে। ডলারের দাম সামান্য বেড়েছে— ০.৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪৬.৪৮ ইয়েনে, ইউরোর দাম ০.৩ শতাংশ কমে ১.১৪৮১ ডলার। ডলার সূচক (Dollar Index) বেড়েছে ০.১৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, মার্কিন সরকারি বন্ড (Treasuries)-এ আশ্রয় নেওয়ার কোনও প্রবণতা এখনও চোখে পড়েনি। ১০ বছরের বন্ডের সুদ বেড়েছে ২ বেসিস পয়েন্টে, পৌঁছেছে ৪.৩৯৭ শতাংশে।
ভবিষ্যতের পূর্বাভাস যদিও আরও অস্থির। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যদি সত্যিই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে, বা ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর সম্ভাবনা দেখা দেয়, তা হলে তেলের দাম ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। অতীতে এমন নজির রয়েছে বলেই সতর্ক করেছে জেপিমরগ্যান।
তেহরান যদি হামলার পথ থেকে সরে আসে, তবে হয়তো বাজার স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।