শেষ আপডেট: 5 March 2024 03:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আধুনিক অর্থনীতিতে ‘জেন্ডার গ্যাপ’ বা লিঙ্গ-দূরত্ব শব্দবন্ধটা খুবই পরিচিত। শুধু আমেরিকায় নয়, উন্নত বিশ্ব বা উন্নয়নশীল দেশ, সর্বত্রই শ্রমের বাজারে লিঙ্গ বৈষম্য বহুআলোচিত বিষয়। দেখা গেছে, প্রায় সব কাজেই পুরুষদের উপার্জন নারীদের তুলনায় প্রায় কুড়ি শতাংশ বেশি। নারী-পুরুষের এই ‘জেন্ডার গ্যাপ’ বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বড়রকম ক্ষতি করছে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তাদের পরামর্শ, কর্মক্ষেত্রে যদি এই বৈষম্য ঘুচে যায় তাহলে আর্থিক বৃদ্ধি একধাক্কায় ২০ শতাংশ ছাপিয়ে যাবে।
অর্থনীতিবিদরা ভাবতেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে শ্রমের চাহিদা বাড়বে, ফলে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অনুপাতও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। বরং এই দূরত্ব আরও বেড়েছে এবং তা বড় প্রভাব ফেলেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে।
চাকরির বাজারে মহিলাদের সংখ্যার অনুপাত নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে ইউনাইটেড নেশন গ্লোবাল কমপ্যাক্ট (ইউএনজিসি) ইন্ডিয়া। তাদের সমীক্ষা বলছে, ২০০৬ সালে দেশে মহিলা কর্মী ছিলেন ৩৪%। ২০২০ সালে তা নেমেছে ২৪.৮ শতাংশে। তাদেরও মত, কাজের বাজারে মহিলা কর্মীর সংখ্যা যত বাড়বে, ‘জেন্ডার গ্যাপ’ যত কমে আসবে ততই জিডিপি বাড়বে।
১৫৩টি দেশের মধ্যে চালানো ইউএনজিসির সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে একমাত্র ভারতেই রাজনৈতিক ক্ষেত্রের চেয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য বেশি। সমীক্ষা বলছে, উপযুক্ত পরিকাঠামো না-থাকা ও মহিলাদের সম্পর্কে একতরফা মনোভাবই উৎপাদন শিল্পের মতো ক্ষেত্রে মহিলাদের নিয়োগের সংখ্যা অত্যন্ত কম। এমনকী উচ্চপদেও ঠাঁই পাচ্ছেন তাঁরা। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা ফেরাতে তেমন কোনও সরকারি নীতিও তৈরি হয়নি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের রূপ এক-এক রকম। তাই আমেরিকার বা বিলেতের সরকারের যা ভূমিকা, তার সঙ্গে ভারতের বা পশ্চিমবঙ্গের মিল হয়তো হবে না। তবে মেয়েরা এখন দীর্ঘমেয়াদি ‘কেরিয়ার’-এর কথা মাথায় রেখে এগোয়। ফলে, তাদের শিক্ষার পিছনে বিনিয়োগ বেড়েছে। অন্য দিকে, গর্ভনিরোধক বড়ি সহজলভ্য হওয়ায় সন্তানধারণের সিদ্ধান্তের উপর মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। ফলে, চাকরির ক্ষেত্রে মেয়েদের উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাড়ছে। মহিলারা আগের তুলনায় অনেক বেশি নিজেদের সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি মাসে টাকা জমানো ও লগ্নির তথ্য পেতে নেট ঘাটেন ৪৭% মহিলা। এই সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে।