পঞ্চদীপের নিজস্ব 'হোটেল ফরচুন', হাওড়ায়।
শেষ আপডেট: 11th July 2024 18:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতা শহর জুড়ে একাধিক শপিং মল রয়েছে। কিন্তু ধরুন যদি, আপনার বাড়ি হয় মসলন্দপুরে? কী করবেন? ট্রেন ধরে কলকাতা আসবেন? আর কিন্তু ওসব ভাবার দিন শেষ। একেবারে খাস মসলন্দপুরেই গড়ে উঠছে পেল্লায় শপিং মল। সৌজন্যে, কলকাতার পঞ্চদীপ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। তাদের পথ চলা অবশ্য আজকের নয়। ১৯৮৭ সালে 'পঞ্চদীপ কনস্ট্রাকশন' নামে প্রথম কোম্পানি আইনে নথিবদ্ধ হয় সংস্থা। প্রতিষ্ঠাতা রামরতন চৌধুরী। সদর দফতর হাওড়ায়। পাশাপাশি পঞ্চদীপের শাখা দফতর রয়েছে জামশেদপুর, ভুবনেশ্বর ও পটনায়। শুধু শপিংমল নয়; জলাধার, সেচ ও নালা, ট্রাক টার্মিনাল, স্টেডিয়াম, হোটেল, রিসর্ট ইত্যাদি নানা নির্মাণকাজে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে চলেছে পঞ্চদীপ।
এতদিন ব্যবসার দুনিয়ায় শোনা যেত, দিল্লি-মুম্বইয়ের কোনও বড় সংস্থা এসে ডালপালা মেলল কলকাতায়। এবার কিন্তু উলটপুরাণ। খোদ কলকাতার সংস্থা পঞ্চদীপ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের বানানো ঝাঁ চকচকে শপিং মল তৈরি হয়েছে গুয়াহাটি, পাটনা, কোচি, অম্বিকাপুর এমনকি গ্যাংটকের এমজি মার্গেও।
পঞ্চদীপ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি সংস্থা। যেমন হাওড়া পুরসভা, ন্যাশনাল জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন, ভুবনেশ্বর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, ওড়িশা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনফ্রাকস্টার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে, কেএমডিএ, ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড, ওএনজিসি, ইন্ডিয়ান অয়েল, হিন্দুস্তান এরোনটিক্স, সিপিডব্লিউডি ইত্যাদি। হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম, লেক ল্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব, বেলিলিয়াস পার্ক, সালকিয়ার অরবিন্দ মল, ধুলাগড় ট্রাক টার্মিনাল, ডালমিয়া পার্ক স্টেডিয়াম, বাংলার বাইরে ছত্তিশগড়ের রায়পুরের ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্ক ইত্যাদি পঞ্চদীপের বানানো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প।
যা গরম পড়েছে, তাতে দার্জিলিং-কালিম্পং-এর পাশাপাশি বাঙালির এই মুহূর্তে অন্যতম আকর্ষক গন্তব্য হয়ে উঠেছে গ্যাংটক। মহাত্মা গান্ধী মার্গ বা গ্যাংটকের বিখ্যাত ম্যালে সান্ধ্যভ্রমণ এখন বাঙালির অতি প্রিয়। সেই এম জি মার্গেই প্রায় দেড় লক্ষ বর্গফুট জায়গা জুড়ে গড়ে উঠছে স্টার মল। এখনও উদ্বোধন হয়নি। তবে হলে কিন্তু গ্যাংটকের ঠাণ্ডায় হি হি করে কাঁপতে কাঁপতেই স্টারবাকসের ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিতে পারবেন। স্টারবাকসের পাশাপাশি থাকছে আফ্রা লাউঞ্জ, ডোমিনোজ, হেলিক্স, ম্যাক্স, রিলায়েন্স ট্রেন্ডস, বারবিকিউ নেশন, নাইকি, পুমা, কনপ্লেক্সের মত আকর্ষণীয় ব্র্যান্ড। থাকছে তিন পর্দার একটি ছোট মাল্টিপ্লেক্সও।
গুয়াহাটিতে পঞ্চদীপের সেন্ট্রাল মল আয়তনে দ্বিগুণেরও বেশি। প্রায় ৩.২ লক্ষ বর্গফুট জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা এই সেন্ট্রাল মল থাকছে গুয়াহাটির একেবারে কেনাকাটার পীঠস্থান গুয়াহাটি-শিলং রোডের ওপর, ক্রিশ্চিয়ান বস্তির কাছে। এখানে লিভাইস, স্পেন্সার, বেনেটন, জিয়োর্দানো, অ্যাডিডাস, পুমা, টার্টল, বাস্কিন রবিনসের মত কুলীন ব্র্যান্ডের পাশাপাশি থাকছে টাইম স্কোয়ার, ট্রেন্ডস, রিলায়ান্স ফুটওয়্যার, স্পাইকার, লেন্সকার্ট, বিবার মত আমজনতার নাগালের মধ্যে থাকা একাধিক নামী ব্র্যান্ড। সঙ্গে থাকছে 'সিনেপোলিস' মাল্টিপ্লেক্স, চারটি ছোটবড় প্রেক্ষাগৃহ।
আয়তনে সেন্ট্রালের চেয়ে ছোট হলেও পাটনার কেপি মল কিন্তু ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে। ২০১৯ সালে দরজা খুলেছে এই মলের। স্মার্ট বাজার, ফিয়েস্তার মত নামী বিপণি রয়েছে। আছে আইনক্স-পিভিআর ব্র্যান্ডের মাল্টিপ্লেক্স। এদিকে ঘরের কাছে, হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশনের ঠিক বিপরীতেই মাত্র বছর দুয়েক হল খুলে গিয়েছে প্ল্যাটিনা মল। ৯৬০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে তৈরি এই প্ল্যাটিনা মলে রয়েছে রিলায়ান্স ট্রেন্ডস। সঙ্গে পেটপুজোর জন্য একাধিক আকর্ষণীয় বিপণিতে ঢুকে পড়তে পারবেন আগ্রহীরা। রয়েছে কেএফসি, পিজ্জা হাট, টি-জংশন, বারবিকিউ নেশন।
কলকাতার একেবারে কেন্দ্রে পঞ্চদীপ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের নতুন সংযোজন শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে ভি১ মল। স্টেশনের কাছেই রাজাবাজারে ৩২০০০ বর্গ ফুট জায়গা জুড়ে তৈরি এই ভি১ মলে একাধিক আকর্ষক বিপণির ঢালাও ব্যবস্থা রয়েছে। বাজার কলকাতা, ফ্যাশন সিটি, খাদিম, বাটা, চন্দ্রাণী পার্লস, কুকমি, মহেন্দ্রলাল দত্তের ছাতা, লাক্স কোজি, সেনকো গোল্ড, পি সি চন্দ্র জুয়েলার্স--কী নেই সেখানে? গরমে আর শিয়ালদা বাজারে ঘোরার দিন শেষ। এবার একেবারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মলেই কেনাকাটা সেরে ট্রেনে উঠে পড়তে পারবেন। পাশাপাশি পেটে খানিক ছুঁচো ডন মারলে ঢুকে পড়তে পারেন কেএফসি অথবা হলদিরামে।
মসলন্দপুর ও কেরলের কোচি, দুই জায়গাতেই মলের কাজ চলছে। এখনও জানা যায়নি, কোন কোন ব্র্যান্ড থাকতে চলেছে সেখানে। এর্নাকুলামে ডন বস্কো কালচারাল সেন্টারের কাছেই গড়ে উঠছে এই ভি১ মল। ছত্তিশগড়ের অম্বিকাপুরেও নিউ বাস স্ট্যান্ডের উল্টোদিকে গড়ে উঠছে অপর ভি১ মল। এগুলোর নাম পরে হয়ত বদলাতেই পারে। কিন্তু সুখবরের সত্যিই আর বেশি দেরি নেই।