Date : 14th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
কোনও গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই! ২১ জুলাই বিজেপির 'উত্তরকন্যা অভিযান' প্রসঙ্গে মমতাবাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ, মঙ্গলে অনেক দিন পর একসঙ্গে মিছিলে হাঁটবেন মমতা-অভিষেকচন্দননগরের নামী স্কুলে ছাত্রকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক আটকমুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে সন্তুষ্ট নন চাকরিহারারা, আজকের মধ্যেই 'যোগ্য' তালিকা প্রকাশের দাবিSSC: নতুন নিয়োগ বিধি ঘিরে হাইকোর্টে টানাপড়েন, রায়দান স্থগিত রাখল ডিভিশন বেঞ্চবাইকে বেপরোয়া ধাক্কা মেরে ১০০ মিটার হিঁচড়ে নিয়ে গেল গাড়ি, ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু দুই যুবকেরনীতি আয়োগের রিপোর্টে উজ্জ্বল বাংলা, কমেছে বেকারত্ব, উন্নত হয়েছে জীবনমান: মুখ্যমন্ত্রীসন্ধে হলেই জিলিপি-সিঙাড়া? প্রিয় স্ন্যাক্স নিঃশব্দে ডেকে আনছে বিপদ, বলছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞসোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তন্ময়ের আপত্তিকর ছবি, বরানগর থানায় অভিযোগ দায়ের সিপিএম নেতার'অন্যায় বরদাস্ত নয়', ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থা ইস্যুতে সকলকে পথে নামার বার্তা মমতার
Book Review: 'Aami Kandi Saharay'

‘আমি কাঁদি সাহারায়’: এক অবহেলিত বঙ্গজ সুরসাধকের বর্ণময় স্মৃতি-আলেখ্য

শতবর্ষ পেরনো সংগীতশিল্পীর জীবন নিয়ে সংকলন গ্রন্থ তৈরি করাটা দুষ্কর। তার উপর যাঁকে নিয়ে কাজ, তিনি যদি অখিলবন্ধু ঘোষের মতো জীবদ্দশায় বঞ্চিত ও অবহেলিত সুরসাধক হন, তাহলে চ্যালেঞ্জটা আরও বেড়ে যায়।

‘আমি কাঁদি সাহারায়’: এক অবহেলিত বঙ্গজ সুরসাধকের বর্ণময় স্মৃতি-আলেখ্য

'আমি কাঁদি সাহারায়'

শেষ আপডেট: 26 June 2025 07:46

রূপক মিশ্র 

শতবর্ষ পেরনো সংগীতশিল্পীর জীবন নিয়ে সংকলন গ্রন্থ তৈরি করাটা দুষ্কর। তার উপর যাঁকে নিয়ে কাজ, তিনি যদি অখিলবন্ধু ঘোষের মতো জীবদ্দশায় বঞ্চিত ও অবহেলিত সুরসাধক হন, তাহলে চ্যালেঞ্জটা আরও বেড়ে যায়।

কিন্তু কী অদ্ভুত পরিশ্রম ও নিষ্ঠায় এক অর্থে অসাধ্য সাধন করেছেন সঞ্জয় সেনগুপ্ত ও শুভজিৎ সরকার! অখিলবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিকথা ও সাক্ষাৎকার সংগ্রহ—শিল্পীরই বিখ্যাত গানের কলি থেকে নেওয়া ‘আমি কাঁদি সাহারায়’ যার নাম—প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছর মে মাসে। প্রকাশক ‘মান্দাস’।

সাহিত্যিক, তিনি যতই অবহেলিত হোন না কেন, তাঁর জীবনালেখ্য রচনার কাজ তুলনায় সহজ। কারণ তাঁর লেখা ও তাঁকে নিয়ে নিয়ে লেখার কোনও না কোনও হদিশ মিলে যায়। কিন্তু সংগীত মৌখিক হলেও তার যে ‘ডকুমেন্টশন’ হওয়া প্রয়োজন, মুদ্রিত ভাঁড়ার থাকাটাও জরুরি, বাঙালি তাত্ত্বিক-বোদ্ধারা এটা নিয়ে খুব বেশি বিচলিত নন। না আগে, না এখন—কোনওদিনই বাংলার সংগীত ও বঙ্গজ সুরশিল্পীদের জীবন ও কর্ম নিয়ে ব্যাপক স্তরে ও গভীরভাবে কাজ হয়নি।

হয়তো সেই খেদ থেকেই মুখবন্ধে সম্পাদকদ্বয় লেখেন, ‘কিন্তু শিল্পী অখিলবন্ধু ঘোষ… তাঁর কাজের বিভিন্ন দিক এবং সর্বোপরি তাঁকে নিয়ে একক একটি গ্রন্থ-সংকলন ইতিপূর্বে কখনোই হয়নি, আগামীতেও আর হবে বলে মনে হয় না।’

জন্ম কলকাতার ভবানীপুরে। সংগীতের তালিম পান কালিদাস গুহ, নিরাপদ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। আধুনিক রাগাশ্রয়ী বাংলা গানের অন্যতম পুরোধা, টপ্পা-ঠুংরিতে অনায়াস দক্ষতা, সর্বোপরি ব্যক্তিত্বচিহ্নিত গায়কীর ধাঁচা প্রবর্তনে অখিলবন্ধু ঘোষের অবদান স্মরণীয়।

কিন্তু তাঁকে কতটা স্মরণ করেছে বাঙালি? কীভাবে মনে রেখেছে? অবদানের তুল্যমূল্য স্বীকৃতি পাননি, চিরকাল নিভৃতে রয়ে গেলেন, চূড়ান্ত অবহেলার শিকার হয়ে বিদায় নিলেন হাসপাতালের গাফিলতিতে! অখিলবন্ধু ঘোষের আস্ত জীবন বঞ্চনার নামান্তর।

স্রেফ এক কিংবদন্তি শিল্পীর প্রতি প্রণতি জানানো ছাড়া দুই সম্পাদকের কেউই এই গ্রন্থ পরিকল্পনায় কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যসাধন করতে চাননি। অথচ কী অদ্ভুতভাবে যাঁদের কথা, মতামত ও স্মৃতিচারণ সন্নিবিষ্ট হয়েছে, প্রত্যেকের লেখার মধ্যে এই অস্বীকৃতির শোকতাপ নিরাভরণ রূপে বেরিয়ে এসেছে।

কালানুক্রমিক না হলেও চেষ্টা করা হয়েছে অখিলবন্ধুর সমসাময়িক শিল্পীদের কথা গোড়ায় রাখার। প্রিয় সুরকার জগন্ময় মিত্রের স্মৃতিচারণ দিয়ে শুরু। যিনি অল্প কথায় অনুজ অখিলবন্ধুর মুন্সিয়ানার বিভিন্ন দিকে আলো ফেলেছেন। আবেগ নয়, জোর দিয়েছেন গায়কের গায়কির কারসাজি, মার্গ সংগীতে স্বচ্ছন্দ বিচরণে। লিখেছেন, ‘অখিলের ক্লাসিক্যাল গাবের তালিম ছিল বলেই ও যে কোনও গান গাইলে তাতে একটা মাস্টারি অর্থাৎ অনায়াস ওস্তাদির ছাপ থাকত।… গান হিসেবে, তৈরি গলার ফসল হিসেবে অখিলের কোনও তুলনা নেই।’

ঠুংরি গায়ক হিসেবে অখিলবন্ধুর প্রসিদ্ধি। কিন্তু তার আড়ালেও ধ্রুপদী সংগীতে নিয়ন্ত্রণ ও পরিশ্রমের ছাপ দেখেছেন জগন্ময়বাবু। বলেছেন, ‘প্রচুর রেওয়াজ না করলে গলার কাজ যেমন পরিষ্কার হয় না, গলার উপর কন্ট্রোলও আসে না।’

মাত্র কয়েক মাসের বড় কিংবদন্তি গায়ক ও সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মানুষ ও শিল্পী অখিলবন্ধুর প্রয়াণে লেখেন, ‘আজ সে চলে গেছে বলেই বলছি না, অখিলের মতো একজন প্রকৃত গুণী শিল্পীর আরও অনেক সম্মান পাওয়া উচিত ছিল।’ কেন পাননি স্বীকৃতি? হেমন্ত দ্বিধাগ্রস্ত। তাঁর কথায়, ‘জীবনে আত্মাভিমান অনেক সময় বড়ো মাপের ক্ষতি করে। অখিলের ক্ষেত্রেও হয়তো সেরকম কিছু ঘটে থাকতে পারে।’

দীপালি ঘোষ, শিল্পীর সহধর্মিণী, আটপৌরে স্মৃতিচারণে ‘মানুষ অখিলবন্ধু’র ঔদাসীন্য ও বিগতস্পৃহা তুলে ধরেছেন। আজীবন সব ভুলে সুরে মজে থেকেছেন যিনি, তিনিই খুনসুটিতে মেতে উঠতেন… ‘বিছানার পাশেই শোয়ানো থাকত তানপুরা, রসিকতা করে বলতেন ঐ হচ্ছে তোমার আসল সতীন।’

অনুজ জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শিষ্য দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। সকলেই চোখে দেখা-কানে শোনা অখিলবন্ধুর গায়কমূর্তি রচনা করেছেন। জলসায় বসে গান শোনার স্মৃতি, মুখোমুখি তালিম নেওয়ার অভিজ্ঞতা শ্রদ্ধা ও বিস্ময়ে প্রণত। শিল্পী সন্দীপ মুখোপাধ্যায় তাঁর লেখায় শুধুমাত্র অখিলবন্ধু নন, আটের দশকে বাংলার বিভিন্ন জেলায় আয়োজিত সংগীতসভা ও অনুষ্ঠানের স্মৃতিচিত্র এঁকেছেন। একইভাবে ব্যক্তিগত আবেগে অখিলবন্ধুর গান শোনার অভিজ্ঞতা মেলে ধরেছেন বিমোচন ভট্টাচার্য।

এই গ্রন্থের বড় সম্পদ শিল্পীর সাক্ষাৎকারের অনুলিখন। সাকুল্যে তিনটি কথোপকথন মুদ্রিত। বিন্যস্ত কর্মপঞ্জিতে অখিলবন্ধুর গাওয়া আধুনিক গান, ছায়াছবির গান ও শিল্পীর সুরে অন্য গায়কের গাওয়া গানের তালিকা সুরকার ও গীতিকার সমেত তালিকার আকারে দেওয়া। এই পঞ্জি যে কোনও গবেষকের কাছে সম্পদ। গ্রন্থশেষে ফোটো অ্যালবাম সংযোজন এই অমূল্য সংকলনের মর্যাদা অনেকখানি বাড়িয়েছে।

বই: ‘আমি কাঁদি সাহারায়’ 
সম্পাদক: সঞ্জয় সেনগুপ্ত, শুভজিৎ সরকার
প্রচ্ছদ: সন্তু দাস
প্রকাশক: মান্দাস
মূল্য: ৪০০ টাকা


ভিডিও স্টোরি