শেখ হাসিনা ও মহম্মদ ইউনুস।
শেষ আপডেট: 4 May 2025 15:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে (Bangladesh) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (parliament election) দিনক্ষণ ঘোষণার দাবিতে সরব দেশের অন্যতম দল বিএনপি (BNP)। আগামী মঙ্গলবার দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর ভোটের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনে নামার কথা। তার আগে নির্বাচন নিয়ে মুখ খুললেন দেশটির আর এক গুরুত্বপূর্ণ দল আওয়ামী লিগের সভাপতি শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ভার্চুয়াল ভাষণে আর এক সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেছেন, মহম্মদ ইউনুস (Md Ytunus) নির্বাচন না করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন। ভোট না করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে যুদ্ধ যুদ্ধ রব তুলছেন।
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনার নিন্দা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন হাসিনা ও ইউনুস। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় ২৬ পর্যটকের মৃত্যু ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন যুদ্ধ লাগার পরিস্থিতি তখন দেশের সেনা বাহিনীর উদ্দেশে ইউনুস বলেছেন, আমাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অনেকেই মনে করছেন, ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করলে ঢাকা ইসলামাবাদের পাশে থাকবে, আচমকা যুদ্ধ প্রস্তুতির কথা বলে এমন আভাসই দিতে চেয়েছেন ইউনুস। বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ কথা তথা বর্তমান ইউনুস সরকারের তৈরি একটি কমিশনের চেয়ারম্যান কয়েক কদম এগিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দখলের ডাক দিয়েছেন।
হাসিনা ভাষণে প্রশ্ন তুলেছেন, ইউনুস কেন যুদ্ধ প্রস্তুতির কথা বলছেন। কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান তিনি। আওয়ামী লিগ সভানেত্রীর কথায় কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনার আরও কড়া ভাষায় নিন্দা করা উচিত ছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। কারণ বাংলাদেশও এই সমস্যা থেকে মুক্ত নয়, মনে করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ফের ইউনুসকে জঙ্গি, খুনি, দুর্নীতিবাজ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন হাসিনা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে বহু আলোচিত মায়ানমার মানবিক করিডোর নিয়েও এই প্রথম মুখ খুলেছেন হাসিনা। প্রশ্ন তুলেছেন, মায়ানমারে সমুদ্র বন্দর থাকতে কেন সেখানে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? এরফলে বাংলাদেশের সার্বভোমত্ব ক্ষুন্ন হবে বলে মনে করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রসংঘ যুদ্ধবিধ্বস্ত মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে খাবার, ওষুধ ইত্যাদি লাগায়ো বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে পাঠাতে চায়। রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দাদের সিংহভাহ রোহিঙ্গা জনজাতি। যাদের প্রায় পনেরো লাখ মানুষ ২০১৬ থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সম্প্রতি রাখাইন প্রদেশ মায়ানমারের সেনা সরকারের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। প্রদেশটির দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি। বদলা নিয়ে দেশটির সেনা সরকার রাখাইন প্রদেশে খাদ্য, ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
রাষ্ট্রসংঘের আর্জি মেনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে রাখাইনে ত্রাণ পৌঁছানোর নীতিগত অনুমতি দিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত ঘিরে বিএনপি-সহ দেশের প্রায় সব দল সরকারের উপর রুষ্ট। কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের খবর, রাষ্ট্রসংঘকে দিয়ে বাংলাদেশে মানবিক করিডর তৈরির পিছনে আছে আমেরিকার হাত। তারা চিনকে মোকাবিলায় ভূ-রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে বাংলাদেশের ওই এলাকায় আধিপত্য স্থাপন করতে চাইছে। কূটনীতিকদের অনেকে মনে করেন, আমেরিকার আধিপত্য আগামী দিনে উপমহাদেশে ভারতের অবস্থানকে দুর্বল করে তুলতে পারে। এই সুযোগে ইউনুস সরকার আমেরিকাকে খুশি রাখতে মানবিক করিডর প্রদানে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তারা মনে করছেন, মার্কিন প্রস্তাবে সায় দিলে বাংলাদেশে ভোট নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চাপ দেবে না। হাসিনার অভিযোগ, ইউনুস যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছেন।