শেষ আপডেট: 3rd February 2025 22:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অভিযোগ নসাৎ করে দিল মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছে, ঐক্য পরিষদের দেওয়া নিহতের তালিকা ধরে পুলিশকে তদন্ত করতে বলা হয়েছিল। পুলিশ ২২ জনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে জানিয়েছে, একজনও সাম্প্রদায়িক হিংসার বলি হননি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ রিপোর্ট তুলে ধরেন। মহম্মদ ইউনুসের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টেও সরকারের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সাড়ে চার মাসে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এই দাবিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং উল্লিখিত ২৩টি হত্যাকাণ্ডের তালিকা সংগ্রহ করে। ওই তালিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ ও গৃহীত আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২৩টি ঘটনার ২২টির প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে পুলিশ অবগত হয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে একটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, যে ২২টি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে তারমধ্যে একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনও সম্পর্ক নেই। হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতটির সঙ্গে চুরি ও রাহাজানির সম্পর্ক রয়েছে। চারটিতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের ঘটনা জড়িত। তিনটি ক্ষেত্রে জেনারেল ক্রাইম যেমন ধর্ষণ, অতিরিক্ত মদপানে মৃত্যু এবং বিদ্রুপ মন্তব্য করা নিয়ে দুই পক্ষের মারামরি থেকে মৃত্যু হয়। দুইটি দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু। দুটি মৃত্যু ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে। একটিতে স্থানীয়দের সংঘাতে মৃত্যু। একটি জমিজমার বিরোধ সংক্রান্ত। একটি আত্মহত্যার ঘটনা এবং একটি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনও না জানা গেলেও এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সেখানে কোনও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।
প্রেস উইং দাবি করেছে, এই তালিকায় এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে মারা যান।
অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, এই প্রত্যেকটি ঘটনাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আইনি পদক্ষেপ ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। এই ২৩ ঘটনার দুটিতে যেখানে আত্মহত্যা ও জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে সেই দুটির বিষয়ে পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে। অপর ২১টি তদন্তাধীন মামলায় ইতোমধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ধৃতদের মধ্যে ১৭ জন নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কোনও ধরনের সংহিসতাকেই সমর্থন করে না। একই সঙ্গে এই ধরনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচারকে উদ্বেগজনক বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচরণা দেশের সার্বিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বিবেচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকল পক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানায়।