শেষ আপডেট: 9 May 2025 11:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আওয়ামী লিগকে (Awami League) নিষিদ্ধ করার দাবিতে ফের পথে নেমেছে ইউনুস বাহিনী (Yunus followers)। এই দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের ঢাকার সরকারি বাসভবন যমুনার অদূরে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে মানুষ জড়ো হতে শুরু হয়েছে। শুক্রবার জুম্মার নমাজের পর আওয়ামী লিগ ও তাদের সকল সহযোগী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে জমায়েত হবে। মহম্মদ ইউনুসের অনুগামী ছাত্র নেতা তথা জাতীয় নাগরিক পার্টির (National Citizen Party) সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ একটু আগে সমাবেশের মাঠে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠ ছাড়বেন না।
এদিকে, বাংলাদেশ সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল (Asif Nazrul, the law advisor of Bangladesh interim government) জানিয়েছে, আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করতে আইনি বাধা নেই। চলতি আইনেই সেটা করা সম্ভব। যদিও সরকারের উপদেষ্টাদের একাংশের মত হল যা হওয়ার আদালতে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সাবেক শাসক দলকে নিষিদ্ধ করার আগে শেখ হাসিনা-সহ আওয়ামী লিগ নেতাদের বিচার আগে শেষ করা দরকার।
প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস গত মাসে আল জাজিরা-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ইস্যুতে বলেন, আওয়ামী লিগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে কি না, এই সব বিষয়ে আইন এবং অন্যান্য দলগুলির অবস্থান বুঝে পদক্ষেপ করবে সরকার। নিষিদ্ধ ঘোষণার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি তিনি।
শেখ হাসিনার দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি নতুন নয়। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশের সবচেয়ে পুরনো তথা স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা হয়েছে বারে বারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের দশ মাসের মাথায় ফের হাসিনার দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবির পিছনে অন্য মতলব কাজ করছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে খাবার, ওষুধ ইত্যাদি পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে মানবিক করিডর (human corridor) চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে মহম্মদ ইউনুস সরকার। রাখাইন প্রদেশ মায়ানমারের সেনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। বিদ্রোহী সেনা আরাকান আর্মি প্রদেশটির দখল নেওয়া মাত্র সেনা সরকার সেখানে খাবার, ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মানবেতর অবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের। যাদের সিংহভাগ রোহিঙ্গা।
এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রসংঘ চাইছে লাগোয়া বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে সেখানে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে। কিন্তু বিএনপি, আওয়ামী লিগ-সহ বাংলাদেশের প্রথমসারির দলগুলি এই করিডর দেওয়ার বিরুদ্ধে। তারা মনে করছে, রাষ্ট্রসংঘের আড়ালে আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পূর্বপ্রান্তে আধিপত্যস্থাপন করতে চাইছে। আমেরিকার পরামর্শেই রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিয় গুতারেশ এপ্রিলের গোড়ায় বাংলাদেশ সফরে এসে মানবিক করিডরের প্রস্তাব পেশ করেন।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের যে এলাকাকে মানবিক করিডোর হিসাবে ব্যবহার করা হবে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তার অদূরেই রয়েছে বাংলাদেশের বহুচর্চিত সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, যেটি মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই দখল নিতে চাইছে। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, বাংলাদেশে চিনের খবরদারি আটকাতেই তারা এই পদক্ষেপ করছে। যদিও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আগামী দিনে ভারতের জন্যও বিপদের কারণ হতে পারে মার্কিন আধিপত্য। অন্তর্বর্তী সরকার দ্বীপটিতে পর্যটক যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানকার নিয়ন্ত্রণ এখন পুরোপুরি বাংলাদেশ সেনার হাতে।
আওয়ামী লিগ নেত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে দলের ফেসবুক-ভাষণে মানবিক করিডর দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি মার্কিন প্রশাসনের নাম মুখে না আনলেও তাঁর দল আমেরিকার খবরদারির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। আর এক সাবেক শাসক দল বিএনপি-ও মনে করছে, রাষ্ট্রসংঘকে মানবিক করিডর দিলে সেখানে প্রহরার কাজের সুযোগ নিয়ে মার্কিন বাহিনী ঢুকে পড়তে পারে। হাসিনা মায়ানমারের মানুষের দুর্দশার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, সেই দেশে ত্রাণ পাঠাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে কেন? মায়ানমারে অনেক বন্দর আছে। রাষ্ট্রসংঘ খাদ্যসামগ্রী পাঠাতে চাইলে বন্দরে পৌঁছে দিক।
রাষ্ট্রসংঘকে করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে বলে বাংলাদেশের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সপ্তাহ দুই আগে ঘোষণা করেন। এরপরই বিতর্ক সপ্তমে চড়ে। তারপর থেকে সরকারের সব মহল থেকে উল্টো কথা বলা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান দাবি করেছে, করিডর দেওয়া নিয়ে কোনও আলোচনা, সিদ্ধান্ত কিছুই হয়নি। যদিও সে দেশের চলমান রাজনীতিতে করিডর বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দলের সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষণে হাসিনা জোর গলায় করিডর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছেন এতে দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন হবে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, করিডর বিতর্ক চাপা দিতেই ইউনুসের অনুগামী ছাত্র তথা জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃত্ব পাল্টা চাপ তৈরি করছে সাবেক শাসক দলের উপর। আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তুলে ময়দানে নামতে চলেছে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হাসিনা দেশে আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাচুয়াল ভাষণের দিন ইউনুস বাহিনী ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছিল। হাসিনা অবশ্য তাতে দমে না গিয়ে ভাষণ চালু রেখেছেন।