শেষ আপডেট: 14th March 2025 17:09
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Dhaka University) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবু আহসান মহম্মদ সামসুল আরেফিন সিদ্দিক বৃহস্পতিবার বেশি রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের শিক্ষা জগতে অত্যন্ত পরিচিত এই শিক্ষক ভারত-সহ বহু দেশে গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা (Journalism and mass communication) শিক্ষার জগতে পরিচিত ছিলেন।
শুক্রবার জুম্মার নমাজের পর তাঁর দেহ ঢাকার আজিমপুর (Ajimpur, Dhaka) কবরস্থানে (graveyard) কবর দেওয়া হয়। তার আগে পরিবার ও পরিচিতজনের উপস্থিতিতে ঢাকার ধানমন্ডির ঈদগাহ মাঠে তাঁর জানাজা বা বিদায় প্রার্থনা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (vice chancellor) ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪ বছরের ইতিহাসে তিনিই দীর্ঘ সময় ওই পদে ছিলেন। কিন্তু শুক্রবার তাঁর জানাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ (mosque) প্রাঙ্গনে করতে দেওয়া হয়নি। এমনকী দেহ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন ঘটনার নজির নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে প্রচলিত ব্যবস্থা হল, কর্তব্যরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী কেউ মারা গেলে তাঁর জানাজা বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভিতরে অবস্থিত মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে। অধ্যাপক আরেফিনের ক্ষেত্রে সেই ঐতিহ্যে ছেঁদ পড়ল।
এই ঘটনায় প্রয়াত অধ্যাপকের সহকর্মী, ছাত্র, পরিচিতজন মুখর হয়েছেন। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুখ খুলেছেন। অধ্যাপক আরেফিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। দীর্ঘ সময় বিভাগীয় অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বহু বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন তিনি।
তাঁর ছাত্র, অনুগামীদের অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামি, তাদের ছাত্র শাখা ছাত্র শিবির এবং প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের অনুগামী ছাত্র নেতৃত্বের আপত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের জানাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গনে হতে দেয়নি। নামজাদা এই শিক্ষক ও সাবেক উপাচার্যের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা-সহ সরকারের কেউ শোক প্রকাশ করেননি।
ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান দাবি করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে তাঁর পরিবারের কথা মত ধানমন্ডির ইদগা ময়দানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি জানাজায় অংশ নেন। কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গনে দেহ নেওয়া হয়নি সে প্রসঙ্গ উপাচার্য এড়িয়ে গিয়েছেন। ‘বর্তমান পরিস্থিতি’-র বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যাও উপাচার্য দেননি। ছাত্র-শিক্ষকদের অনেকের দাবি, জামাত অনুগামী বলেই বর্তমান উপাচার্য সাবেক উপাচার্যের জানাজা বিশ্ববিদ্যালয়ে করাতে উদ্যোগ নেননি।
জনপ্রিয় এই প্রয়াত অধ্যাপককে নিয়ে জামাত ও ইউনুস অনুগামী ছাত্রদের আপত্তির কারণ আরেফিন সিদ্দিক বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ছিলেন। ভারত-বন্ধু (friend of India) হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। সাংগঠনিক কোনও পদে যুক্ত না থাকলেও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রির বিষয়ে আগ্রহী মানুষ ছিলেন তিনি। এছাড়া শেখ হাসিনার জমানায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (Bangladesh Sangbad Sangstha) (বাসস) ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ৬ মার্চ বিকালে ঢাকার অভিজাত ক্লাব বনানীতে (Banani club, Dhaka) তিনি ইফতারের সামগ্রী কিনতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর অবস্থার আর উন্নতি হয়নি। বুধবার থেকে কোমায় ছিলেন।