শেখ হাসিনা ও সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান।
শেষ আপডেট: 7th March 2025 08:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গত বছর জুলাই-অগাস্ট মাসে বাংলাদেশে (Bangladesh) শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলন ( anti quota movement) হিংসাশ্রয়ী হয়ে উঠলেও হাত গুটিয়ে ছিল সেনা বাহিনী (Bangladesh army)।
আন্দোলনকারীরা মেট্রোরেল, সেতু ভবন, টেলিভিশন ভবন, আবহাওয়া অফিসের মতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন দেওয়া, ভাঙচুর ইত্যাদি করলেও ময়দানে হাজির সেনা বাহিনী কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকী কার্ফু ভেঙে জনতা পথে উশৃংখলতায় মাতলেও হাত গুটিয়ে ছিল সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর এই নিষ্ক্রিয় অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়েছিল ৩ অগাস্ট সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের (army chief Waker Uz Zaman) বিবৃতিতে। তিনি বলেছিলেন, যে কোনও পরিস্থিতিতে সেনা বাহিনী জনগণের পাশে থাকবে।
সেনাবাহিনীর এইভাবে হাত গুটিয়ে থাকার কারণ নিয়ে বিস্তর জল্পনা হয়েছে। অভ্যুত্থানের সাত মাসের মাথায় সরকারিভাবে জানা গিয়েছে কেন নিষ্ক্রিয় ছিল ওয়াকার বাহিনী। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (UN human rights High commissioner) ফলকার তুর্ক Falkar Turk) বিবিসি-(BBC) কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীকে আগেই সতর্ক করেছিলাম যে তোমরা বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগ করলে রাষ্ট্রসংঘের শান্তি সেনা বাহিনীতে স্থান হবে না।
প্রসঙ্গত, গণ অভ্যত্থানের পর পরই দ্য ওয়াল-এ (The Wall) ভিডিও অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য লেখাপত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই তথাকথিত 'ভালোমানুষি'র কারণ হিসাবে শান্তি সেনার চাকরি হারানোর ভয় মুখ্য কারণ ছিল বলে জানানো হয়। এতদিনে ফলকার তুর্কও একই কথা জানিয়েছেন বিবিসি-কে।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে অশান্তি দমনে বিভিন্ন দেশের সেনা নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের শান্তি সেনা মিশন (peace keeping mission force) তৈরি করা হয়। সেই বাহিনীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিপুল সংখ্যায় আছে। শান্তি সেনাবাহিনীতে যোগদান খুবই লোভনীয় অ্যাসাইনমেন্ট। মোটা ্ বেতন ছাড়াও মেলে আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা।
সেই সুযোগ হাতছাড়া হলে সেনাতে বিদ্রোহের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর এই সুযোগটাই নিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক, বলছে আওয়ামী লিগ ( Awami League)। শেখ হাসিনার দলের অভিযোগ ফলকার তুর্ক বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের (Md Yunus) দীর্ঘদিনের বন্ধু। ইউনুসের পরামর্শেই তুর্ক সেনাবাহিনীকে হুঁশিয়ারি দেন রাষ্ট্রসংঘের শান্তি সেনা মিশন থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ার।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের (BBC World Service) হার্ডটক (Hard talk) অনুষ্ঠানে ফলকার তুর্কের সাক্ষাৎকার নেন প্রখ্যাত সাংবাদিক স্টিফেন সাকার।
তিনি ফলকার তুর্ককে গাজা (Gaza), সুদান (Sudan), ইউক্রেনসহ (Ukraine) বিভিন্ন দেশের অস্থির পরিস্থিতি বর্ণনা করে ফলকার তুর্ককে বলেন, ওই সব দেশের সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রসংঘকে ক্ষমতাহীন মনে হয়েছে।
জবাবে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেন ফলকার তুর্ক। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে গত বছর জুলাই–অগাস্টে ছাত্রদের ব্যাপক বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক নিপীড়ন চলছিল। ছাত্ররা রাষ্ট্রসংঘের মুখ চেয়ে ছিল।'
আমরা সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে বলেছিলাম তারা বলপ্রয়োগ করলে শান্তি সেনা মিশনে যোগদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলকার তুর্ক আনন্দের সঙ্গে বিবিসিকে বলেছেন, আমাদের হুঁশিয়ারিতে কাজ হয়েছে।
রাষ্টসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের এই বক্তব্য জানাজানি হতে বাংলাদেশ জুড়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। আওয়ামী লিগের সুরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন সেনাবাহিনীর কাছে কোনটা আগে? দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নাকি রাষ্ট্রসংঘের শান্তিসেনা মিশনের চাকরি?