শেষ আপডেট: 9th September 2024 13:39
অবাধ্য শিশুকে কিছুতেই খাওয়াতে না পেরে মা বলেছিল, ‘তুমি না খেলে সব ভাত তোমার ডাইনোসর খেয়ে নেবে।’ জবাবে শিশু বলে ‘পুতুল খেতে পারে নাকি! নাটক কম করো পিও!’ দুধের শিশুর মুখে কথাটি শুনে চমকে ওঠেন মা। টিভির আলোচনায়, ঘরে-বাইরে নানা জনের মুখে মুখে শুনে শিশুর মাথাতেও ঢুকে গেছে কথাটি। আর শিশুরা তো শুনে শুনেই শেখে।
এতো গেল শিশুর কথা। একই কথা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে সব বয়সির মুখে। কাজের মহিলা দেরি করে এসে বলতে থাকেন, ‘চাইর ধারে রাস্তা বন্ধ। আমু ক্যামনে!’ বৃদ্ধ গৃহকর্তা তাঁকে সহাস্যে বলেন, ‘নাটক কম করো পিও!’
ছাত্র-জনতার বিপ্লবের একমাসের মাথায় ঢাকা-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়েছে। খুলেছে স্কুল-কলেজ। ক্লাসে দেরি করে আসা পড়ুয়াকে শিক্ষক হাসিমুখে বলছেন, ‘নাটক কম করো পিও!’ সরকারি অফিস-কাছারিতেও তাই। সময় না আসা কর্মীকে ওই কথা বলেই স্বস্তি দিয়ে কাজে যোগদানের অনুমতি দিচ্ছেন অফিস বস। আবার ওই কথা শুনিয়ে ফিরিয়েও দিচ্ছেন বহু কর্তা।
মাছ-সবজির বাজারে দরাদরিতেও শোনা যাচ্ছে ওই এক কথা। ইলিশের কিলো বাইশো টাকা শুনে হাসিমুখে ক্রেতা বলছেন, ‘নাটক কম করো পিও!’ ক্রেতা ১৮০০ টাকা কেজি দাম দিয়ে চায় শুনে দোকানিও পাল্টা শোনান, ‘নাটক কম….।’
পরিস্থিতি এমন যে প্রাইমারি ক্লাসে শিক্ষকেরা ক্লাসে পড়ানোর ফাঁকে আলাদা করে বলে দিচ্ছেন, কথাটি কিন্তু পিও নয়, প্রিয়। পিও শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে একজনকে খাটো করার উদ্দেশে। প্রাইভেট টিউটরকেও একই কাজ করতে হচ্ছে।
বছর পঁয়ত্রিশের সিরাজুল মুনির নির্ঝর ফেসবুকে দেশবাসীকে ইংরিজি শেখান। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের ভাষা নিয়েও মজার অনুষ্ঠান করে থাকেন তিনি। বাংলাদেশবাসীর পরিচিত মুখ মুনির ফেসবুকের অনুষ্ঠানে জনে জনে প্রশ্ন করছেন, ‘নাটক কম করো পিও!’-র ইংরিজি কী হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নেতা-মন্ত্রীদের কঠিন কঠোর প্রশ্নের মুখে ফেলে সেলিব্রিটে বনে গিয়েছেন তরুণী দীপ্তি চৌধুরী। একাধিক নাটক ও সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন বিপ্লবকালীন জনপ্রিয় শো-এ সঞ্চালক হিসাবে সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য। একটি অনুষ্ঠানে সহবক্তার উদ্দেশে তিনিও বলেন, ‘নাটক কম করো পিও!’ দীপ্তির মুখে ওই কথার লাখ লাখ অডিও ক্লিংপ ছড়িয়ে পড়েছে সে দেশে।
সব মিলিয়ে বিপ্লব পরবর্তী অশান্ত বাংলাদেশে মজা, হাসির উপদান হয়ে উঠেছে ওই একটি লাইন। যে কথাটি লেখা হয়েছিল শেখ হাসিনাকে নিয়ে তৈরি একটি কার্টুনে। ওই সময় বাংলাদেশের খবরের কাগজ-সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কার্টুন ছাপার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল।
ছাত্র-জনতার হামলায় ঢাকায় মেট্রো রেল, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন ইত্যাদি ক্ষয়ক্ষতি দেখতে একদিন সদলবলে বেরিয়েছিলেন তখনও প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে থাকা শেখ হাসিনা। মেট্রোরেলের ধ্বসংলীলা দেখে তিনি চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তাঁর কান্নার ছবি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে দেশে, দেশের বাইরে। পুলিশের গুলিতে যখন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে তখন হাসিনার ওই কান্না নিয়ে প্রশ্ন তুলে ঢাকার একটি সংবাদপত্রে র্যাটস আসিফ নামের একজনের কার্টুন ছাপা হয়। তাতে হাসিনার ছবির সঙ্গে লেখা হয়েছিল, ‘নাটক কম করো পিও! সেই থেকে মুখে মুখে ঘুরছে ওই কথা।
সম্প্রতি বিপ্লবকালীন সময়ে প্রকাশিত কার্টুন নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল ঢাকায়। সেখানে মোবাইলে হাজার হাজার মানুষ ওই কার্টুনের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। ছবি শেয়ার করেছেন।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত কার্টিনিস্ট আহসান হাবীবের আঁকা একটি কার্টুনও সাড়া ফেলে তখন। ৩ অগাস্ট প্রকাশিত তাঁর একটি কার্টুনের বিষয় ছিল বালুঘড়ি। ঘড়ির উপরের অংশে তখন সামান্য বালি, প্রায় সবটাই নিচের পাত্রে জমা হয়েছে। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, বড় একটা পরিবর্তন আসতে চলেছে। যা মিলে যায় দু’দিন পর শেখ হাসিনার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে।