Date : 14th Jun, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
মহেশতলায় গন্ডগোল, সরানো হল রবীন্দ্রনগরের আইসিকে, পুলিশ বলছে রুটিন বদলিইরানের হামলার মুখে বাঙ্কারে আশ্রয় ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর, ত্রস্ত তেল আভিভ ঘাটালের মূল সমস্যা মেয়ে পালানো, বউ পালানো! কীভাবে রোখা যাবে- সচেতনতার 'পাঠ' নিলেন ওসিইজরায়েলি হামলা অব্যাহত, দেশে ফিরতে চান ইরানে পড়তে যাওয়া ভারতীয় ছাত্ররাউত্তরের রেলযাত্রীদের জন্য সুখবর! শনিবার পথচলা শুরু জলপাইগুড়ি-শিয়ালদহ হামসফর এক্সপ্রেসেরযুদ্ধ বলতে গেলে লেগেই গেল, বিস্ফোরণে জ্বলছে তেহরানের বিমানবন্দর, ইজরায়েলকে জবাব ইরানেরওমানে পরমাণু সংক্রান্ত বৈঠকের আগে ইজরায়েলের পাশে ট্রাম্প, ইরানকে কড়া বার্তানিউটাউনে পিয়ারলেসের নতুন প্রকল্প ‘ত্রয়ম’, এক ছাদের নীচে আবাসন, বাণিজ্যিক অফিস, শপিং সবকিছুপাকিস্তানের গুলিতে ভেঙে পড়েছিল গুজরাতের আর এক মুখ্যমন্ত্রীর বিমান, মৃত্যু হয়েছিল তাঁরও নতুন করে পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা! ইরানের প্রতিজ্ঞা, 'ইজরায়েলকে ঘুমোতে দেব না'
Bangladesh

বিশ্বশান্তির অগ্রদূত বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ কোন পথে

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সারাটা জীবন শান্তির পক্ষে কথা বলেছেন। শোষিত ও নিপীড়িত জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে দ্বিধাহীন চিত্তে নিজেকে সমর্পণ করেছেন।

বিশ্বশান্তির অগ্রদূত বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ কোন পথে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পদক পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে

শেষ আপডেট: 23 May 2025 00:06

এম নজরুল ইসলাম

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সারাটা জীবন শান্তির পক্ষে কথা বলেছেন। শোষিত ও নিপীড়িত জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে দ্বিধাহীন চিত্তে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেনশিয়াল কমিটির সভায় বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্বশান্তির সপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানের জন্য শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। পৃথিবীর ১৪০টি দেশের ২০০ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এই পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

স্বাধীন বাংলাদেশে কোনও রাষ্ট্রনেতার সেটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক পদক অর্জন। বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রদত্ত ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক ছিল জাতির পিতার বিশ্বমানবতার প্রতি কর্ম, ত্যাগ ও ভালোবাসার স্বীকৃতি। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর মৌলিক দর্শন ও অবদানের মূল্যায়ন। জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্যও ছিল প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক সম্মান প্রাপ্তি। এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু থেকে হয়েছেন বিশ্ববন্ধু।

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বিজ্ঞানী মেরি কুরি ও পিয়েরে কুরি দম্পতির অবদান স্মরণীয় করে রাখতে ‘জুলিও কুরি’ পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়। বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৫০ সাল থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে, মানবতার কল্যাণে, শান্তির সপক্ষে বিশেষ অবদানের জন্য স্মরণীয় ব্যক্তি ও সংগঠনকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে আসছে।

১৯৭৩ সালের ২৩ মে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের উত্তর প্লাজায় উন্মুক্ত চত্বরে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের বিশাল সমাবেশে বিশ্ব শান্তি পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি শান্তি পদক পরিয়ে দেন। সেই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে রমেশ চন্দ বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।’ 

বিশ্বের মুক্তিকামী, নিপীড়িত ও দুঃখী মানুষের প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু পদক প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেওয়া বক্তৃতায় বলেছিলেন, 'যে পটভূমিতে আপনারা, বিশ্বশান্তি আন্দোলনের সহকর্মী প্রতিনিধিরা আমাকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করেছেন, এই সম্মান কোনও ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়। এ সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্মদানকারী শহিদদের, স্বাধীনতাসংগ্রামের বীর সেনানীদের, ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক সমগ্র বাঙালি জাতির। এটা আমার দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের।'

আমরা একটু পেছনে ফিরে তাকাই। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ভাষণ জুড়ে তিনি বিশ্বশান্তির পক্ষে কথা বলেছেন। ভাষণের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমি জানি, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমাদের এই অঙ্গীকারের সাথে শহিদানের বিদেহী আত্মাও মিলিত হইবে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম হইতেছে সার্বিক অর্থে শান্তি এবং ন্যায়ের সংগ্রাম। আর সেই জন্য জন্মলগ্ন হইতেই বাংলাদেশ বিশ্বের নিপীড়িত জনতার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া আসিতেছে। ...বাংলাদেশ প্রথম হইতেই শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান ও সকলের প্রতি বন্ধুত্ব-এই নীতিমালার উপর ভিত্তি করিয়া জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করিয়াছে। কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশই কষ্টলব্ধ জাতীয় স্বাধীনতার ফল ভোগ করিতে আমাদেরকে সক্ষম করিয়া তুলিবে এবং সক্ষম করিয়া তুলিবে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, অশিক্ষা ও বেকারির বিরুদ্ধে লড়াই করিবার জন্য আমাদের সকল শক্তি ও সম্পদকে সমাবেশ ও কেন্দ্রীভূত করিতে। এই ধারণা হইতে জন্ম নিয়াছে শান্তির প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি। এই জন্য সমঝোতার অগ্রগতি, উত্তেজনা প্রশমন, অস্ত্র সীমিতকরণ এবং শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান নীতির সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা- বিশ্বের যে কোনও অংশে যে কোনও প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হউক না কেন, আমরা তাহাকে স্বাগত জানাই। এই নীতির প্রতি অবিচল থাকিয়া আমরা ভারত মহাসাগরীয় এলাকা সম্পর্কে শান্তি এলাকার ধারণা, যাহা এই পরিষদ অনুমোদন করিয়াছে, তাহাকে সমর্থন করি।...
...মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি অত্যন্ত জরুরি এবং তাহা সমগ্র বিশ্বের নরনারীর গভীর আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ঘটাইবে। এবং ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত শান্তিই দীর্ঘস্থায়ী হইতে পারে।'

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধু সবসময় শান্তির পক্ষে কথা বলেছেন, ধারণা দিয়েছেন। ৫ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলন। ওই সম্মেলনে ভাষণ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাজব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত- শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’

১৯৫২ সালের ২ থেকে ১২ অক্টোবর চিনের পিকিংয়ে এশিয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৩৭টি দেশ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে এ সম্মেলনে যোগ দেন। সেই স্মৃতি তাঁর লেখা বই ‘আমার দেখা নয়াচিন’- এই বইতেও প্রাসঙ্গিকভাবে আছে বিশ্বশান্তির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য। তিনি লিখেছেন, '...দুনিয়ায় আজ যারাই শান্তি চায় তাদের সম্মেলনে আমরা যোগদান করতে রাজি। রাশিয়া হউক, আমেরিকা হউক, ব্রিটেন হউক, চিন হউক যে-ই শান্তির জন্য সংগ্রাম করবে তাদের সাথে আমরা সহস্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে রাজি আছি, ‘আমরা শান্তি চাই।’ কারণ যুদ্ধে দুনিয়ার যে ক্ষতি হয় তা আমরা জানি ও উপলব্ধি করতে পারি; বিশেষ করে আমার দেশে-যে দেশকে পরের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। যে দেশের মানুষ না খেয়ে মরে, সামান্য দরকারি জিনিস জোগাড় করতে যাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, সে দেশে যুদ্ধে যে কতখানি ক্ষতি হয় তা ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের কথা মনে করলেই বুঝতে পারবেন, কোথায় ইংরেজ যুদ্ধ করছে, আর তার জন্য আমার দেশের ৪০ লাখ লোক শৃগাল-কুকুরের মতো না খেয়ে মরেছে। তবুও আপনারা বলবেন, আজ তো স্বাধীন হয়েছি। কথা সত্য, ‘পাকিস্তান’ নামটা পেয়েছি; আর কতটুকু স্বাধীন হয়েছি আপনারা নিজের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন। যাহা হউক, পাকিস্তান গরিব দেশ, যুদ্ধ চাইতে পারে না। যুদ্ধ হলে পাকিস্তানের জনগণের সকলের চেয়ে বেশি কষ্ট হবে এই জন্য। ...তাই মানুষের মঙ্গলের জন্য, পাকিস্তানের স্বার্থের জন্য ‌যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।'

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিজুর রহমান সেই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, যাঁর নামের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির আত্মপরিচয়। তিনি সেই মহান পুরুষ, যাঁকে নিয়ে বাঙালির অহঙ্কার কোনদিন ফুরোবে না। এমনই বিশাল ব্যক্তিত্ব তিনি, মৃত্যুর চার দশক পরও তাঁকে আবিষ্কার করতে হয় নতুন করে। বাঙালি গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করে তাঁর নাম। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাঙালি জাতিকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন অসম্ভবের পথ। 

আজ আমরা সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে কথা বলি। আমাদের পরিচয় সংকট থেকে রক্ষা করেছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্য নেতাদের চেয়ে পৃথক এ জন্যই যে তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন বাংলাদেশ নামের একটি জাতিরাষ্ট্র ও ভাষারাষ্ট্র। বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির শিকড় গভীরে প্রোথিত করে তিনি আমাদের হীনম্মন্যতা, জাতিসত্তার সংকট, ভাষার দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে রক্ষা করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে একটি পতাকা দিয়েছেন, একটি স্বাধীন ভূখণ্ড দিয়েছেন এবং বিশ্বসভায় বাঙালি জাতিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ আমাদের অস্তিত্বের অংশ। নিজের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই আমাদের বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগকে জানতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে তাঁর আদর্শ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তিপূর্ণ একটি দেশ, অঞ্চল এবং বিশ্ব দেখতে চেয়েছিলেন। এই শান্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশে ও দেশের বাইরে সবাইকে কাজ করতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধুর সেই মরুদ্যানকে আজ মরুভূমি করে তোলার চেষ্টা চলমান। এই প্রচেষ্টা রুখতেই হবে৷

লেখক: সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি, মানবাধিকারকর্মী, লেখক ও সাংবাদিক। মতামত ব্যক্তিগত।


ভিডিও স্টোরি