শেষ আপডেট: 9th November 2024 13:46
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে দু কোটির বেশি মানুষ খাদ্যহীনতার শিকার। তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পাচ্ছেন না বলে ইউএনডিপি-সহ রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলি তাদের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনাহার, অর্ধাহারকেই রাষ্ট্রসংঘ পরিচালিত সংস্থাগুলি খাদ্যহীনতা বলে উল্লেখ করে থাকে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা ও সিলেট বিভাগে পরিস্থিতি বাকি এলাকার থেকে বেশি খারাপ।
গত কুড়ি বছর ধরে রাষ্ট্রসংঘ খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে আসছে। সেই প্রকল্পে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দু-বছর আগে। সে দেশের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার ৪০টি বিভাগের উপর সমীক্ষা চালিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলেছে, ৩৩’টির পরিস্থিতি সংকটজনক। ওই সব এলাকায় বাজারে পর্যাপ্ত খাবার নেই। ফলে দামও মাত্রাছাড়া।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৭ কোটি মানুষের দেশে তিন কোটি ৩৯ লাখ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পাচ্ছেন। বাকিরা ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তাদের মধ্যে দু কোটি ১৬ লাখ মানুষ ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছেন। ১৬ লাখ মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে খাবার দেওয়া দরকার বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
৭ নভেম্বর প্রকাশিত রিপোর্টে এমন পরিস্থিতির জন্য একাধিক কারণ উল্লেখ করেছে সংস্থাগুলি। তাতে গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়েছে সরকারি সরবরাহ ব্যবস্থা। খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলাই-অগাস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে সরকারি খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা-সহ কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। সেই পরিস্থিতি বিগত তিন মাসেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার তিন মাস পূর্ণ করেছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার।
বাংলাদেশে খাদ্যবস্তু-সহ নিত্যপণ্যের দাম কয়েক বছর ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে। বিগত তিন মাস অধিকাংশ সবজির দাম একশো টাকার বেশি। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছ-মাংস-ডিমের দাম। চড়া তেল মশলার দাম।
অনাহার, অর্ধাহার পরিস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, চালের দামই গরিব মানুষের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠেছে। একবারে সস্তার চালের দামও কেজিতে দশ-বিশ টাকা বেড়ে গিয়েছে। ফলে নুন-ভাতেও টান পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের তরফে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়নি। পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ার পর চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে দেশের অর্থমন্ত্রক। ভারত থেকে ৯৯ হাজার টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে ডিসেম্বরের আগে ভারতের চাল পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
আর্থিক মন্দা এবং খাদ্যবস্তুর চড়া মূল্যের কারণে রাজধানী ঢাকার নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষও সংকটে পড়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার বড় শহরগুলিতে ন্যায়্যমূল্যের দোকান চালু করেছে। দেখা যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাতেও সরকারি ন্যায্যমূল্যের দোকানে ভিড় উপচে পড়ছে। অনেককেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে শেষে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।
রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে চলতি পরিস্থিতির জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অগাস্টে দেশের উত্তরপ্রান্তের জেলাগুলি ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। তাতে ধান এবং অন্যান্য ফসল ও শাক-সবজির উৎপাদন মার খেয়েছে। ফলে গ্রাম থেকে বহু মানুষ খাবারের সন্ধানে লাগোয়া শহরগুলিতে চলে এসেছে।
বুধবারই ইউএনডিপি (ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) তাদের রিপোর্টে মায়ানমারের কিছু প্রদেশে দুভিক্ষের সম্ভাবনার কথা জানায়। বলা হয়, মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ। মায়ানমারের এমন পরিস্থিতির কারণ অবশ্য ভিন্ন। গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশটির সামরিক শাসকেরা বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে হাতছাড়া হওয়া প্রদেশগুলিতে খাদ্য সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।