শেষ আপডেট: 18th March 2025 08:17
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের (Bangladesh) পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের (US intelligence Chief Tulsi Gabbard) প্রতিক্রিয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাল মহম্মদ ইউনুসের সরকার (MD Yunus)। সোমবার বেশি রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই ব্যাপারে লম্বা বিবৃতি দিয়েছে। ইউনুস সরকার বলেছে, বাংলাদেশ নিয়ে তুলসীর বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক (misleading)।
ভারত সফররত তুলসী সোমবার দিল্লিতে (New Delhi) এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের (minorities in Bangladesh) উপর নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে সরব হন। এছাড়া বাংলাদেশে ইসলামিক খিলাপৎ (Islamic caliphate) বা বা শাসন কায়েমের প্রচেষ্টা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সরব হন ইসলামিক মৌলবাদ (Islamic extremism) ও সন্ত্রাসী (terrorism) কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। বলেন, এই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (Donald Trump) অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই ব্যাপারে ট্রাম্পের পাশে আছেন।
তুলসীর ওই বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশে শোরগোল পড়ে। খুশি হয় ভারত সরকার। ভারত সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বলা হয়, তুলসীর বক্তব্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে নয়া দিল্লির অবস্থানকেই আরও শক্ত করল।
স্বভাবতই ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়ে ইউনুস সরকার। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বিবাদ এড়াতে প্রতিক্রিয়া এড়ানোর সিদ্ধান্ত হয় প্রাথমিকভাবে। কিন্তু বেঁকে বসে কট্টর ইসলামিক দলগুলি। জানা গিয়েছে, জামায়াতে ইসলামি-(Bangladesh Jamaat e Islami) সহ কট্ট্রর ইসলামিক দলগুলি ইউনুস সরকারের উপর প্রবল চাপ তৈরি করে। তারা দাবি করে সরকারকে অবিলম্বে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে হবে।
বাংলাদেশ সরকারের একাধিক সুত্র থেকে জানা গিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার (US sanction) ভয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তুলসীর বক্তব্য পাশ কাটানোর চেষ্টা হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ আটকাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশের উপর মার্কিন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারির সম্ভাবনা কোনও মহলই উড়িয়ে দিচ্ছে না। অন্যদিকে, একাধিক গোয়েন্দা সুত্র সরকারকে জানায় মার্কিন কর্তার বক্তব্যের প্রতিবাদ না করা হলে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি প্রতিবাদে দেশে নাশকতা শুরু করতে পারে।
পাশাপাশি জামাত নেতারাও সরকারের উপর প্রবল চাপ তৈরি করেন। আসলে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন জামাতপন্থী লোকজন। তারা প্রশাসনের ভিতর থেকেও চাপ তৈরি করে। চাপের মুখে বেশি রাতে সরকার প্রতিক্রিয়া দিতে সম্মত হয়। তবে দেশটির বিদেশ মন্ত্রক এর সঙ্গে জড়ায়নি। প্রতিক্রিয়া দেয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। এরপর আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন দিকে গড়ায় সেটাই দেখার।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সোমবার বেশি রাতের বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের বাংলাদেশ বিষয়ে বক্তব্য আমাদের নজরে এসেছে। তাঁর বক্তব্য গভীর উদ্বেগ ও হতাশাব্যাঞ্জক। তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন ও হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং তাদের বিশ্বব্যাপী তৎপরতা একই আদর্শ দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হল ইসলামপন্থী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা।
বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য, তুলসীর এই বক্তব্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তির উপর আঘাত। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চায় বিশ্বাসী। একই সঙ্গে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তিনি অন্যায় ও অতিরঞ্জিতভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
ইউনুস সরকারের দাবি, বাংলাদেশ ইসলামিক খিলাফতের ধারণাকে কখনও গ্রহণ করেনি। সকলের উচিত বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনও প্রচচিত ধারণার বসে মন্তব্য না করা। যদিও গত বছর ৫ অগাস্টের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করা এবং জঙ্গি তৎপরতা আটকাতে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে বিবৃতিকে উল্লেখ নেই।