শেষ আপডেট: 13th March 2025 10:42
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জাতিসংঘের মহাসচিব (United Nations secretary general) আন্তোনিও গুতেরেসের (Antonio Guterres) বাংলাদেশ (Bangladesh) সফরের মুখে তাঁর উদ্দেশে গুচ্ছ দাবি পেশ করল আওয়ামী লিগ (Awami League) । বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি ঢাকায় পৌঁছাবেন।
চারদিনের সফরে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস (Md Yunus) এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের (Tauhid Hossain) সঙ্গে বৈঠকের পর কক্সবাজারে (Cox Bazar) যাবেন গুতেরেস। সেখানে রোহিঙ্গা (Rohingya) জনজাতির ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করবেন তিনি। সন্ধ্যায় ত্রাণ শিবিরে বাংলাদেশ সরকার ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে। গুতেরেসের সম্মানে আয়োজিত এই ইফতার পার্টিতে (Iftar party) রোহিঙ্গা জনজাতির এক লাখ মানুষ অংশ নেবেন। তাদের সঙ্গে বসে গুতেরেস ও প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস ইফতার করবেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে চারদিনের জন্য ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (most important person) ঘোষণা করেছে।
তিনি বাংলাদেশের মাটিতে পা দেওয়ার আগে আওয়ামী লিগ এক বিবৃতিতে বলেছে, যাদের আশ্রয় দিয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগ সরকার। সেই সঙ্গে আওয়ামী লিগ সরকার গুতেরেসের প্রতি আর্জি জানিয়েছে, তিনি যেন চোখ-কান খোলা রেখে মহম্মদ ইউনুসের সময়ে চলমান আইনশৃঙ্খলার অবনতি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস (state terrorism), বাক্-স্বাধীনতা হরণের (violation of freedom of speech) মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করেন।
শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) দল গুতেরেসের উদ্দেশে আরও বলেছে, আপনি এমন সময় বাংলাদেশ সফর করছেন যখন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। বিশেষভাবে আক্রান্ত সংখ্যালঘু এবং নারীরা।
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবকে কেন এত খাতির যত্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনুস সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস একাধিকবার বলেছেন, গুতেরেস তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু। আমরা পরস্পরকে চিনি জানি। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকায় শুধু বন্ধুকৃত্য করতে ইউনুস রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবকে আপ্যায়নের এমন নজিরবিহীন আয়োজন করেনি। আসলে ঘরে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একদিকে, সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রাজপথে আছড়ে পড়ছে। অন্যদিকে, দমনপীড়ন বাড়ছে সরকারি বাহিনীগুলির।
পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লিগ। তারা বলেছে, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। অথচ, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে অবাধে আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মী, সংখ্যালঘু এবং নারীদের হত্যা, নির্যাতন করা হয়েছে।
আওয়ামী লিগ গুতেরেসকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, প্রায় আট বছর আগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগ সরকার মিয়ানমারে নির্মম নিপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল। রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আওয়ামী লিগ। তারা বলেছে, হিন্দু, খ্রিস্টান, চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলের আদিবাসী জনগণ, নারী ও শিশুস এবং আইনজীবী ও সাংবাদিকরাও সংকটের মধ্যে আছেন।
এই প্রসঙ্গে গতমাসে বাংলাদেশে জুলাই-অগাস্ট গণ আন্দোলন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের সমালোচনা করে মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে হাসিনার দল। তারা বলেছে, মানবাধিকার হাইকমিশনারের রিপোর্টটি একপেশে এবং অসম্পূর্ণ। আওয়ামী লিগ গোটা ঘটনার নতুন করে তদন্ত দাবি করেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা, গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিরাজ করতে পারে না।
হাসিনার দল বলেছে, রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের উচিত ইউনুস প্রশাসনকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি করতে বলা। গুতেরেসের উদ্দেশে আওয়ামী লিগ বলেছে, বাংলাদেশে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের একটি স্থায়ী অফিস গঠন করা হোক।