শেষ আপডেট: 16th October 2024 14:22
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দশ-বারো থেকে পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ বয়সি কেউ মারা গেলেই প্রচার হয়ে যাচ্ছে মৃত ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে উৎখাতে অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশের মার খেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসাধী অবস্থায় মারা গিয়েছে। ৫ অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশে কম বয়সিদের মৃত্যুকে হাতিয়ার করে এমন প্রচারে পাড়ায় পাড়ায় নতুন করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুন জ্বালানো হচ্ছে বলে নানা মহলের বক্তব্য। চট্টগ্রামে বছর বাইশের এক শিক্ষার্থী কাউসার মাহমুদের মৃত্যু ঘিরে তুমুল বিবাদ শুরু হয়েছে। জামায়াতি ইসলামি ও বিএনপি প্রচার করছে, হাসিনা বিরোধী অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার পুলিশের মারে আহত কাউসার ৭০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গিয়েছেন।
যদিও হাসপাতালের রেকর্ড বলছে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিল অসুখে ভুগছিলেন। ৫ অগাস্ট চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ইসলামি ব্যাঙ্ক হাসপাতালে তাঁকে ভর্তির সময়ে চিকিৎকেরা বাড়ির লোক ও রোগীর কথা শুনে চিকিৎসকেরা যে মেডিক্যাল রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন তাতে সাত-আটদিন ধরে ডায়রিয়া, মাস ছয় যাবত ওজন কমে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতার কথা লেখা হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে কিডনি অচল হওয়ায় রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ মাত্রা ছাড়া এবং ছেলেটি দীর্ঘদিন রক্তাল্পতায় ভুগছে।
গত রবিবার চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে কাউসার। শারীরিক অবস্থার অত্যাধিক অবনতি হলে তাঁকে ইসলামিক হাসপাতাল থেকে সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, ইসলামিক হাসপাতালের রেফারেল নোটে কাউসারের অসুখের বিবরণে নানা ধরনের আঘাত জনিত ব্যথার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ, ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা সাদমানকে চাপ দিয়ে বিএনপি ও জামাতের লোকেরা মেডিক্যাল রিপোর্ট বদলে নিয়ে কাউসারকে সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করে। ব্যথার কথা রিপোর্টে উল্লেখ করে প্রমাণের চেষ্টা হয় সে পুলিশি নিপীড়নের শিকার হয়েছিল।
মঙ্গলবার কাউসারের দেহ তাঁর গ্রামের মসজিদ লাগোয়া এলাকায় কবর দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে তাঁকে অভ্যুত্থানের শহিদ বলে প্রচার শুরু করেছে বিএনপি-জামাত শিবির। যদিও তাঁর গ্রাম এবং বিজিবি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা তা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, কাউসার মাঝেমধ্যে ফেসবুকে আন্দোলনের সমর্থনে পোস্ট দিয়েছেন। পুলিশের মার খাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
শুধু তাই নয়, হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে আহতদের যে তালিকা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেৃতত্ব তৈরি করেছে তাতেও কাউসারের নাম ছিল না। কমিটি আহতদের চিকিৎসা দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরাও যাকে তাকে শহিদের মর্যাদা দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
গত আড়াই মাসে একাধিকবার তাঁরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, এমন ঘটনাও তাদের কানে এসেছে, কোটা আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থানের সময় হাসপাতালে জটিল রোগে চিকিৎসাধীনের মৃতকেও গণ অভ্যুত্থানে শহিদ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এমনই একজন অসুস্থ তরুণের মৃত্যুর পর ফেসবুক পোস্ট দেখিয়ে দাবি করা হয় সে ছিল সোশ্যাল মিডিয়া যোদ্ধা। আন্দোলনকারীদের সে উৎসাহ জুগিয়েছে স্লোগান আর নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে। তদন্তে জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বহু মরণাপন্ন রোগীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আন্দোলনকারীরা নানা ধরনের পোস্ট দিত।
চট্টগ্রামে কাউসারের মৃত্যু ঘিরে জামাত-বিএনপির দাবি নিয়ে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এলাকায় যে কোনও সময় হামলার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় মানুষ। অভিযোগ আওয়ালী লিগকে আরও কোণঠাসা করতে জামায়াতি ইসলামি এবং বিএনপি পরিকল্পিতভাবে শহিদের তকমা বিলির কর্মসূচি নিয়েছে। যাতে ছাত্ররা আওয়ামী লিগের কর্মী-সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করার অভিযান চালিয়ে যায়।