শেষ আপডেট: 28th August 2024 11:28
বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুসের অম্তর্বর্তী সরকারের একটি পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সে দেশের সরকারি কর্মচারী এবং শিক্ষকদের একাংশের কপালে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি প্রাপকদের নাম-তালিকা দ্রুত তৈরির নির্দেশ দিয়েছে নতুন সরকার। ওই কোটায় যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের বলা হয়েছে নির্ধারিত বয়ানে বিস্তারিত তথ্য জানাতে।
এই ব্যাপারে প্রথমেই নিশানা করা হয়েছে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকদের। বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধি-দফতর বুধবার দুপুর ১২’টার মধ্যে দেশের সব স্কুলকে জানাতে বলেছে, বর্তমানে কর্মরতদের কতজন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছেন। শিক্ষা অধি-দফতরের যুগ্ম সচিব মহম্মদ লুৎফর রহমানের জারি করা বিজ্ঞপ্তি নিয়ে স্কুলগুলিতে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। সরকারি সূত্র জানানো হয়েছে, সব মন্ত্রককেই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি প্রাপকের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এমনিতেই হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লিগ সমর্থক, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের লোক এবং সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পদত্যাগ পত্রের নামে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করা হয় তাঁদের। কেউ কেউ সই করতে না চাওয়ায় জোর করে টিপ সই করানো হয়। তারপর অনেককেই ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী এবং স্কুল পরিচালক সমিতির লোকেরা। এমন নৈরাজ্যের শত শত ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছেয়ে আছে। প্রধান শিক্ষিকা, শিক্ষিকাদের মারধরের ঘটনাও সামনে এসেছে।
পদচ্যুতদের মধ্যে ২৪ জনের একটি নামের তালিকা সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সমাজমাধ্যমে দিয়েছেন। সেই তালিকায় নাম রয়েছে, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের যাঁদেরকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। তাঁদের বেশিরভাগই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাক্রমে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যক্ষ, উপাচার্য, সহকারী উপাচার্য প্রমুখ।
একই পরিণতি হয়েছে, আওয়ামী লিগ ও তাদের সহযোগী চার দলের সমর্থক এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের লোকজনের। নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের কথায়, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য পরিচয় দেওয়াটা এখন সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে মানুষ শেখ মুজিবুরের ছবি বাড়ি, অফিস, ক্লাব-সংগঠনের ঘর থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
এর পাশাপাশি হাসিনা জমানার বহু আমলা, পুলিশকর্তা, শিক্ষক, অধ্যাপককে চাকরি থেকে বসিয়ে দিয়েছে ইউনুস সরকার। প্রায় রোজই শত শত সরকারি কর্মী-অফিসারের চাকরি চলে যাচ্ছে। প্রশাসনিক নির্দেশে বলা হচ্ছে, জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক শেখ হাসিনা বিরোধী গণ অভ্যত্থানের গোড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা-সহ সরকারি চাকরির যাবতীয় কোটা বিলোপের দাবি জানিয়েছিল। সেই দাবি মেনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোট ৫৬ শতাংশ থেকে কোটার পরিমাণ সাত শতাংশ করে দিয়েছে। কোটা বিরোধীরা এরপর হাসিনাকে উৎখাতের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান নিয়েও প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছে আন্দোলনকারীদের। ওই কোটা ১৯৭৪ সালে চালু হলেও শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কোনও সরকারই চাকরি দেয়নি। হাসিনা সরকারের সময়েও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ ৩০ শতাংশ কোটা কার্যকর হয়নি। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেই এই সংক্রান্ত সরকারি তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, হাসিনা সরকারের সময়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি আওয়ামী লিগের নেতা-মন্ত্রীদের আত্মীয়-পরিজনেরা।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি প্রাপকদের নামের তালিকা তৈরির পিছনে সরকারের কোন কৌশল থাকতে পারে তা নিয়ে সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সরকার প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া কর্মচারীদের বসিয়ে বাধ্যতামূলক অবসর দিতে পারে। কারণ, বাংলাদেশে কোটা সংবিধানের অঙ্গ নয়। প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে কোটা বলবৎ করা হত। ফলে সরকার চাইলেই কোটা সংক্রান্ত আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে।