শেষ আপডেট: 25th March 2025 21:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটা পেরলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস (Independence day of Bangladesh)। দেশের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (former Prime Minister of Bangladesh Sheikh Hasina) দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া বার্তায় স্বাধীনতার ইতিহাস স্মরণ করেছেন। সেই সঙ্গে মহম্মদ ইউনুস সরকারের (Md Yunus government) তীব্র সমালোচনা করেছেন। হাসিনা বর্তমান সরকারকে ৭১-এর হায়না (hyenas) অর্থাৎ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার ও তাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, সুদীর্ঘ এক রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিক পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (Sheikh Mujibur Rahman) বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এদেশের দুর্মর সাহসী মানুষ, জীবন দিয়ে সশস্ত্র এক যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশকে বিজয়ী করেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে (Pakistan army) হটিয়ে। নিজস্ব ভূখণ্ডে সার্বভৌমত্ব তথা জনগণের মালিকানায় রাষ্ট্র অর্জনের জন্য বিশ্ব ইতিহাসে বহু বহু সংগ্রামের ইতিহাস আছে, বিপুল রক্তক্ষয়ের আখ্যান আছে। কিন্তু সবাই নিজস্ব জনগণের মালিকানায় স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হননি।হাসিনা বলেছেন, ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণ গত ৭৭ বছর ধরে সংগ্রাম করেও এখনও স্বাধীন হতে পারেননি। রক্ত সাগর পাড়ি দিয়েও বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তারা এখনও পায়নি। পৃথিবীর বুকে বাংলার মানুষের, বাঙালির একটি নিজস্ব রাষ্ট্র, বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার তাই এত গুরুত্ব।
তিনি বলেছেন, একটি কথা আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বাধীনতার চেতনা লালন করে তা বহমান রাখতে হয়। পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ডসহ অসংখ্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলার মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনা লালন করে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদাবান রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা সচেষ্ট ছিলাম। সচেষ্ট ছিলাম নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে।
কিন্তু ’৭১ এর পরাজিত শক্তি, ভিনদেশিদের যোগসাজশে বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। অসংখ্য তরুণকে ফাঁদে ফেলে, তাদের লাশ বানিয়ে, সেই লাশের সিঁড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আরোহন করে তারা আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিচ্ছে। স্বনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে পরনির্ভরশীল করতে চাইছে।নতুন প্রজন্মকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে বিপথগামী করে তুলছে। ৭১-এর হায়েনাদের মতো তারা মানুষের প্রাণের বিনিময়ে কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সোনার বাংলাদেশকে আজ এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেখানে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। মানুষের কাজ নেই। ঘরে খাবার নেই। আমাদের স্বপ্ন ছিল ২০৪১ সালে যখন আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হবে তখন সমস্ত পৃথিবীর মানুষ দেখবে বাংলাদেশের উন্নয়নের এক বিস্ময়কর চিত্র। কিন্তু এই স্বার্থপর লোভী চক্রান্তকারীর দল বাংলাদেশের অস্তিত্বে অবিশ্বাসীরা তাদেরই স্বীকারোক্তিতে বর্ণিত মেটিকুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে সবকিছু ধ্বংস করে চলেছে। বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চয়ই একদিন এর জবাব দেবে। সেদিন আর দূরে নয়। আমরা আবার এক সঙ্গে স্বাধীনতার জয়োল্লাস করবো। বাংলাদেশের মানুষকে সুন্দর ও স্বস্তির জীবন ফিরিয়ে দিতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সবকিছুর পরেও আমি বিশ্বাস করি, আমাদের নতুন প্রজন্ম সব ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করে স্বাধীনতার চেতনাকেই ধারণ করবে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যারা নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র অর্জন করেছিলেন, নতুন প্রজন্ম তাঁদেরই উত্তরাধিকার। তরুণ, প্রবীণ, শিশু-কিশোর সবাই মিলে সকল ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষের দেশ, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে আবার বিশ্বের বুকে মর্যাদাবান রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব।
আওয়ামী লিগ সভানেত্রী বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারীদের সাবধান করে বলতে চাই, যেভাবে বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করেছিলাম ১৯৭১ সালে, এবারও আমরা সম্মিলিতভাবে তাঁদেরকে পরাজিত করব। এবারের স্বাধীনতা দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।