পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেষ আপডেট: 25th June 2024 23:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গঙ্গা-তিস্তার জল বিতর্কে নয়ামাত্রা যোগ করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার ঢাকায় সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, দিল্লিতে থাকাকালে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জল চুক্তি নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মমতা দিল্লিতে ছিলেন না।
হাসিনার কথায়, ‘আমি নিজে ওঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু উনি দিল্লিতে ছিলেন না। থাকলে অবশ্যই কথা বলতাম। অন্তত আমি তো বলতাম।’
হাসিনার এই সাংবাদিক সম্মেলনটি ছিল পূর্ব নির্ধারিত। প্রতিবারই বিদেশ সফর থেকে ফিরে তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে থাকেন। সোমবারই যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা ও গঙ্গার জল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থে সরব হয়েছিলেন, তাই সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রসঙ্গে অনেক সাংবাদিকই প্রশ্ন করেন। একটি প্রশ্নের জবাবে হাসিনা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ প্রকাশ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লেখার বিষয়টি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই বিষয়ে আমার কিছু বলার থাকতে পারে না।
সোমবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে হাসিনার সফরে তিস্তা ও গঙ্গার জল নিয়ে দিল্লির আলোচনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন। বলেন, রাজ্য সরকারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে জল নিয়ে কথা হয়েছে। মমতা দিল্লির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, জল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের আপত্তি, প্রতিবাদ, ক্ষোভের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে লেখা চিঠিতে মমতা অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নন। ওই দেশের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা, সহমর্মিতার কোনও খামতি নেই। তিনি রাজ্যের মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। রাজ্য সরকারকে কিছু না জানিয়ে আলোচনা করা তাঁর ক্ষোভের অন্যতম কারণ।
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, হাসিনা মঙ্গলবার বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি অন্তত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশ কাটিয়ে কিছু করার পক্ষপাতী নন। তাই দিল্লি পৌঁছে তিনি যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন, সে কথাও ঢাকায় ফিরে প্রকাশ্যে জানিয়ে দিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একথাও বলেন, ‘আমার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দু’জনের সম্পর্কই ভাল।’ হাসিনা আরও বলেন, ভারতের অনেক নেতা ও দলের সঙ্গেই আমার সু-সম্পর্ক। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের গোড়ায় নরেন্দ্র মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে তিনি বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর খোঁজখবর নেন। আবার দিল্লিতে তাঁর হোটেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন সনিয়া গান্ধী। সঙ্গে ছিলেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা। মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে এলেও লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ভাল ফল করায় সনিয়াকে অভিনন্দন জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
হাসিনা বলেন, গঙ্গার জলচুক্তি নবীকরণ না হলেও সেটি কার্যকর থাকবে। দিল্লির আলোচনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেহেতু তিরিশ বছর মেয়াদী চুক্তি ২০২৬-এ শেষ হবে তাই একটি টেকনিক্যাল টিম করা হোক।
আগামী মাসে হাসিনা চিন সফরে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মধ্যে বহমান তিস্তা নদীকে নিয়ে সে দেশের সরকার একটি প্রকল্প গড়ে তুলেছে। তারমধ্যে নিয়মিত নদীর পলি উত্তোলন, বর্ষার জল ধরে রেখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচ ও পানীয় জলের জোগান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। হাসিনার দিল্লি সফরে ভারত সরকার ওই প্রকল্পে অর্থ ও কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। একই প্রকল্প নিয়ে আগ্রহী চিনও।
এই প্রসঙ্গে হাসিনা মঙ্গলবার ভারতের জন্য আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, চিন একটি প্রকল্প জমা দিয়েছে। ভারতও দিতে চেয়েছে। আমরা সবপক্ষেরটাই শুনব। যেটা বাংলাদেশের জন্য ভাল সেটা গ্রহণ করব। এরপরই তিস্তার জল নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনের প্রসঙ্গ টেনে হাসিনা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেহেতু ভারতের কাছে আমাদের তিস্তার পানির দাবিটা অনেক দিনের, সেক্ষেত্রে ওরা যদি আমাদের প্রকল্পটি করে দেয় তবে আমাদের সব সমস্যারই সামাধান হয়ে যায়। তাহলে সেটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে সহজ হল-আপনারা নিজেরাই বিবেচনা করে দেখেন।’