শেষ আপডেট: 12th August 2024 09:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ছাত্র আন্দোলন দমনে পুলিশের গুলিচালনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যু ঘিরে গর্জে ওঠা আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই আন্দোলন এতটাই বেগবান ছিল যে হাসিনা দেশ ছাড়ার পর গোটা বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয়ে যায় হত্যাযজ্ঞ, লুঠতরাজ, চুরি, ডাকাতি, আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, তাদের ধন-সম্পত্তি লুটপাট। ঘরে ঢুকে যাওয়া পুলিশ বাহিনী এখনও পুরোপুরি কাজে না ফেরায় নৈরাজ্যে ইতি পড়েনি।
এরই মধ্যে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের একটি খবর নিয়ে সব মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের সময় বারে বারে দাবি করা হয়েছিল, কয়েক শো ছাত্রকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে যার নজির নেই এবং গোটা পৃথিবীতেও তা বিরল।
পরিস্থিতি খানিক স্বাভাবিক হওয়ার পর ঢাকার পুলিশ সদর এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে চলমান হিংসায় নিহত মানুষের সংখ্যা ও তাদের পরিচয় জানা গিয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা প্রত্যাহারের আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত জুনে। তবে সেই পর্বে আন্দোলন ছিল অহিংস। আন্দোলন বেপরোয়া হয়ে ওঠে গত ১৬ জুলাই। ওই দিন থেকে পুলিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত শুরু হয় ছাত্রদের। সেই দিন থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৮০ জন।
পরিংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে ১৬ জুলাই থেকে ৩ অগাস্টের মধ্যে সংঘর্ষে ১২৭ জন নিহত হন। আন্দোলন আরও হিংস্র এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের সহিংসতা বাড়তে থাকে ৪ অগাস্ট থেকে। সরকারি হিসাব বলছে, শুধু ৪ অগাস্টই নিহত হন ১১১জন। ওই দিন পর্যন্ত দেশের দায়িত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা।
পরদিন ৫ অগাস্ট বেলা বারোটার আগেই তিনি দেশ ছাড়েন। ওইদিন দুপুরের পর থেকে গোটা দিনে নিহত হন ১০৮জন। পরদিন ৬ অগাস্ট প্রাণ যায় ১০৭জনের। আর ৭ থেকে গতকাল ১১ অগাস্ট পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৭ জন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, প্রতি দফা/দিনের সংঘর্ষেই বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি পুলিশ এবং বিরোধী দল আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীরাও নিহত হয়েছেন। ৫ অগাস্ট দুপুরের আগেই পুলিশ বাহিনী থাকা ফেলে গা ঢাকা দেয়। গোটা দেশ কার্যত পুলিশবিহীন হয়ে পড়ে। এখনও বেশিরভাগ পুলিশ কাজে যোগ দেয়নি।
সব মিলিয়ে চলমান অশান্তির শুরু থেকে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৮০জন। এরমধ্যে ৪ থেকে ৬ অগাস্টের মধ্যে মারা গিয়েছেন ৩২৬জন। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থী ২৩জন। ১২জন বিএনপি সমর্থক। অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছেন আওয়ামী লিগ সমর্থকেরা। ওই দলের ৮৭জন নিহত হন সংঘর্ষে। তাঁদের কারও কারও শরীরের পুলিশের বুলেট মিলেছে। অর্থাৎ সংষর্ষ থামাতে পুলিশ আওয়ামী লিগ সমর্থকদের উপরও গুলি চালিয়েছিল। নিহতদের বাকি ৩৬জন হলেন পুলিশ কর্মী। যদিও পুলিশ সদরের অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, নিহত পুলিশ কর্মীর প্রকৃত সংখ্যা ৪৪। নিহতদের অনেকেই হামলার শিকার হয়ে মারা যান ছুটিতে থাকার সময়। স্রেফ পুলিশ পরিচয় জানা মাত্র তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়।