বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনুস সরকারকে কড়া বার্তা দিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা
শেষ আপডেট: 28th January 2025 19:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনুস সরকারকে কড়া বার্তা দিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। বাংলাদেশ সরকারকে তারা অবিলম্বে গণ গ্রেফতারি বন্ধ করা এবং হিংসা ও প্রতিহিংলামূলক ঘটনায় রাশ টানতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গোটা বিশ্বে মানবাধিকার হরণের ঘটনার তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট সরকার কিংবা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানকে মান্যতা দিয়ে থাকে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। যারা আগামী মাসে গত বছর জুলাই-অগাস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার হরণের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে। সেই রিপোর্ট প্রকাশের মুখে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মানবাধিকার হরণের ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে।
জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ‘আফটার দ্য মনসুন রেভল্যুশন: আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টে বর্তমান সরকারকে গণ গ্রেফতারি বন্ধ করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে হামলা-মামলা লেগে আছে। গণহারে মামলা দায়ের, গ্রেফতারির বিরাম নেই। তার উপর আদালতে আসামিদের উপর হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে সে দেশে। আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীর পাশাপাশি গণ গ্রেফতারির শিকার হয়েছেন লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক প্রমুখ। খুনের মামলায় জেলে আটকে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা তথা সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, লেখক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক শাহরিয়ার কবীরের মতো মানুষকে। খুনের মামলা হওয়া আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা রানা দাশগুপ্তকে। প্রতিহিংসাজনতি কারণে এমন বিশিষ্টদের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে বলে নানা মহলের অভিযোগ।
সূত্রের খবর, গণঅভ্যুত্থানের পর হাজারের বেশি সাংবাদিককে চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা চাপ দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। ১৬৩জন সাংবাদিকের সরকারি পরিচয়পত্র বালিত করেছে সরকার। চাকরি খোয়ানো এবং সরকারের রোষের মুখে পড়া সাংবাদিকেরা বেশিরভাগই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, ৫ অগাস্টের পর এখনও পর্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে ২৯৬জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৬০০ মামলায় অন্যদের সঙ্গে সাংবাদিকদেরও নাম আছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮জন সাংবাদিককে। তাঁদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। মাসের পর মাস জেলে ফেলে রাখা হয়েছে। ঢাকার নামজাদা সাংবাদিক ফারজানা রুপা ও তাঁর স্বামী শাকিল আহমেদকে গণঅভ্যুত্থানের দিনই একাত্তর টিভি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
রুপাকে জেলের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা সমাজমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন। এই ব্যাপারে অবশ্য সরকারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর এক নামজাদা সাংবাদিক মুন্নি সাহাকে দিন কয়েক আগে প্রকাশ্য রাস্তায় ঘিরে ঘরে হেনস্থা করা হয়। তিনি কোনওরকমে প্রাণে বাঁচেন। মুন্নি সাহা ও তাঁর স্বামী কবীর হোসেন তাপসের ব্যাঙ্কের বিশদ নথি তলব করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা। মামলা হয়েছে চ্যানেল আই-এর সঞ্চালিকা সোমা ইসলামের নামেও।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে, ৯৬জন সাংবাদিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত বিশদ তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। ১৮জন সাংবাদিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ করে সেটাই এখন দেখার।