শেষ আপডেট: 19th January 2025 14:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অবশেষ খালেদা জিয়া ও তাঁর দল বিএনপির বিরুদ্ধে মুখ খুললেন শেখ হাসিনা। তাঁর কথায় জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার দেখানো পথে চলছে মহম্মদ ইউনুস। আওয়ামী লিগ নেত্রী তথা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বক্তব্য, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সাজা মকুব করে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। পরবর্তীকালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েও একইভাবে খুনিদের মন্ত্রী করেন, দেশে-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। এখন মহম্মদ ইউনুস দেশ বিরোধী অপরাধী এবং জঙ্গিদের জেল থেকে মুক্ত করে দিচ্ছেন’ হাসিনা বলেন, ‘ইউনুস বাংলাদেশকে জঙ্গিদের অভয়ারণ্য বানিয়েছেন।’
রবিবার দুপুরে দক্ষিণ কোরিয়া আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ভার্চুয়াল সভায় ভাষণ দেন হাসিনা। এক ঘণ্টার ভাষণে একাধিরবার বিএনপি এবং খালেদাকে নিশানা করেন তিনি। খালেদা এখন লন্ডনে চিকিৎসাধীন। হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লিগ একাই ২৩০টি আসন পেয়েছিল। সেখানে বিএনপি পেয়েছিল ৩০টি আসন। আর তখন থেকেই আওয়ামী লিগ সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়।
তাৎপর্যপূর্ণ হল হাসিনা এতদিন ভার্চুয়াল সভায় মূলত ইউনুসকে আক্রমণ করে গিয়েছেন। খালেদা জিয়া ও তাঁর দল সম্পর্কে একপ্রকার নীরব ছিলেন। যা থেকে আওয়ামী লিগের একাংশ এবং রাজনৈতির মহলের ধারণা হয়েছিল, নেত্রী দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বিএনপির প্রতি নরম মনোভাব নিয়েছেন। গত শতকের নয়ের দশকে এরশাদ সরকারকে হটাতে হাসিনা ও খালেদা একযোগে ময়দানে নেমেছিলেন।
কারও কারও মতে, বাংলাদেশের চলতি রাজনৈতিক বাস্তবতায় ফের বিএনপি ও আওয়ামী লিগের কাঠাকাছি আসা জরুরি। কিন্তু হাসিনা রবিবারের ভাষণে সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দেন। তিনি গ্রেনেড হামলা এবং চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ওই সব মামলার সাজাপ্রাপ্তদের ইউনুস সরকার ছেড়ে দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, গ্রেনেড হামলার ঘটনায় নিশানা করা হয়েছিল হাসিনাকেই। সেই ঘটনায় সাজাপ্রাপ্তরা ছিল বিএনপি-র সমর্থক। অস্ত্র মামলাতেই তাই।
ইউনুস সরকার গত সপ্তাহে একশোটির বেশি পণ্যের উপর চড়া হারে ভ্যাট অর্থাৎ কর বসিয়েছে। হাসিনা যখন দক্ষিঁণ কোরিয়ার কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন পুলিশ-প্রশাসনকে হতবাক করে দিয়ে কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকার রাস্তায় মিছিল করে আওয়ামী লিগ। হাসিনা ভাষণে ইউনুস সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলায় একটা কথা আছে, চোরের মায়ের বড় গলা। ইউনুস হল তেমন মানুষ। তিনি কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের উপর কর চাপাচ্ছেন। তাঁর কি কর চাপানোর নৈতিক অধিকার আছে?’
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে আওয়ামী লিগ নেত্রী বলেন, ‘জিনিসপত্রের এত দাম যে মানুষ বাজারে গিয়ে পকেটে হাত না গিয়ে মাথায় হাত দিচ্ছে।’ ইউনুসের পাঁচ মাসের জমানায় মুদ্রাস্ফিতি নজিরবিহীন এবং অসহনীয় দাবি করে হাসিনা বলেন, ‘আমার সময় কেমন ছিলেন দেশবাসীর সেটা তুলনা করে দেখা উচিত।’
ইউনুস সরকারের তৈরি সংবিধান সংশোধন কমিশন সম্প্রতি সংবিধানে আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। ১৯৭২ সালের তৈরি প্রথম সংবিধানের চার মূল নীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষা ও গণতন্ত্রের মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে অধ্যাপক আলি রিয়াজের নেতৃত্বাধীন কমিশন। হাসিনা এই প্রসঙ্গে ইউনুসের উদ্দেশে বলেন, ‘সাবধান, জনগণের তৈরি সংবিধান বদলের চেষ্টা করবেন না। আপনার সেই নৈতিক এবং আইনি অধিকার নেই।’