মার্কিন নাগরিকদের প্রতি সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের ঘটনাবলী একটি অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ছিল না। এটি ছিল একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফল—যা কর্পোরেট লোভ, বিদেশি হস্তক্ষেপ, এবং দুর্ভাগ্যবশত আপনার দেশের তথাকথিত ‘ডিপ স্টেট’-এর সহায়তায় সংঘটিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার
শেষ আপডেট: 14 May 2025 23:53
ভারতে আসছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajib Wajed Joy, son of Sheikh Hasina, the ex PM of Bangladesh)। সরকারি সুত্রের খবর, বুধবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক (ministry of external affairs) তাঁর ভিসার আবেদন অনুমোদন (approved Visa application) করেছে। চলতি মাসেই তিনি প্রথমে দিল্লি (Delhi) আসবেন। সেখান থেকে কলকাতায় (Kolkata) এসে আওয়ামী লিগ (Awami League) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। জয় আওয়ামী লিগের কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মায়ের পাশাপাশি তিনিও দলের হাল ধরবেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি হিসাবে বহু বছর দল পরিচালনা করছেন। অন্যদিকে, জয় একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। হাসিনা সরকারের তিনি তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। সেই সুত্র দেশে গেলেও সরাসরি দলীয় রাজনীতির বৃত্তে তাঁকে দেখা যায়নি।
জয় বর্তমানে আমেরিকার ভার্জিনিয়া শহরের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রী মার্কিন নাগরিক। তিনি রেসিডেন্ট পারমিট নিয়ে আমেরিকায় থাকতেন। গত বছর ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের দিন তিনিই আমেরিকা থেকে মা’কে ফোন করে দেশ ছাড়তে রাজি করান। হাসিনা কিছুতেই দেশ ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তিনি টুঙ্গিপাড়ায় যেতে ছিলেন। সেখানে তাঁর বাবা জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমানের সমাধি রয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর আপত্তিতে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশ সরকার পাসপোর্ট বাতিল করে দেওয়ায় সম্প্রতি জয় আমেরিকার নাগরিকত্ব নিতে বাধ্য হয়েছেন। এই সংক্রান্ত খবর দু’দিন আগে ‘দ্য ওয়াল’-এ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার পাশাপাশি তাঁর ছেলেমেয়েদেরও পাসপোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। ফলে জয়ের দেশে ফেরার রাস্তা বন্ধ। পাসপোর্ট না থাকায় দিল্লিতে মায়ের সঙ্গেও এতদিন দেখা করতে আসতে পারেননি। তবে নিয়মিত ফোনে কথা হয় তাঁদের। সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন জয়ের নাগরিকত্বের আবেদন মঞ্জুর করে। হাসিনার মেয়ে পুতুল আগে থেকেই দিল্লিতে আছেন। তিনি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অধিকর্তা। তাঁর অফিস দিল্লিতে।
ঘটনাচক্রে জয় এমন সময় মা এবং দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন যখন আওয়ামী লিগের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করেছে ইউনুস সরকার। এই পরিস্থিতিতে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আপাতত ঢাকায় জোরদার করা হবে দলের কর্মসূচি। বুধবার রাজধানীর বহু জায়গায় আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীরা মিটিং-মিছিল করেছেন। দল মনে করছে ঢাকার কর্মসূচি সফল হলে বাকি জেলাতেও প্রভাব পড়বে। দু’দিন আগে কলকাতায় আওয়ামী লিগের সব স্তরের নেতারা আলোচনায় বসে চলতি পরিস্থিতি মোকাবিলার রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করেন। দল এক দফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা হল ইউনুস সরকার বেআইনি। এই সরকারের সব সিদ্ধান্ত, নির্দেশও বেআইনি। নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার রাতে শেখ হাসিনাও দলের ভার্চুয়াল সভায় এই কথা স্পষ্ট করে দেন। বলেন, ইউনুস সরকারের কোনও নির্দেশ মানবে না আওয়ামী লিগ।
পাশাপাশি দল সিদ্ধান্ত করেছে, বিশ্বের নানাপ্রান্তে ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা হবে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করতে। ২৮টি দেশে আওয়ামী লিগের কমিটি আছে। প্রতিটি দেশের জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, কূটনীতিকদের সঙ্গে দল আলোচনা চালাবে। পাশাপাশি ঠিক হয়েছে দেশে আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে সংহতি কর্মসূচি পালন করা হবে।
বুধবার আমেরিকার জয় বাংলা পরিষদ এক বিবৃতিতে আওয়ামী লিগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছে। সংগঠনের পক্ষে প্রবাসী গবেষক এ এস এম শওকুয়াত হোসেন জানান, আমেরিকার মামুষের কাছে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরাই প্রচারের উদ্দেশ্য, যাতে তারা মার্কিন প্রশাসনের উপর চাপ তৈরি করে।
মার্কিন নাগরিকদের প্রতি সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের ঘটনাবলী একটি অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ছিল না। এটি ছিল একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফল—যা কর্পোরেট লোভ, বিদেশি হস্তক্ষেপ, এবং দুর্ভাগ্যবশত আপনার দেশের তথাকথিত ‘ডিপ স্টেট’-এর সহায়তায় সংঘটিত হয়েছে। এটি কোনও গণতান্ত্রিক আন্দোলন ছিল না। এটি কোনও জনবিপ্লব ছিল না। এটি ছিল সন্ত্রাস, সংগঠিত বিশৃঙ্খলা—যা ‘গণতন্ত্র’ ও ‘মানবাধিকারের’ ছদ্মবেশ নিয়েছিল। বাস্তবে লক্ষ্য ছিল একটি সার্বভৌম জাতিকে ধ্বংস করা।
আমরা যা দেখেছি তা ছিল নিছক নৃশংসতা। শত শত পুলিশ কর্মকর্তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। অনেকের শিরচ্ছেদ করা হয়েছে। ৫০০-র বেশি থানায় অগ্নিসংযোগ করে অস্ত্র লুট করা হয়েছে। মেট্রো রেল ও রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনসহ জাতীয় অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে থাকা পরিবারগুলির ব্যবসা লুটপাট ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আওয়ামী লিগের তৃণমূল কর্মীদের হত্যা বা গুম করা হয়েছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর সহিংসতা চালানো হয়েছে—খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতন। নারী ও শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। শিল্পী, লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও প্রগতিশীল চিন্তাবিদদের অপহরণ বা দমন করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জামিন না দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। নির্যাতন ও হেফাজতে হত্যার ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে। সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহাসিক স্থানসমূহ লুটপাট, ধ্বংস ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সিনিয়র আওয়ামী লিগ নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের ভুয়া মামলায় হয়রানি করা হয়েছে। স্বাধীন গণমাধ্যমকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে—সংবাদ অফিসে হামলা, সাংবাদিক গ্রেফতার, ও মিডিয়া দখল চলছে। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হল, দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল, স্বাধীনতার স্থপতি আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। দলকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশিকে তাদের মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই সমস্ত বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রে রয়েছেন একজন ব্যক্তি—মহম্মদ ইউনুস। যিনি একসময় পশ্চিমা বিশ্বে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, আজ তিনিই বাংলাদেশের ধ্বংসের প্রতীক একজন ভাড়াটে দেশদ্রোহী, যিনি জাতিকে ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের মূল কারিগর। সব শেষে মার্কিন জনতার উদ্দেশে আর্জি জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের পতন হতে দেবেন না। মানবতার পাশে দাঁড়ান। বাংলাদেশের পাশে থাকুন।