শেষ আপডেট: 13th September 2024 18:06
শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, তিনি পদত্যাগ করেননি। তাঁর কথায়, ‘আমি এখনও সাংবিধানিকভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী। আমি রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে সাংবিধানিক বিধান মেনে পতত্যাগ করি নাই।’
দলের মার্কিন প্রবাসী এক দলীয় নেতাকে ফোনে হাসিনা এই কথা বলেছেন। সেই ফোনের অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে সে দেশে। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম ফোনালাপের খবর প্রকাশ করেনি। কণ্ঠস্বর হাসিনার নয় বলে কেউই এখনও পর্যন্ত দাবি করেনি।
কথপোকথনে হাসিনা খানিক চ্যালেঞ্জের সুরে বলেছেন, ‘কেউ দেখাক আমার পদত্যাগ পত্র। আমি দেশ ছাড়ার পর একটা ছবি ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হয় আমি পদত্যাগ করেছি। ওটা একটা ভিজিটিং বুকে স্বাক্ষর করার ছবি। প্রধানমন্ত্রী কখনও ওইভাবে পদত্যাগ করেন না।’
তবে হাসিনা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ৬ অগাস্ট পদত্যাগ করবেন বলে সিদ্ধান্ত করেছিলেন। কারণ মানুষ মেরে ক্ষমতায় থাকতে চাননি।
হাসিনার মার্কিন প্রবাসী দু’জন আওয়ামী লিগ নেতার সঙ্গে ফোনে কথার অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে। একটিতে তাঁকে নিইইয়র্ক প্রবাসী নেতা বলেন, ‘আপা (বড়দি) বাংলাদেশে একটা অনলাইনে খবর দিসে আপনারে নাকি গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লি ট্রান্সফার করসে?’ হাসিনা খানিক বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চান, কোথায় ট্রান্সফার করসে? আওয়ামী লিগ নেতা বলেন, ‘অনলাইনে লিখসে আপনারে নাকি হেলিকপ্টারে গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লি ট্রান্সফার করসে।’ হাসিনা বলেন, ‘কোন দেশের হেলিকপ্টার!’ আওয়ামী লিগ নেত্রী এরপর দাবি করেন, ‘আমি ভাল আছি। দেশের কাছাকাছি আছি যাতে চট করে ঢুকে পড়তে পারি।’ প্রসঙ্গত, ৫ অগাস্ট বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিমান হাসিনাকে দিল্লির অদূরে গাজিয়াবাদে সেনা বিমানবন্দরে নামিয়ে দিয়ে যায়। তিনি ও তাঁর বোন শেখ রেহানা এখন ভারতের অতিথি।
আওয়ামী লিগের আর এক নেতা কান্না জড়ানো গলায় হাসিনার পরামর্শ চেয়ে বলেন, আমি নিউইয়র্কে বসে যা করার করছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে জানাচ্ছি দেশে কী চলছে। কিন্তু আপনি বললে দেশে গিয়ে কর্মীদের পাশে দাঁড়াব। আমি যা বলবেন, সেটাই করব।
হাসিনা তাঁকে বলেন, দেশে গিয়ে কী করবে? তোমার নামেও মিথ্যা মামলা দেবে। আমার বিরুদ্ধে একশোটার বেশি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সবই খুনের মামলা। এখন দেশে না গিয়ে রাষ্ট্রসংঘ, ইউরোপিও ইউনিয়নকে জানাও দেশে কী ঘটছে। যারা বলত আমার সময় মানবাধিকার বিপন্ন ছিল, তারা দেখুক এখন বাংলাদেশে কী চলছে। বিশ্ববাসীকে জানানো দরকার। হাসিনা আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে বলেন, ওখানে তো ভোটের প্রচার চলছে। ওখানকার দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখো। আমাদের (বাংলাদেশি) লোকেরা তো ওদেশে ভোট দেয়। তাদের জানাও, দেশে কী চলছে।
আর এক নেতাকে ফোনে হাসিনা বলেন, ইউনুসের সরকার বেআইনি। বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও বিধান নেই। তিনি আরও বলেন, ইউনুস দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তিনি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তৈরি করেননি। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তৈরি করেছিলেন জেনারেল এরশাদ। তিনি ইউনুসকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর করেছিলেন। ইউনুস গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ২৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
আর এক নেতাকে ফোনে দেশত্যাগী হাসিনা বলেছেন, একটা অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছিল। যে মানুষ খুন হয় তারা পুলিশের গুলিতে মরেনি। মুভমেন্টের ভিতরে কিলিং এজেন্ট ছিল। অ্যাডভাইসার সওকত সাহেব (হাসিনার সময়ের নিরাপত্তা উপদেষ্টা) আর্মির লোক। তিনি বলেছেন, এই বুলেট তো পুলিশের কাছে থাকে না। সেই বূলেট কারা ব্যবহার করল, কারা রাইফেল ব্যবহার করল তা নিয়ে কোনও তদন্ত নাই।
আরও বলেন, কত মানুষকে এভাবে মারল। পুলিশকে মারল। আওয়ামী লিগের অসংখ্য নেতাকর্মী, হিন্দুদের পরিবার... মেরে লাশগুম করা এবং মেয়েগুলিকে তুলে নিয়ে যাওয়া। ইডেন কলেজের একটা মেয়েকে মেরে ঝুলিয়ে রেখে বলল আত্মহত্যা করছে।
হাসিনা টেলিফোনে যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লিগ নেতাকে বলেছেন, বহু মানুষ যখন মারা গেল তখন আমি ঠিক করি, ৫ তারিখ (অগাস্ট) রাতে জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সরে যাওয়ার কথা বলব। ৬ তারিখ সকালে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র পেশ করব। কারণ মানুষের লাশের উপর আমি ক্ষমতায় থাকতে চাইনি। কিন্তু ছাত্ররা রাজধানী ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ৬ অগাস্ট থেকে একদিন এগিয়ে ৫ তারিখ করে।
নিজেকে এখনও বাংলাদেশের সাংবিধানিকভাবে বৈধ প্রধানমন্ত্রী দাবি করে হাসিনা বলেন, আমি তো সংবিধানের ৫৭ নম্বর অনুচ্ছেদ মেনে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে পদত্যাগ করিনি। হাসিনা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেই রাষ্ট্রপতি সেটি গ্রহণ করেন না। দেখা হয় সংসদে সর্বাধিক আসন দখলে থাকা দলের কেউ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দাবিদার কি না। হাসিনা বলেন, এসব কিছু তো হয়নি। বিশেষ পরিস্থিতিতে আমাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে।