কোটা ইস্যুতে উত্তাল হয়েছে বাংলাদেশ - প্রতীকী ছবি
শেষ আপডেট: 29 July 2024 11:57
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কোটা আন্দোলনের সময় বাংলাদেশে নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার সারা দেশে শোক দিবস পালন করবে সে দেশের সরকার। সরকারি উদ্যোগে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও বৌদ্ধ উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে পৌরোহিত্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব মাহবুর হোসেন জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য, সেমবার পর্যন্ত দেড়শো ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেই গুরুতর আহত। মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া, কার্ফুৃ কবে পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে সে ব্যাপারে মন্ত্রিসভা কিছু জানায়নি সোমবার।
আওয়ামী লিগ নেতৃত্বের বক্তব্য, নিহতদের মধ্যে দলের ছাত্র শাখা ছাত্র লিগের সমর্থকেরাও আছেন। সরকার কোনও ভেদাভেদ করছে না। আইনের চোখে নিহতদের অনেকেই হামলাকারী। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই ঘোষণা করেছেন নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের পাশে থাকবে সরকার। আহতদের চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে। যারা হাত-পা হারিয়েছেন তাদের কৃত্রিম অঙ্গের ব্যবস্থা করবে সরকার।
গত কয়েকদিন ধরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বাংলাদেশ। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তীব্র উত্তেজনার পরে অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ছাত্রছাত্রীদের দাবিও মেনে নিয়েছে সরকার। কিন্তু হিংসার ঘটনায় ইতিমধ্যেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের খবর। নানা দেশ থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ সরকারের কাছে শান্তি ফেরানোর আর্জি এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে রবিবার গোটা ঘটনা নিয়ে লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারের বিদেশমন্ত্রক। তাতে রবিবার অবধি সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ১৪৭ জানানো হয়েছিল। তারপর আরও তিনজন চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তি মারা যান।
বিবৃতিতে বলা হয়ে, 'সরকারের তরফে পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা হিংসায় প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের সম্পূর্ণ সুবিচার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের অবস্থা প্রধানমন্ত্রী নিজে সরেজমিনে খতিয়ে দেখছেন। মৃতদের পরিবারের জীবন-জীবিকার প্রতিও লক্ষ্য রাখা হবে। যাতে তাঁদের অন্তত কিছুটা আর্থিক সুরক্ষা দেওয়া যায়।
গোটা ঘটনার জন্য বিরোধী বিএনপি ও জামাতের ওপর দোষ চাপিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'কোটা-সংস্কার আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ জামাত-এ-ইসলামি এবং তাঁদের ছাত্রশাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের মদতে আন্দোলনকে সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাস ও অরাজকতায় বদলে দেওয়া হয়েছিল। কিছু হিংস্র উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মদতে ছাত্রদের আন্দোলনকে হাতিয়ার করে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার চক্রান্ত করেছিল। এখনও তারা ভুয়ো খবর ছড়িয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিকভাবেও তারা প্রচার করে চলেছে, যাতে আইনসম্মতভাবে নেওয়া পুলিশি পদক্ষেপকে 'ছাত্রদের ওপর নেমে আসা নিপীড়ন' বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। যেখানে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব জনসমক্ষে ঘোষণা করেছেন, তাঁদের সঙ্গে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কোনও সম্পর্ক নেই।' এই আবহে বিদেশমন্ত্রকের অনুরোধ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেন বিএনপি-জামাতের এইরকম বক্তব্যে প্রভাবিত না হয়।
কোটা-সংস্কার আন্দোলনেও শেখ হাসিনা আগাগোড়া ছাত্রসমাজের পাশে থাকতে চেয়েছেন বলে দাবি করেছে শেখ হাসিনার প্রশাসন। পাশাপাশি, নানা বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশ বিদেশমন্ত্রক। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'এও জানা যাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদী হামলার চক্রান্তকারীরা নিরাপত্তাবাহিনীর আধিকারিক ও শাসক দলের নেতাদের খুন করতে পুরস্কারের (বাউন্টি) ব্যবস্থা করেছিল। অত্যন্ত হিসেব কষেই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হামলা চালানো হয়েছিল। যার ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে ঢাকা মেট্রো, উড়ালপুল, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সদর দফতর, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দফতর। জাতীয় তথ্যকেন্দ্র ও ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ককেও বিকল করে দেওয়া হয়। টার্গেট করে করে উচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে হামলা চালানো হয়। যার ফলে অন্তত নয়জন উগ্রপন্থী জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।'
গোটা ঘটনার যথাযথ তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দেখা হবে। প্রত্যেকটি মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। ইতিমধ্যেই এর জন্য একজন হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে ঘটিত অনুসন্ধান কমিশন গঠন করা হয়েছে। সরকারের তরফে কোনও গাফিলতি ছিল কিনা, সেও খতিয়ে দেখা হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি এবার প্রতিবাদী ছাত্রদের ওপর দমনপীড়ন শুরু হবে?
বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, এর জন্য প্রতিবাদী ছাত্রদের কোনওরকম হেনস্থা করা হবে না। জানানো হয়েছে, 'প্রশাসনিক সংস্থাকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে হবে, কিন্তু নিরীহ সাধারণ মানুষ বা প্রতিবাদী ছাত্রদের কোনও রকম হেনস্থা করা চলবে না।'