শেষ আপডেট: 5th January 2025 20:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ৫ অগাস্ট গণ অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেডেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকে দিল্লিতে অবস্থান করছেন তিনি। রবিবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের চিঠির কোনও জবাব ভারত দেয়নি। মাস খানেক অপেক্ষা করার পর বাংলাদেশ সরকার ফের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আদালতে হাজির করার চেষ্টা করবে। চিঠি দেবে ভারত সরকারকে।
রবিবারই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লম্বা পোস্টে লিখেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ভারতকে একটি ‘নোট ভারবাল’ পাঠিয়েছে হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য। তবে এখনও ভারত থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘তবে আমরা নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাব হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার এবং জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে। বিশেষ করে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে ১,৫০০ ছাত্র, শ্রমিক ও অন্যান্য মানুষের হত্যাকাণ্ডের জন্য তাঁকে এবং তার খুনি সহযোগীদের গণহত্যা, হাজার হাজার গুম, কোটি কোটি অর্থ পাচার এবং ব্যাংক লুটের দায়ে আদালতে বিচারের মুখোমুখী করব।’
তিনি লিখেছেন, ‘হাসিনা, আওয়ামী লিগ নেতৃবৃন্দ এবং কর্মকর্তাদের বিচার আমাদের প্রধান অগ্রাধিকারের একটি। আমরা ইতিমধ্যেই ছাত্র লিগকে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে নিষিদ্ধ করেছি। হাসিনা এখনও মিথ্যাচার করে চলেছেন। তাঁর সমর্থকরা এখনও বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। একটাই জিনিস আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি: আমরা হাসিনাকে ঠিক একইভাবে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করার চেষ্টা করব যা তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনিদের ক্ষেত্রে করেছিলেন। আমাদের প্রচেষ্টা নিরলস হবে। কোনও ধরনের শিথিলতা হবে না।’
শফিকুল লিখেছেন, ‘যত দিন না হাসিনা এবং তাঁর রক্তপিপাসু দলীয় সদস্যদের হত্যাকাণ্ড এবং দুর্নীতির জন্য বিচারের মুখোমুখী করা যাচ্ছে, ততদিন কোনও ধরনের ক্ষমা সম্ভব হবে না। কোনও ধরণের দালালি হাসিনা এবং তার খুনি সহযোগীদের উপকারে আসবে না।’
ইউনুসের প্রেস সচিবের কথায়, ‘পৃথিবী এগিয়ে গেছে। হাসিনার জগত এখন দিল্লির দু’টি ছোট কামরায় সীমাবদ্ধ। আওয়ামী লিগের সাধারণ কর্মীরা যতই হাসিনার আঁচলের আশ্রয়ে থাকবেন, ততই তারা দলের জন্য বড় কবর খুঁড়বেন। তারা এখনও আশা করছে রাজনৈতিক মঞ্চে ফেরার। কিন্তু প্রথমে তাদের হাসিনাকে গণহত্যা, খুন, গুম এবং লুন্ঠনের জন্য প্রত্যাখ্যান করতে হবে।’ হাসিনার শাসনামলকে ‘চোরতন্ত্র’ ও ‘গুমতন্ত্র’ বলে আক্রমণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
শফিকুল দাবি করেছেন, মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এসেছে। আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্থিতিশীল। একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং রাষ্ট্রকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা গিয়েছে। গত পাঁচ মাসে রপ্তানির হার বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। আমদানি ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে, যা দেশিয় খরচ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও হাসিনা, শেখ পরিবার কিংবা তাঁর দলের কেউ ক্ষমা চাননি, দুঃখ প্রকাশ করেননি। উল্টে তারা ভারতের মিডিয়ায় মিথ্যা এবং ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে।
তিনি লিখেছেন, ‘জুলাই মাসের আন্দোলনের ছাত্ররা এবং লক্ষ লক্ষ প্রতিবাদী হাসিনা এবং তার শেখ পরিবারকে ইতিহাসের নর্দমায় ফেলে দিয়েছে। এখন সাধারণ আওয়ামী লীগের সমর্থকদের পালা, তারা ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং রক্তপিপাসু শাসকের কাছ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে শুরু করেছেন।