শেষ আপডেট: 22nd October 2024 10:25
৫ অগস্টের পর ২১ সেপ্টেম্বর। শেখ হাসিনাকে উৎখাতের আড়াই মাসের মাথায় তাঁর সময়ে নিয়োগ হওয়া রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনকে সরানের আন্দোলন শুরু করল বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব।
ঢাকার সাহবাগের অদূরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সোমবার মাঝরাতে সমাবেশ ডাকে ছাত্ররা। সেখানে মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামের ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিল। সেই সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ হাসনাত আবদুল্লাহ, রাষ্টপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের উদ্দেশে বলেন, 'বঙ্গ ভবনের বিলাসিতা এবার ইতি টেনে দিন। আমরা আপনাকে চাই না।' দিন চারেক আগে আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রাষ্ট্রপতিকে সরে যাওয়ার কথা বলেন। হুঁশিয়ারি দেন, 'আপনি নিজে সরে না গেলে জনগণ টেনে নামাবে।' মনে করা হচ্ছে, টেনে নামানোর আন্দোলন শুরু করল ছাত্ররা।
সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও আওয়ামী লিগ ও তাদের শাখা সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে সারা বাংলাদেশ জুড়ে মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণজমায়েতের ডাক দিয়েছে। ঢাকায় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জমায়েত হবে। খুলনায় সভা হবে শিববাড়ি মোড়ে।
ঢাকার পাশাপাশি সোমবার রাতে রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, যশোর, সিলেট, বরিশালে সোমবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্ররা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণ–অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের’ ব্যানারে সভা হয়।
ঢাকার সরকারি সুত্রের খবর, প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসও রাষ্ট্রপতিকে সরাতে তৎপর। এজন্য আইনি পরামর্শ নেওয়া শুরু করেছেন তিনি।
তিনি এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা নিয়ে এগচ্ছেন। রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানকেও সরাতে চান তিনি। কিন্তু সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি থাকলে সেই কাজ করা কঠিন। রাষ্ট্রপতি যেহেতু সেনাবাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার, তাই তাঁর সম্মতি ছাড়া সেনাপ্রধান বদল সম্ভব নয়। সেনাপ্রধান জামান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দেড় বছর বেঁধে দেওয়ায় ইউনুস ও ছাত্র নেতৃত্ব তাঁর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রপতি তাঁকে সরাতে রাজি হবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে।
রাষ্ট্রপতিকে সরানোর এজেন্ডা ছাত্র ও ইউনুসের নতুন নয়। গত দুদিনে তা নয়া মাত্রা নিয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি দেখেননি বলে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য মানতে নারাজ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
রাষ্ট্রপতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি দেখেননি। তাঁর কাছে পদত্যাগের কপি নেই।
জবাবে সোমবার ঢাকায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্রপতি এই মন্তব্য প্রত্যাহার না করলে তিনি ওই পদের জন্য উপযুক্ত কিনা উপদেষ্টামণ্ডলী তা খতিয়ে দেখবে।
রাতে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের তরফে আপসের বার্তা দিয়ে বলা হয় শেখ হাসিনার পদত্যাগকে কেন্দ্র করে সংবাদমাধ্যমে চলমান বিতর্কের তিনি অবসান চান। কিন্তু তাতে।কাজ হয়নি। মাঝরাতে শুরু হয় ছাত্রদের আন্দোলন।
আসলে ৫ অগাস্ট রাতে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেছিলেন, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। সরকার প্রশ্ন তুলেছে জাতির উদ্দেশে ভাষণে পদত্যাগপত্র গ্রহণের কথা বলার পর রাষ্ট্রপতি এখন উল্টো কথা বলছেন কেন।
আসলে শেখ হাসিনা নিজেই দেশ ছাড়ার পর দাবি করেছিলেন, তিনি পদত্যাগ করেননি। সাংবিধানিকভাবে তিনিই এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের উপর আগে থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস চটে আছেন। ছাত্র নেতৃত্বেরও তাঁর উপর চাপ আছে সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরানোর। এজন্য ছাত্ররাও সাহাবুদ্দিনের অপসারণ চেয়ে আন্দোলনে নেমে পড়ল সোমবার রাত থেকে।