শেষ আপডেট: 9th March 2025 19:37
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদে উত্তাল বাংলাদেশ। ঢাকা-সহ দেশটির বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে পথে নেমেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ক্যাম্পাসের ভিতরে ও বাইরে লাঠি হাতে মিছিল করছে।
শনিবার গভীর রাত থেকে নিদ্রাহীন ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মাঝরাতে হস্টেল থেকে থেকে বেরিয়ে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী রাজপথ দখল নিয়ে ধর্ষকদের দ্রুত কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব। পুলিশ-সহ নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অপদার্থতা ও গাফিলতির অভিযোগ তুলে তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেছে। আগেও একাধিকবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি ওঠে।
রবিবার পরিস্থিতি এতটাই উত্তাল যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সারাদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। যদিও তার আগে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামনে এগিয়ে দেওয়া হয় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে। তিনি ঘোষণা করেন, ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত শেষ করা হবে পনেরো দিনে। বিচার হবে ৯০ দিনের মধ্যে। সরকার এজন্য দ্রুত আইন পরিবর্তন করবে বলে জানান তিনি।
শুধু ধর্ষণ নয়, নারীর উপর নির্যাতনের ঘটনা বিগত মাস গুলিতে ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের ভার্চুয়াল বৈঠকে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশে যেন ধর্ষণের উৎসব লেগে গিয়েছে।
পুলিশ ও সরকারের একাধিক সুত্র থেকে জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিগত ডিসেম্বরের তুলনায় ধর্ষণ এবং চুরি-ডাকাতি-খুন-অপহরণ-রাহাজানি-অপহরণের ঘটনা তিন চার গুণ বেড়ে গিয়েছে।
মাগুরায় একটি শিশু কন্যাকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয়েছে। ঢাকার কেরানিগঞ্জে এক অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলা গণ ধর্ষণের শিকার হন। অভিযুক্ত শহরের কুখ্যাত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বলে জানা গিয়েছে।
শনিবার রাত থেকে দেশটির একাধিক শিক্ষাঙ্গন উত্তাল। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস টানা উত্তাল। রবিবার বিকালে ছাত্রী এবং স্থানীয় নারীরা লাঠি মিছিল বের করেন। তাঁরা স্লোগান দেন, ‘জান, মালের নিরাপত্তা দে/নইলে গদি ছেড়ে দে’, ‘খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন/রুখে দাঁড়াও জনগণ’, ‘ধর্ষকরা ধর্ষণ করে/প্রশাসন কী করে?’
পথে নেমেছেন শিক্ষকেরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক নেটওয়ার্ক। শিক্ষকেরা বলেন, নারীদের উপর এমন অত্যাচার, নিপীড়নের জন্য জুলাই বিপ্লব হয়নি। অনেক শিক্ষক অভিযোগ করেন, সরকার মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। পুলিশ-প্রশাসন ব্যর্থ বলেই অপরাধীরা মহিলাদের নিশানা করছে।
আশ্চর্যের হল দেশ যখন ধর্ষণ-সহ নারীর উপর যৌন সহিংসতার ঘটনায় উত্তাল, তখন গণ অভ্যুত্থানের কারিগর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব ও তাদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা মুখে কুলুপ এটে আছেন। নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহরা চুপ। একমাত্র নারী নেত্রী উমামা ফাতেমা মাঝরাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। কিন্তু বাকি নেতাদের দেখা যায়নি। প্রতিবাদ করে বিবৃতিও দেয়নি ছাত্র নেতৃত্ব।