রাহুল আনন্দ।
শেষ আপডেট: 9th August 2024 15:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দর বাড়িতে ভয়াবহ হামলা নিয়ে সমালোচনায় মুখর দুই বাংলাই। শিল্পীর বাড়িতে দুষ্কতীদের এই তাণ্ডব মেনে নিতে পারছেন না শুভবুদ্ধসম্পন্ন জনগণ। রাহুলের হাজার তিনেক বাজনা, যার বেশিরভাগটাই তাঁর নিজের হাতে বানানো-- সব পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে তারা। স্ত্রী ঊর্মিলা শুক্লা ও ১৩ বছরের ছেলে তোতাকে নিয়ে রাতারাতি বাড়ি ছেড়েছেন রাহুল।
এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন শিল্পী রাহুল নিজে। বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমকে একটি বার্তা পাঠিয়ে তিনি বলেন, ‘তবু শান্তি আসুক আমার সোনার দেশে, যে কোনও মূল্যে। সে মূল্য যদি হয় আমার সোনার সংসারের পোড়া ছাই অথবা বাদ্যযন্ত্র পোড়া কয়লার বিনিময়ে, তাতেও দুঃখ নেই। ভালবাসি বাংলা আর বাংলার মানুষকে, আমি বাংলায় গান গাই।’
শিল্পীর এই প্রতিক্রিয়ায় আবেগে ভেসে গিয়েছেন তাঁর ভক্ত-সমর্থকরা। কতটা বড় মনের মানুষ হলে, দেশের প্রতি কতটা গভীর শ্রদ্ধাবোধ থাকলে এত বড় ব্যক্তিগত ক্ষতির পরেও এই মন্তব্য করা যায়, সেকথাই বলছেন তাঁরা।
'জলের গান' ব্যান্ডের মুখ্য সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দ বরাবরই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সরব হয়েছেন। সাম্প্রতিকতম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও সংহতি জানিয়ে ঢাকার রবীন্দ্রসরোবরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি, গান গেয়েছিলেন। সেই আন্দোলনের জয়ের পরেই এত বড় হামলার শিকার হলেন তিনি। ধানমন্ডির বাড়ি লুট হয়ে গেল তাঁর। পুড়ে ছাই হয়ে গেল সব। কার্যত পথে নামতে হল স্ত্রী-পুত্র নিয়ে। তার পরেও শিল্পীর চাওয়া, ‘সবার ভাল হোক। ভাল থাকুক আমার বাংলাদেশ।’
রাহুল বলেন, ‘কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই আমি। প্রায় তিন হাজার বাদ্যযন্ত্র পুড়ে ছাই। ওরা আমার সন্তানের মতো। আমি সব সন্তানকে হারালাম, কেবল আমার মানুষ-সন্তানকে নিয়ে জীবিত নিয়ে বেরোতে পেরেছি। বাকিরা পুড়েছে বা লুট হয়েছে।’
ধানমন্ডিতে অবস্থিত রাহুল আনন্দের বাড়ির নাম 'ভাঙাবাড়ি'। রাহুলের সঙ্গে থাকতেন তাঁর স্ত্রী, পেশায় চিত্রশিল্পী ঊর্মিলা শুক্লা। সঙ্গে ছেলে তোতা। এই বাড়ি অনেকেরই চেনা সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্রে। বিশেষ করে গত বছর ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ‘ভাঙাবাড়ি’ বেড়াতে আসার পরে এটি খবরে চলে আসে। এই বাড়িতে বসেই ‘জলের গান’ ব্যান্ডের বহু গান লিখেছেন, সুর করেছেন রাহুল আনন্দ। এই বাড়ির স্টুডিওতে রেকর্ডিংও করেছেন গান।
তবে সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। বাড়ির ভিতরের বাদ্যযন্ত্রের সমাহার, ছড়িয়ে থাকা নানা শিল্পকর্ম-- সব শেষ। গোটা বাড়িটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পোড়া গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বাড়িতে রেকর্ড করা শেষ গানটি ফেসবুকে প্রকাশ করে 'জলের গান' ব্যান্ডের তরফে লেখা হয়েছে, 'বাড়িটি শুধু রাহুল আনন্দের বসতবাড়ি ছিল না; ছিল পুরো দলটির স্বপ্নধাম, আনন্দপুর। যেখানে তৈরি হয়েছে কত গান, কত সুর আর দাদার ভাবনাপ্রসূত শত শত বাদ্যযন্ত্র। যাঁরা নিয়মিত এই বাড়িতে যাতায়াত করতেন, তাঁরা জানেন, রাহুল আনন্দ ও ঊর্মিলা শুক্লার বাড়িটির সাদা গেটটি সব সময় খোলাই থাকত। তাতে তালা দেওয়া হতো না। তবে কি এই ঠিকানায় আবাস হওয়াটাই কিছু মানুষের এত ক্ষোভের কারণ? এত রাগের বহিঃপ্রকাশ?’
উত্তর দেওয়ার কেউ নেই। আবার অনেকেই বলছেন, উত্তর খুব সহজ। আন্দোলনের আঁচ বা আন্দোলন পরবর্তী ধর্মীয় মৌলবাদের আঁচ-- দিনের শেষে শিল্পের জন্য ক্ষতিই করল। তবে সে আঁচ যে শিল্পীকে ধ্বংস করে দিতে পারেনি, তাতেই আপাতত স্বস্তি সব মহলে। সোশ্যা মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে রাহুল আনন্দর মন্তব্য। এত বড় ক্ষতির পরেও প্রতিশোধ নয়, শান্তির পক্ষই নিয়েছেন তিনি।