একাধিক সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানকারীদের উপর হামলার ঘটনা একটা ট্রেন্ড বা প্রবণতায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে।
পুলিশ-সেনার ঘেরাটোপের মধ্যে জলের বোতল উড়ে এল অভ্যুত্থানের নায়কের মাথায়
শেষ আপডেট: 16 May 2025 12:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আমেরিকায় ক্লিন্টন ফাউন্ডেশনের (Clinton Foundation) সভায় মহম্মদ ইউনুস (Md Yunus) তাঁকে শেখ হাসিনাকে (Sheikh Hasina) উৎখাতের গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই ‘নায়ক’ তথা অন্তবর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে (Mahfuj Alam, information advisor to the Govt of Bangladesh) নিশানা করে জলের বোতল উড়ে এল রাজধানী ঢাকায়। তিনি তখন সেনা ও পুলিশ পরিবৃত। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে নিরাপত্তা আধিকারিকেরা দ্রুত সরিয়ে নেন তাঁকে। দিন দুয়েক আগের সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।
চলতি মাসের গোড়ায় ঢাকার অদূরে গাজিপুরে আক্রান্ত হন সদ্য তৈরি জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (Hasnat Abdullah, organising secretary of National Citizen party)। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা এই তরুণ নেতা হাতে মাথা কাটা মেজাজের মানুষ। হুমকি দেওয়া, বিরোধী দল, সংবাদমাধ্যমের অফিস দখল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের কথায় কথায় ধমক দেওয়া এই নেতাকে প্রকাশ্য রাস্তায় পিটিয়েছে এই দল লোক। পথচলতি মানুষ বাধা দেয়নি।
বৃহস্পতিবার সাভারের আশুলিয়ায় একটি সিসা কারখানায় শ্রমিক ও মালিকদের যৌথ হামলার শিকার হন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার নেতা। তোলাবাজি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের মুখে পড়েন ওই নেতারা। যদিও সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, সিসা কারখানার দূষণ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন ওই চার নেতা।
দিন ছয়েক আগে হবিগঞ্জে আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করে ফেরার পথে স্থানীয় জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়েন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা। গত মাসে ঝালকাঠি উপজেলার রাজাপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক আল শাহরিয়ার নিবিরের উপর হামলা হয়। গতমাসের মাঝামাঝি নাগাদ ঢাকার মীরপুরে হামলা হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃত্ব এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের উপর।
একাধিক সুত্র থেকে জানা যাচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানকারীদের উপর হামলার ঘটনা একটা ট্রেন্ড বা প্রবণতায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে। প্রতিদিনই দুটি-চারটি করে ঘটনা ঘটছে। মহম্মদ ইউনুসের স্নেহধন্য মাহফুজের মাথায় এসে জলের বোতল আঘাত করেছে তাই-ই শুধু নয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলনের মীমাংসা করতে গিয়ে বড় ধরনের বাধার মুখে পড়েন। পড়ুয়াদের পাল্টা স্লোগানে ভাষণ থামাতে হয় তাঁকে। তাঁর আর্জি উড়িয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে আন্দোলনকারীরা। শিক্ষা উপদেষ্টার পরিবর্তে তথ্য উপদেষ্টা তথা অনুগত মাহফুজকে পাঠিয়েও আন্দোলন থামাতে পারেননি ইউনুস।
স্বভাবতই প্রশাসন এবং আওয়ামী লিগ বিরোধীদের চিন্তায় ফেলেছে মাহফুজ আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহের উপর হামলার ঘটনা। সেনা-পুলিশ পরিবৃত অবস্থায় একজন উপদেষ্টার (মন্ত্রী পদমর্যাদা) দিকে খাস ঢাকায় জলের বোতন ছুড়ে মারার ঘটনায় সরকারি মহল উদ্বিগ্ন। মাহফুজ ও হাসনাত, আর এক সংগঠন সারজিস আলমদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে হামলার প্রবণতা চিন্তায় রেখেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং প্রশাসনকে। হাসনাতের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও সর্বদা সমর্থক পরিবৃত হয়ে থাকা ওই নেতা কেন রাতে একা গাজিপুরে গিয়েছিলেন সেই প্রশ্নের জবাব মিলেনি। তা নিয়েও রহস্য
পাশাপাশি শুরু হয়েছে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ। সরকারি সুত্রে জানা যাচ্ছে, হামলার কিছু ঘটনায় জামায়াতে ইসলামি ও তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরের হাত রয়েছে। কিছু ঘটনায় বিএনপি এবং তাদের ছাত্র ও যুব সংগঠন যথাক্রমে ছাত্র দল ও যুব দল যুক্ত বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। তবে বেশি কিছু ঘটনার পিছনে জনক্ষোভই আসল কারণ বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি পুলিশ-প্রশাসের সহায়তায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়ায় জনক্ষোভের মুখে পড়েছেন ওই দলের নেতারা। পাশাপাশি তোলাবাজির টাকার ভাগ বাটোয়ারা এবং দল ও সংগঠনের পদ নিয়ে রেষারেষির জেরে হামলা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।