শেষ আপডেট: 26th October 2024 21:28
তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি। দেশের সাংবিধানিক প্রধান এবং সেনাবাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার। তাঁর জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তাও বরাদ্দ। কিন্তু তিনিই বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন। খাতায় কলমে তিনি ঢাকার বঙ্গভবন অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির অফিস-বাড়িতে নিজেকে স্বেচ্ছাবন্দি করে রাখলেও আসলে পরিস্থিতির চাপে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ও তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের আশঙ্কা বঙ্গভবনের বাইরে তাঁকে ঘেরাও করে হেনস্থা করতে পারে তাঁর পদত্যাগের দাবি তোলা ছাত্ররা, বাংলাদেশে ইদানীং যাদের 'ইউনুস বাহিনী' বলা হচ্ছে।
মহম্মদ ইউনুসের সরকার চায় না সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি থাকুন। কারণ তিনি শেখ হাসিনার মনোনীত রাষ্ট্রপতি। তার উপর সম্প্রতি তিনি সরকারকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে। হাসিনার পদত্যাগপত্র তাঁর কাছে নেই, তিনি দেখেনওনি বলে এক সাংবাদিককে সাক্ষাৎকারে বলেছেন। হাসিনা নিজেও ফোনালাপে দাবি করেছিলেন তিনি পদত্যাগ করেননি। চাপের মুখে দেশ ছেড়েছেন। নিজেকে এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেও দাবি করেছেন আওয়ামী লিগ নেত্রী।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। আর রাষ্ট্রপতির এই কথাতেই চটেছেন মহম্মদ ইউনুস ও তাঁর উপদেষ্টারা। এই সুযোগে ছাত্ররাও রাষ্ট্রপতিকে সরানোর দাবি নিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে সরানোর যাবতীয় আইনি ও সাংবিধানিক পথ বন্ধ। রাষ্ট্রপতি নিজে সরে না গেলে তাঁকে সরানো কঠিন। এই অবস্থায় সাহাবুদ্দিনকে সরানোর একটিই রাস্তা খোলা। তাহল, ছাত্রদের নামিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সর্বসমক্ষে অবমাননা, হেনস্থা করা। তিনদিন আগে একদল ছাত্র বঙ্গভবন অভিযানে গিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে।
রাষ্ট্রপতির আরও আগে থেকে আশঙ্কা তাঁকে বঙ্গভবনের বাইরে পেলে ছাত্ররা ঘিরে নিয়ে পদত্যাগের জন্য চাপ দিতে পারে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হতে পারে যে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা আধিকারিকরা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা দেখভাল করে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট। ওই বাহিনী সরকারের অধীনস্ত নয়। রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধার করতে তারা গোলাগুলি করলে বহু মানুষের প্রাণ চলে যেতে পারে।
ঢাকার সরকারি সুত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আশঙ্কা করছেন, বঙ্গভবনের বাইরে তাঁকে পেলে ঘিরে নিয়ে চাপ দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হতে পারে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব রাষ্ট্রপতিকে সরাতে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। সেই সময়সীমা আগামীকাল রবিবার শেষ হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে সরাতে তৎপর মহম্মদ ইউনুসও। তবে আইন ও সাংবিধানিক পথ বন্ধ থাকায় তিনি এখনই অগ্রসর না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উপদেষ্টামণ্ডলীলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত করেছেন এই ব্যাপারে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। অর্থাৎ সরকার সাহাবুদ্দিনকে সরাতে চায়, তাতে কোনও সন্দেহ, সংশয় নেই।
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর ছাত্ররা আওয়ামী লিগ সমর্থক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে চাপ দিয়ে সরকারি-বেসরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের আশঙ্কা বঙ্গভবনের বাইরে তাঁর অবস্থাও আওয়ামী লিগের কর্মী সমর্থকদের মতো হবে। তাই জুন মাসের পর এমনকী পাবনায় নিজের বাড়িতে পর্যন্ত যাননি। তাঁর সঙ্গে বঙ্গভবনে বিদেশি কূটনীতিকরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন মাত্র। রাষ্ট্রপতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য। বেশ কিছু সরকারি বেসরকারি সংস্থার উপদেষ্টা। কোনও সংস্থার আমন্ত্রণ গ্রহণ করছেন না তিনি।