বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া
শেষ আপডেট: 4 May 2025 20:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আগামী মঙ্গলবার দেশের ফিরছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (Ex PM Khaleda Zia)। লন্ডনে (London) চিকিৎসার পর বর্তমানে তিনি অনেকটাই সুস্থ। লন্ডন থেকে বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের (Bangladesh Airlines) যে নিয়মিত বিমানে খালেদা দেশে ফিরছেন সেটি প্রথমে নামবে সিলেটে। সেখান থেকে ঢাকায় আসবে বিমানটি। নেত্রীকে দেশে স্বাগত জানাতে খালেদার দল বিএনপি (BNP) দুই বিমানবন্দরের বাইরে বিপুল লোক সমাগমের আয়োজন করছে। দলীয় সুত্রের খবর, দু’জায়গাতেই দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি, এমনকী খুনোখুনির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না দল।
গত মাসে বিএনপির সাত জন কর্মী দলের খুনিদের হাতে নিহত হয়েছেন। আর গত বছর ৫ অগাস্টের পর দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে প্রাণ গেছে ৫৮জনের। রাজনৈতিক মহলের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে দলীয় লোকেদের হাতে এক মানুষের খুন হওয়ার নজির নেই।
বিএনপি নেতৃত্বের দাবি, তারা উশৃঙ্খল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। একাধিক নেতা-কর্মীকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে দলের তরফে মামলা করা হয়েছে। পুলিশকে বলা হয়েছে দ্রুত তদন্ত করে খুনিদের সাজা দিতে।
বাংলাদেশের আইন ও মানবাধিকার সংগঠন আসক-এর সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে ৩৬জন রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। নিহতদের ২৬জন বিএনপির নেতা কর্মী। আরও জানা গিয়েছে, বেশিরভাগেরাই মারা গিয়েছেন দলীয় কোন্দলে, পার্টির ভাড়াটে খুনিদের হাতে।
বিএনপি-র এই পরিণতির কারণ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। একাধিক বিশ্লেষক মনে করেন, আওয়ামী লিগ সেভাবে ময়দানে এখনও সক্রিয় নয়। তার প্রতিক্রিয়া গিয়ে পড়েছে বিএনপির উপর। জেলা, উপজেলা, নগরের মতো নীচুতলায় বিরোধী শূন্য ময়দানে বিএনপির স্থানীয় নেতারা ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করেছেন। বেশিরভাগ জায়গায় তারাই সরকার, প্রশাসন। থানা-পুলিশ তাদের কথায় চলছে। বিনা নির্বাচনে ক্ষমতা হাতে পেয়ে যাওয়ায় শুরু হয়েছে গোষ্ঠী বিবাদ।
একাধিক সুত্রে জানা যাচ্ছে, বিএনপি নেতৃত্ব এই ঘটনায় চিন্তিত। লন্ডন থেকে তারেক রহমান একাধিক ভার্চুয়াল বৈঠকে দলকে বলেছেন, নিজেরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়লে জনগণ বিএনপিকে বর্জন করতে পারে।
কোনও কোনও বিশ্লেষক মনে করেন, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ঘিরে অচলাবস্থা চলতি পরিস্থিতির একটি কারণ। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁর পক্ষে সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরা কঠিন। অন্যদিকে, কার্যনির্বাহী চেয়ারপারসন তারেক রহমান তাঁর বিরুদ্ধে চলা বেশিরভাগ মামলায় রেহাই পেলেও দেশে ফেরার বিষয়ে মনস্থির করতে পারছেন না। মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর বড় ছেলে তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমান বহু বছর পর দেশে ফিরছেন। কোনও কোনও মহলের ধারণা জোবাইদা দলের হাত ধরতে পারেন। মির্জা ফখরুলের জায়গায় তাঁকে মহাসচিব করতে পারেন খালেদা।
তবে একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের অভিমত, রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপি আওয়ামী লিগের ময়দানে ফেরা আটকাতে চাইলেও তাতে নিজেদেরই ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশে পঞ্চাশটির মতো দল থাকলেও প্রধান শক্তি আওয়ামী লিগ ও বিএনপি। শেখ হাসিনার দল ময়দানে না থাকায় ক্ষমতার দ্বন্দ্বে খালেদা জিয়ার পার্টি ভাতৃঘাতী সংঘর্ষে মেতেছে। আওয়ামী লিগ ময়দানে নামলেই বিএনপির সব গোষ্ঠী আবার এক হয়ে যেতে পারে। নইলে ভোটের আগে দলের গোলমাল আরও বাড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।