বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে পবিত্র সরকার।
শেষ আপডেট: 6th August 2024 10:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সরকারি শিক্ষা ও চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের কোটার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল মাস দুয়েক আগে, তার পরিণতি চরম সীমায় পৌঁছেছে। উৎখাত হয়েছে শেখ হাসিনার গদি। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি। সামরিক বাহিনীর মধ্যস্থতায় আপাতত অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার পথে সে দেশ। কিন্তু আগামী দিনে কী হতে চলেছে সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে সব মহলেই। তার উপরে রয়েছে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আশঙ্কাও।
এই অবস্থায় ভারতেরও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ, ভাষাতাত্ত্বিক ও প্রবীণ অধ্যাপক পবিত্র সরকার। 'দ্য ওয়াল'কে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি আলোচনা করলেন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেন এমন হল, এ প্রশ্ন করায় পবিত্রবাবুর ব্যাখ্যা, 'বাংলাদেশের এই পরিস্থিতির কারণ হিসেবে যে আন্দোলন, তা প্রাথমিক ভাবে কোটা-বিরোধী আন্দোলন ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য যে ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ছিল, তার বিপক্ষে ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্রদের সে দাবি সঙ্গতই ছিল বলে মনে করা হয়। জুন মাসে শুরু হওয়া এই দাবি-আন্দোলন জুলাই থেকে তীব্র রূপ ধারণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু অসংবেদনশীল কথা, রাজাকার মন্তব্য এই আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়ে। ১৭ জুলাই পুলিশের গুলিতে ছাত্রমত্যুর ঘটনাও ঘটে। ফলে আন্দোলন সম্ভবত আর ছাত্রদের হাতে রইল না।'
এই সময়ে পবিত্রবাবু নিজে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন কয়েক দিনের জন্য, সেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নিজে ১৮ জুলাই বাংলাদেশে গিয়েছিলাম, তখন দেখেছিলাম ছাত্র ছাড়াও অনেক বড় বড় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে এই আন্দোলনে সামিল। আমি যদিও কোনও প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ দেখিনি, কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, একদিকে যেমন ছাত্রদল রাস্তায় নেমেছে, তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রাপ্তবয়স্করাও নেমেছে পথে। সব মিলিয়ে জনতার সংঘর্ষের পরিস্থিতি। এর পরে ২২ জুলাই একটু শান্তির দিকে এগোয় বাংলাদেশ। সুপ্রিম কোর্টও রায় দেয় কোটার বিপক্ষেই। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। আন্দোলন কোটার সীমানা ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। দেশজুড়ে মানুষ খেপে উঠেছে।'
আন্দোলনের একটা পর্যায়ে গিয়ে এতে শেখ হাসিনার বিরোধিতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না বলে উল্লেখ করে পবিত্রবাবু বলেন, 'শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানুষের যে এত রাগ পোষা ছিল, তা বোঝা যায়নি আগে। যদিও হাসিনার দল আওয়ামী লীগ নিয়ে বিক্ষোভ আগেও ছিল। তাদের নির্বাচনে জয় নিয়েও প্রশ্ন ছিল বহু বছর ধরে। কিন্তু তাই বলে যে হাসিনার বিরুদ্ধে এত বিতৃষ্ণা জমে ছিল, তা বোঝা যায়নি। ফলে কিছু হাসিনা-বিরোধী তথা ভারত বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি সুযোগ নিতে শুরু করল। শেষ অবধি এটা মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী একটা চেহারা নিল। এটা আরও স্পষ্ট হল শেখ হাসিনা সোমবার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে। কারণ তখন শেখ মুজিবের মূর্তি ভাঙা হল, তাঁর ধানমণ্ডির বাড়ি ভাঙচুর করা হল। যে মানুষটা তাঁদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, আস্ত একটা দেশ উপহার দিয়েছিল, তাঁর স্মৃতিকেও শেষ করে দিল আন্দোলন।'
এই পরিস্থিতি ভারতের পক্ষেও যথেষ্ট উদ্বেগের ব্যাপার বলে উল্লেখ করে পবিত্রবাবুর বক্তব্য, 'এই আন্দোলন এখন কী চরিত্র নেবে, সামরিক শক্তি কতটা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে, সত্যিই একটা সর্বদলীয় শান্তিপূর্ণ সরকার গঠন হবে কিনা, সাধারণ নির্বাচনের দিকে দেশটা এগোবে কিনা, এসব প্রশ্ন নিয়ে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। আমার মনে খানিকটা আশঙ্কাই তৈরি হচ্ছে, যে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা বাড়বে, প্রতিক্রিয়াশীল শাসনের ছবি দেখা যাবে।'
তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি ভারতের উপর অবশ্যই প্রভাব ফেলবে। পবিত্রবাবু মনে করছেন, 'যদি এই আন্দোলন একটা সাম্প্রদায়িক চেহারা নেয়, তাহলে ভারতে আবারও একটা হিন্দু উদ্বাস্তুদের স্রোত দেখা যেতে পারে। শুধু হিন্দুরা নয়, যে কোনও ধর্মের মানুষই দেশ ছাড়বেন। শান্তিপ্রিয় মুসলমানরাও এলাকা ছেড়ে যেতে চাইবেন। ফলে ভারতের উপর চাপ পড়বে। ভারতের বন্ধুদেশের সংখ্যাও একটা কম হবে। ফলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক, দু'ধরনের দুশ্চিন্তাই রয়েছে ভারতের জন্য।'