শেষ আপডেট: 8th January 2025 22:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দলের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণের মাধ্যমে আগামী শুক্রবার বাংলাদেশ জুড়ে নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লিগ। ওইদিন ঢাকায় ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে দলের তরফে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া মুজিবুর রহমানের সমাধিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করবে দল। পাশাপাশি দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরতে অসংখ্য আলোচনা সভার আয়োজন করা হচ্ছে। দলের নেতা-কর্মীদের বলা হয়েছে, প্রতিটি এলাকায় শীতবস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি নিতে। দেশে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া জানিয়ে শেখ হাসিনা আর্থিকভাবে সবল নেতা-কর্মীদের দুঃস্থদের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিলির পরামর্শ দিয়েছেন।
শুক্রবার ১০ জানুয়ারি আওয়ামী লিগের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭২ সালের ওই দিন শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে পা রাখেন। তার আগে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে হার স্বীকারের পর পাকিস্তানের তৎকালীন কর্তারা শেখ মুজিবুরকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। করাচি থেকে লন্ডন, দিল্লি হয়ে ঢাকা ফেরেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর শেখ মুজিবকে তাঁর ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পাক সেনা। পরে থাকে করাচি নিয়ে যায়।
এবার মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটিকে দেশের মাটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ব্যবহার করতে চাইছে আওয়ামী লিগ নেতৃত্ব। ৫ অগাস্টের পর এটি দ্বিতীয় কর্মসূচি যা দলের তরফে আগাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১০ নভেম্বর শহিদ নুর হোসেন দিবসে আওয়ামী লিগ ঢাকায় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের উদ্যোগ নিলেও বিএনপি-জামাত-বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃত্বের বাধায় তা পুরোপুরি সফল করে তোলা যায়নি।
ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং জামায়াতে ইসলামি শেখ মুজিবের স্মৃতি মুছে ফেলতে নানা পদক্ষেপ করেছে। ১৫ অগাস্ট (মুজিব হত্যার দিন শোক দিবস), ৭ মার্চের (ঢাকার ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান) ছুটি বাতিল করেছে ইউনুস সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, তাঁরা শেখ মুজিবকে জাতির পিতা বলে মানে না। আদালতেও সে কথা জানিয়েছে ইউনুস সরকার। মুজিবের হাত ধরে চালু দেশের প্রথম সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, ‘সাম্য’ শব্দ দুটি বাদ দিতে চেয়েও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সরকার। পাশাপাশি ১৯৭২ সালের সেই সংবিধান পুরোপুরি বাতিলের দাবি তুলেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব।
এমন প্রকিকূল পরিস্থিতিতে ১০ জানুয়ারি দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উদ্দীপনা জাগাতে চাইছে আওয়ামী লিগ। যদিও সরকার, জামায়াতে ইসলামি এবং বিএনপি-র প্রবল বাধার মুখে পড়তে হতে পারে ধরে নিয়েই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আওয়ামী লিগ।
আওয়ামী লিগের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সদ্য স্বাধীন বাঙালি জাতির কাছে ছিল এক বড় প্রেরণা। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সংগ্রাম, আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে বাঙালি জাতি যখন কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, তখন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধু। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনতে গুনতে হয় তাঁকে।
আওয়ামী লিগের আর এক নেতা বলেন, ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার বাংলাদেশ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ওই পরিস্থিতির মধ্যেই এবারও জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক দিনটি পালন করা হবে।