শেষ আপডেট: 11th August 2024 07:53
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হিন্দুদের উপর বিচ্ছিন্ন কয়েকটি হামলা চালিয়ে কিছু মানুষ বাংলাদেশের পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে, এমনই দাবি করলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর বক্তব্য, হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের পর থেকে যে একাধিক খবর আসছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের, তা সুসংহত কোনও আক্রমণ নয়। সরকার গঠনের পরে সহজেই সামাল দেওয়া যাবে এই সব বিচ্ছিন্ন শক্তি। পাশাপাশি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ থাকবে না বলেই আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ভারতের একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেন, ‘আমাদের বা অন্য কোনও দেশে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় যখন কোনও পরিবর্তন আসে, কিছু মানুষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশের প্রতিটি বিপ্লবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা— তাঁরা হিন্দু বা মুসলমান যে ধর্মেরই হোন না কেন, এই সব সুবিধাবাদী গুন্ডাদের শিকারে পরিণত হন।’
তিনি আরও দাবি করেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ‘অসাধারণ’। তাঁর কথায়, 'বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর যে বিচ্ছিন্ন হামলাগুলি হয়েছে, সেগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।’
পাশাপাশি ফখরুল জানান, দেশে নির্বাচন হলে বিএনপি সবসময় প্রস্তুত। তবে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন হতে চলেছে, তার জন্য তাড়াহুড়ো করলে ভাল ফল নাও হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। কারণ, তাঁর কথায়, 'পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাই দূষিত হয়ে গেছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অবস্থাই নেই দেশে। নির্বাচন ব্যবস্থায় আগে সংস্কার আনতে হবে।' তিনি আরও জানান, সুস্থ থাকলে নির্বাচনে অংশ নেবেন বিএনপির শীর্ষনেত্রী খালেদা জিয়া নিজেও।
ফখরুলকে প্রশ্ন করা হয়, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে যে সদ্য আন্দোলনের মুখোমুখি হল বাংলাদেশ, তাতে চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের হাত ছিল কিনা। মির্জা ফখরুল দাবি করেন, এমন কোনও কিছুই ছিল না। জামাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জামাত চরমপন্থী দল নয়। তবে বাংলাদেশে চরমপন্থী কিছু গোষ্ঠী ছিল, সেগুলোর অস্তিত্ব এখনও আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।’ ফখরুল দাবি করেন, 'এই আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে ছাত্রদের নেতৃত্বে হয়েছে। তাদের অধিকাংশেই অতি প্রগতিশীল। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই অসাধারণ মেধাবী। আমি বিশ্বাস করি, এই বিপ্লব অবশ্যই সফল হবে।’
অন্যদিকে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হলেই বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফের দেশে ফিরবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি বিশেষে তিনি নিজেও এবারে সরাসরি রাজনীতির ময়দানে নামতে পারেন বলে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন হাসিনা পুত্র। তাঁর কথায়, 'প্রয়োজনে আমিও রাজনীতিতে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকব না। আমি নিশ্চিত আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে এবং আমরা জয়ীও হতে পারি।'
কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত জুন মাস থেকে বাংলাদেশ জুড়ে তৈরি হয় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। সরকারও প্রথম থেকে আন্দোলনকারীদের দাবির পক্ষে ছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টও আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেয়। এরপরই হাসিনা সরকারের অপসারণ চেয়ে অগস্টের গোড়া থেকে নতুন উদ্যমে আন্দোলনে নামে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠন। সংঘর্ষে প্রায় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
গত সোমবার বিকেলে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন হাসিনা। এরপরই আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে সরকার ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন। গত বৃহস্পতিবার নোবেল জয়ী ইউনুসকে মাথায় রেখে বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার