শেষ আপডেট: 10th February 2025 20:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ছাত্রদের দল গড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতেই জুলাই ফাউন্ডেশনের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সারজিস আলম। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাঁর কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ নেই। অন্যদিকে, মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম, আসিফ সজীব ভুঁইয়ারা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। আর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সংগঠনের আহ্বায়ক।
সুত্রের খবর, নতুন রাজনৈতিক দলের মুখ হওয়ার আশায় আছেন সারজিস আলম। কিন্তু ছাত্রদের প্রস্তাবিত দলের মুখ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে নাহিদ ইসলাম এগিয়ে আছেন বুঝে ক্ষোভে ফুঁসছেন সারজিস। তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন হাসনাত। এমনীতে দু'জনের বিরোধ নিয়ে গোটা সংগঠন দ্বিধাবিভক্ত। তাঁদের অনুগামীদের মধ্যে মারামারি, হাতাহাতি লেগেই আছে।
কিন্তু নতুন দলের মুখ তথা গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলের দৌড়ে হাত মিলিয়েছেন সারজিস, হাসনাত।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সুত্র থেকে জানা গিয়েছে, নতুন দলের মুখ হতে পারেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। দলের নাম ঘোষণার আগে পরে তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। নির্বাচনের আগে উপদেষ্টার পদ ছাড়তে পারেন মাহফুজ আলম ও আসিফ সজীব ভুঁইয়া।
নাহিদের নতুন দলের মুখ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হতেই ক্ষোভে ফুঁসছেন সারজিস, হাসনাতরা। দুই ছাত্র নেতার এই মনোভাব গোপন নেই। সুত্রের খবর, সংগঠনের মধ্যে তা নিয়ে আলোড়ন শুরু হতে অস্বস্তি এড়াতে সোমবার ঐক্যের বার্তা দিতে বাধ্য হয়েছেন সারজিস। ফেসবুকে সোমবার তিনি একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মাঝখানে দাঁড়িয়ে নাহিদ। তাঁর দু পাশে সারজিস ও হাসনাত।
ছবির নীচে সারজিস লিখেছেন, ‘৬ জুন সকাল থেকে একসঙ্গে যে পথচলা শুরু হয়েছিল, সেটা খুনি হাসিনার পতন পর্যন্ত পৌঁছেছিল কারণ আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।’
তিনি আরও লিখেছেন, 'মতপার্থক্য হবে, পক্ষে-বিপক্ষে কথা হবে, যুক্তিতর্ক হবে, ভুল হবে আবার ভুল থেকে সংশোধন হবে, কিন্তু খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ। ২৪-এর গণহত্যার বিচারের দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ, যেকোনও বহিঃশক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ।'
তাৎপর্যপূর্ণ হল, সোমবার একই ছবি পোস্ট করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনিও ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। বাস্তব পরিস্থিতি হল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের গোষ্ঠী কোন্দল তুঙ্গে উঠেছে।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের অন্তর্দ্বন্দ্ব দিন দিন প্রকাশ্যে আসছে। ছাত্র নেতাদের গোলমাল হাতাহাতি, মারামারি পর্যন্ত গড়িয়েছে।জানা গিয়েছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব থেকে তিনি দূরে সরে যাচ্ছেন মনে করে কম গুরুত্বের জুলাই ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক পদ ছেড়েছেন সারজিস। জানা গিয়েছে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে নানা মহলের অনুরোধের পরও নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন এই ছাত্র নেতা। সারজিস অনুগামরীা মনে করছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংগঠনে ছড়ি ঘোরাছেন। ঢাকায় বাংলা মোটরস এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারির ঘটনায় সম্প্রতি সাতজন গুরুতর জখম হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের পদ নিয়ে বিবাদ সংঘর্ষে গড়ায়।
দিন কয়েক আগে এই ঘটনা চলার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের হামলায় গুরুতর জখম হন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক। নুরুল ইসলাম শাহিদ নামে ওই সমন্বয়ককে রাত ১১'টার সময় ক্যাম্পাসের মধ্যে মারধর করা হয়। সংশ্লিষ্ট সুত্রের খবর, পদ ও ক্ষমতা নিয়ে সংঘাতই পদত্যাগ ওই বিবাদের কারণ।
সারজিসের আগে আরও কয়েকজন সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন। সারজিস আলমের পদত্যাগের কারণ জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। গণ অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারকে সহায়তা, আহতদের চিকিৎসার খরচ বহনের জন্য জুলাই ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছিল। ফাউন্ডেশন সেই কাজে ব্যর্থ বলে অনেক আগেই অভিযোগ ওঠে। আর্থিক সহায়তা দেওয়াতে আমলারা অসহযোগিতা করছেন বলে সারজিস একাধিকবার সরব হন। নথিভুক্ত ১১ হাজার আহতের মধ্যে মাত্র দু হাজার জনকে অর্থ সহায়তা করা সম্ভব হয়েছে। তবে সোমবার থেকে ফের সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে।