শেষ আপডেট: 29th December 2024 23:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্ত শুরু করেছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র-সহ একাধিক প্রকল্পে কয়েক হাজার কোটি টাকা কমিশন নেওয়ার অভিযোগ তুলে হাসিনা ও তাঁর মার্কিন প্রবাসী পুত্র সজীব ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বোনঝি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। টিউলিপ আওয়ামী লিগ নেত্রীর বোন শেখ রেহানার কন্যা। তিনি ব্রিটেনের মন্ত্রী।
আওয়ামী লিগ রবিবার লম্বা বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লিগ নেত্রীকে কালিমালিপ্ত করতে 'মেটিকুলাসলি ডিজাইনড'। বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'মেটিকুলাসলি ডিজাইনড' বা নিখুঁত নকশা শব্দটির কপিরাইট মহম্মদ ইউনুসের। গত সেপ্টেম্বরে আমেরিকা সফরে গিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, শেখ হাসিনাকে উৎখাতে গণ অভ্যুত্থান ছিল মেটিকুলাসলি ডিজাইনড।
আওয়ামী লিগ পাল্টা আক্রমণে হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে ইউনুসের মেটিকুলাসলি ডিজাইনড বলে অভিযোগ করেছে। হাসিনার দল বলেছে, নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।
হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের নাম জড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও দাবি করেছে আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থা দুর্নীতির অভিযোগ করেছে।
আওয়ামী লিগের বক্তব্য, এফবিআই একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এফবিআই শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইন ভঙ্গকারী মামলার তদন্ত করে। অর্থনৈতিক তদন্তের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও নাগরিকের উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে তারা ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অনুমোদনক্রমে দেশ ও দেশের বাইরে তদন্ত করে। এক্ষেত্রে ভুয়া তথ্য ও ভুয়া সোর্সের ভিত্তিতে শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে যে দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে সেই সম্পর্কিত তথ্যগুলো ভুয়া। এফবিআইয়ের নাম করে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাতে একটি ভুয়া ওয়েবসাইট ব্যবহার করা হয়েছে। অবৈধ দখলদার ভুয়া সরকারের আমলে বাংলাদেশে এফবিআই কোনও তদন্ত করছে না।
হাসিনার দলের আরও বক্তব্য, তদন্তে এফবিআইয়ের যাদের রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে লিন্ডা স্যামুয়েল ১১ বছর আগে মারা গেছেন। আবার অন্য একজন ২০১৩ সালে অবসরে গেছেন।
আওয়ামী লিগ দুর্নীতির প্রশ্নে বিএনপিকে নিশানা করে বলেছে, এফবিআই তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল এবং তারা অর্থনৈতিক দুর্নীতির তদন্তে ও মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এফবিআইয়ের একজন প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতেই বিএনপি নেতার শাস্তি হয়।
সম্প্রতি ইউনুস সরকার তারেকের বিরুদ্ধে থাকা সেই মামলা প্রত্যাহার করে। এই সিদ্ধান্ত জানার পর এফবিআইয়ের সেই প্রতিনিধি ইউনুস সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে এফবিআই কোনও প্রেস ব্রিফিং বা তথ্য প্রকাশ করেনি।
হাসিনার দল বলেছে৷ এর আগেও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলে তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অথচ সমগ্র জাতিকে বোকা বানানোর অভিপ্রায়ে ফের সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম জড়িয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ সংস্থা হিসেবে কাজ করেছিল। দুদকের চেয়ারম্যান অন্যান্য সদস্যগণ এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ তদন্তের নির্দেশ প্রদান করতে রাজি হবে না বুঝে তাঁদের জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য এবং নতুন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন এ পর্যন্ত কোনও কাজই করতে পারে নাই। সেই আজ্ঞাবহ কমিশনের অনুমোদনের রেফারেন্স ব্যবহার করে এফবিআইয়ের নামে ভুয়া ওয়েবসাইটের নাম দিয়ে লন্ডন থেকে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। আওয়ামী লিগের দাবি, এফবিআইয়ের লন্ডনে কোনও অফিস বা রিপ্রেজেনটেটিভ নেই। এছাড়া তদন্তাধীন বিষয়ে এফবিআই কখনপ কোনও তথ্য প্রকাশ করে না।
সাবেক শাসক দল বলছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্মানহানির লক্ষ্যে বর্তমান অবৈধ সরকারের গৃহীত হীন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সরকারকে এই অপতৎপরতা থেকে সরে এসে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায়, বর্তমান অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক সরকারের এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ দাঁতভাঙা জবাব দেবে।