শেষ আপডেট: 24th October 2024 10:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের দাবি মতো বুধবার রাতে আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্রদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার অনেক আগেই ছাত্র লিগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরপর কি রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবূদ্দিনের পালা? ছাত্ররা মঙ্গলবার রাতে দাবি করেছে, সাতদিনের মধ্যে সাহাবুদ্দিনকে সরে যেতে হবে অথবা সরিয়ে দিতে হবে।
বুধবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতিতে সরানোর বিষয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীতে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির বাস ভবন যারা ঘিরে রেখেছেন তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। বঙ্গভবনের নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে একদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব নতুন করে সরকারের উপর চাপ বাড়িয়েছে রাষ্ট্রপতিকে সরানোর দাবিতে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের প্রথমসারির রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রকাশ্যেই এই দাবির বিরোধিতা করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের সঙ্গে দেখা করে বিএনপি-র শীর্ষ নেতৃত্বে জানিয়ে এসেছে, তারা চায় না রাষ্ট্রপতিকে সরানো হোক। তাতে দেশে সাংবিধানিক বা রাষ্ট্রীয় সংকট তৈরি হতে পারে, যা কাঙ্খিত নয়। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার ঢাকায় সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ইস্যুতে আলোচনা হবে।
সাহাবুদ্দিন চাপের মুখে নিজে সরে না গেলে তাঁকে অপসারণের কোনও সুযোগ নেই, সরকারি মহল সে ব্যাপারে নিশ্চিত। সংবিধানের কোনও অনুচ্ছেদেই রাষ্ট্রপতিকে সরানোর মতো সুযোগ নেই এই মুহূর্তে নেই। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যাঁরা সাহাবুদ্দিনকে সরানোর ব্যাপারে সবচেয়ে সক্রিয়, দু’দিন আগে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একান্তে বৈঠক করে জানতে চান কীভাবে সাহাবুদ্দিনকে সরিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা যায়। তারপর বৃহস্পতিবার নাহিদের কথায় স্পষ্ট সাহাবুদ্দিনকে সরাতে প্রধান বিচারপতি তাঁদের সাংবিধানিক কোনও পথ দেখাতে পারেননি। বুধবার রাতে নাহিদ বলেন, রাষ্ট্রপতিতে সরানো সাংবিধানিক নয়, রাজনৈতিক প্রশ্ন।
একটি সূত্রের খবর, সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান দেশে না ফেরা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। কারণ, রাষ্ট্রপতিকে সরালে দেশে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। সেনা বাহিনী সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত কিনা সরকার সেটা জেনে নিতে চায়।
যদিও সেনা প্রধান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে সরাতে সায় দেবেন কি না তা নিয়েও সংশয় আছে। সেনা সদরের খবর, সেনা প্রধান জামানের আশঙ্কা নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁকেই সেনা প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারেন। সেনা প্রধানকে সরানোর ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতেই ন্যস্ত। ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে অনেক জেনারেলের সুসম্পর্ক নেই। তাঁরা পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারেন।
তবে চলতি পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে বিএনপি-র অবস্থানই বাংলাদেশে নয়া রাজনৈতিক চর্চার কারণ হয়েছে। হাসিনার অত্যন্ত কাছের মানুষ সাহাবুদ্দিন গত বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তাঁর কার্যকালের মেয়াদ আরও সাড়ে তিন-চার বছর বাকি। বিএনপি-র সঙ্গে তাঁর আগে থেকেই মতবিরোধ ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে সাহাবুদ্দিন ওই দলের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তাঁকেই করেছিলেন তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান।
হাসিনার পরম প্রিয় সেই সাহাবুদ্দিনকে এখন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরাতে নারাজ বিএনপি। বলা হয় রাজনীতির দাবার চালে সময় অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। বিএনপি নেতৃত্ব মনে করছে, সাহাবুদ্দিনকে সরিয়ে নতুন যাঁকেই নতুন রাষ্ট্রপতি করা হোক না কেন তিনি হবেন জামায়াতে ইসলামির ঘনিষ্ঠজন। ইউনুস সরকার মাত্র আড়াই-তিন মাসের শাসনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে হাসিনা জমানার লোকেদের সরিয়ে জামাত ঘনিষ্ঠদের বসিয়েছেন। সরকার পরিচালনায় ইউনুসের জামাত নির্ভরতাও গোপন নেই। দায়িত্ব নিয়েই তিনি জামাতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপি অসহায় বোধ করছে। তারা মনে করছে হাসিনা মনোনীত সাহাবুদ্দিনই তাদের জন্য মন্দের ভাল। তাঁকেই খড়কুটো মানছে খালেদা জিয়ার দল। কারণ, তাদের আশঙ্কা নতুন রাষ্ট্রপতিও ইউনুসের মতোই জামাত এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের কথায় চলবেন। তাছাড়া অনেকে মনে করছেন, সাংবিধানিক অরাজকতার সুযোগে ক্ষমতা সেনার হাতে চলে যাওয়াও অসম্ভব নয়। পরিস্থিতির বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে বিএনপি নেতৃত্ব সাহাবুদ্দিনের পাশে দাঁড়ানোয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছে দেশের এই প্রথমসারির দলটি, যারা দীর্ঘদিন দেশ শাসন করেছে। বিএনপি-কেও ফাসিস্ট, স্বৈরশাসকের দোসর বলে গালমন্দ করা হয়েছে।