শেষ আপডেট: 14th October 2024 09:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পুজোয় ভারতকে ইলিশ দেবে না বলেও শেষে পিছু হটেছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বলা হয়েছিল, দেশের মানুষকে সস্তায় ইলিশ খাওয়াতেই ভারতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই বাংলাদেশে এখন বাজারে ইলিশের ছড়াছড়ি। কিন্তু কেনার লোক নেই। অবস্থা এমন যে এই প্রথম সে দেশে গোটা ইলিশের পরিবর্তে পিস করে বিক্রি শুরু করেছেন দোকানিরা। তাতে একশো গ্রাম ওজনের এক টুকরো ইলিশের দাম পড়ছে দুশো টাকা। অর্থাৎ দু হাজার টাকা কেজি। গোটা ইলিশ ১৬০০ টাকা কেজি। রবিবার মাঝ রাত অবশ্য টাকা থাকলেও ইলিশ মিলবে না। রবিবার রাত ১২’টা থেকে কুড়ি দিনের জন্য ইলিশ ধরা, বিক্রি, খাওয়া নিষিদ্ধ থাকবে।
শুধু কি ইলিশ, বাংলাদেশের বাজারে রবিবার থেকে পেঁপের দাম একশো টাকা ছুঁয়েছে। গত এক সপ্তাহ যাবত পেঁপে বাদে সব সবজির দাম একশো টাকার বেশি। দিন পনেরো হল কাঁচা লঙ্কা চারশো থেকে সাড়ে চারশো টাকা কেজি।
সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে ডিমের দাম। শনিবার পর্যন্ত এক ডজন অর্থাৎ ১২টির দাম ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। রবিবার কোনও কোনও বাজারে দুশো টাকা হয়েছে এক ডজন ডিমের দাম। এপারে ডিমের দাম তুলনায় অনেকটাই মধ্যবিত্তের আয়ত্বের মধ্যে রয়েছে। কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ডজন ডিন। বাংলাদেশে দ্বিগুণেরও বেশি।
দাম কমাতে বাংলাদেশ সরকার ভারত থেকে চার কোটি ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দোকানিরা বলছেন, যে দেশে রোজ সাত থেকে আট কোটি ডিম লাগে সেখানে চার কোটি ডিম আমদানি করে লাভটা কী?
মহম্মদ ইউনুসের অম্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে সবে মাস দুই হয়েছে। ইতিমধ্যে বহু মানুষ সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বলছেন, হাসিনাকে হটিয়ে লাভটা কী হল। একজন রিকশ চালকের বক্তব্য ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেছেন, হাসিনার সময় দিনে পাঁচশো টাকা রোজগার করে দিব্যি ছিলাম। এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। সাংবাদিক, ইউটিউবারদের একাংশ বলছেন, দু-মাসেও দেশে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি ইউনুস প্রশাসন। তার সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
মাত্রা ছাড়া দামের পিছনে সরকারের বিদেশি মুদ্রার টানাটানিও একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ডলারের তীব্র টানাটানি চলছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ডলার সংকটের মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশি টাকা ও ভারতীয় রুপিতে রপ্তানি-আমদানি শুরু হয়েছিল। ইউনুস সরকার এসে আমেরিকার চাপে ফের ডলারে বাণিজ্য শুরু করেছে। এখন ডলারের সংকটে জেরবার বাংলাদেশ সরকার। ফলে বাজার শূন্য অবস্থাতেও বহু নিত্য পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে পারছে না সরকার।
তার উপর পুলিশ এখনও পুরোমাত্রায় কাজে না নামায় ব্যবসায়ীদের একাংশ যার যেমন ইচ্ছা দাম নিচ্ছেন। যেমন পটল। বাংলাদেশের বড়বাজার বলে খ্যাত ঢাকার কাওরান বাজারে এক মাস আগে পটলের খুচরো মূল্য ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে যা বেড়ে ৬০-৭০ টাকা কেজি হয়। রবিবার ঢাকার বাজারে পটল বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। উচ্ছে, বেগুন, ঢেঁড়শের দামও কাছাকাছি।
এক ক্রেতার কথায়, কাওরান বাজারে কোনও সবজি একশো টাকা কেজি হয়ে থাকলে দেশের বাকি শহরে আরও বিশ-পঁচিশ টাকা বেশি হবে। গত এক-দেড় মাসে উল্লেখ়যোগ্য হারে বেড়েছে চালের দাম, কেজিতে দশ থেকে বিশ টাকা বেশি।
বাংলাদেশের উত্তরপ্রান্তের বড় শহর রাজশাহী। শহরের সবচেয়ে বড় মাছের বাজারে শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইলিশ মাছ কেটে বিক্রি শুরু হয়। বাংলাদেশে এর আগে কখনও ইলিশ কেটে বিক্রির নজির নেই। সামর্থ মত লোকেরা গোটা ইলিশ কিনতেন। দামের কারণে মাছ বিক্রি কমে যাওয়ায় বিক্রেতাদের অনুরোধে বাজার কমিটি ইলিশ কেটে বিক্রির অনুমতি দেয়।