মহম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম
শেষ আপডেট: 29th January 2025 16:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আওয়ামী লিগকে আন্দোলন করার অনুমতি দেওয়া হবে না। জুলাই-অগাস্ট গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনাকে আগে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।বুধবার তাঁর ফেসবুক পেজে দীর্ঘ পোস্টে এ কথা বলেছেন মহম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মঙ্গলবার রাতে শেখ হাসিনার দল ঘোষণা করেছে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দল নয় দিন বাংলাদেশে মিটিং মিছিল করবে। ১৮ ফেব্রুয়ারি দল হরতাল পালন করবে। বুধবার আওয়ামী লিগ শেখ হাসিনার নামে একটি লিফলেট প্রকাশ করেছে। হাসিনা দেশবাসীর প্রতি আর্জি জানিয়েছেন, ইউনিস সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠতে।
সাবেক শাসক দলের কর্মসূচি নিয়ে শফিকুল আলমের বক্তব্য, আওয়ামী লিগকে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।
শফিকুল ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, গত বছর আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনও নায্য বিক্ষোভ বন্ধ বা নিষিদ্ধ করেনি। গণ মাধ্যমের খবর,৷ গত সাড়ে পাঁচ মাসে কেবল ঢাকায় কমপক্ষে ১৩৬টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিক্ষোভের ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবুও, সরকার কখনও বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেননি।
এরপর শফিকুলের প্রশ্ন, আমাদের কি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লিগকে বিক্ষোভ করার সুযোগ দেওয়া উচিত? জুলাই-অগাস্টের ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় যে আওয়ামী লিগের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যায় অংশ নিয়েছে। তাদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ হয়েছেন কয়েকশ তরুণ শিক্ষার্থী, এমনকি নাবালক শিশুরাও। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা, খুন ও তাণ্ডবের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগের দলীয় সরকার।
মহম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব লিখেছেন, কয়েকজন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, শেখ হাসিনা তাঁর ১৬ বছরের একনায়কত্বের শাসনামলে সরাসরি হত্যা এবং জোরপূর্বক গুমের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি একটি চোরতন্ত্র (ক্লেপ্টোক্রেসি) এবং খুনি শাসনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিরপেক্ষ ও স্বাধীন একটি প্যানেল বলছে, শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে তাঁর ঘনিষ্ঠরা ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি থেকে কোটি কোটি ডলার চুরির দায়ে হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত চলছে।
শফিকুলের অভিযোগ, এছাড়াও, প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন। প্রায় তিন হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শাপলা চত্বরের সমাবেশ এবং মাওলানা সাঈদীর বিচারিক রায়ের পর বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ বাহিনী হাসিনার শাসনামলে পুলিশ লিগে পরিণত হয়েছিল। হাসিনার একনায়কতন্ত্রে প্রায় ষাট লাখ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ভুয়া ও গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। এমনকি দেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতিকেও নির্মমভাবে মারধর করা হয়। পদত্যাগ করতে বাধ্য এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়।
প্রেস সচিবের বক্তব্য, যতক্ষণ না আওয়ামী লিগ এই গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড এবং প্রকাশ্য দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চাইবে এবং যতক্ষণ না তাদের অন্যায়কারী নেতাকর্মীরা বিচার ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের অপরাধের জন্য বিচারকার্যের প্রক্রিয়া শুরু করে পাপমোচন করতে উদ্যোগ না নেবে এবং যতক্ষণ না আওয়ামী লিগ তাদের বর্তমান নেতৃত্ব ও ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে নিজেকে আলাদা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। মিত্রবাহিনী কি নাৎসিদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছিল? পৃথিবীর কোনো দেশ কি একদল খুনি এবং দুর্নীতিবাজ চক্রকে আবার ক্ষমতায় আসতে দেবে?