ছোট্ট আহাদ।
শেষ আপডেট: 29th July 2024 18:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রায় শ'দেড়েক প্রাণ চলে গেছে বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনে। সরকারি সূত্রের খবর, তার মধ্যে ১১৩ জনই শিশু-কিশোর-তরুণ। মর্মান্তিক এ পরিসংখ্যানের মধ্যেই একটি নাম রয়েছে আহাদের। চার বছরের ছোট্ট আহাদ। কিছু বোঝার আগেই বুলেটের আঘাত পথিবী থেকে সরিয়ে নিয়েছে তাকে। পরিবার অনুরোধ করেছিল ছোট্ট শরীরে আর যেন ময়নাতদন্ত না হয়, সেই অনুরোধও বাতিল হয়েছে আইনের খাতায়।
কোটা আন্দোলনকারী-পুলিশ ও ছাত্রলীগের ভয়াবহ সংঘর্ষ চলার সময়ে, ঢাকায় যাত্রাবাড়ি এলাকার রায়েরবাগে নিজের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল ছোট্ট আহাদ। তার মা সুমি আক্তার এবং বাবা আবুল হোসেনও ছিলেন সঙ্গে। ছিল আহাদের দাদা, ১১ বছর বয়সি দিহান মাতুব্বরও।
১১তলা বাড়ির ৮ তলায় ছিলেন তাঁরা, ভেবেছিলেন, যথেষ্ট নিরাপদ জায়গায় আছেন। কিন্তু আচমকা একটি বুলেট ছুটে এসে লাগে শিশু আহাদের মাথায়। ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরে আটকে যায় সেটি। মা-বাবার চোখের সামনেই লুটিয়ে পড় আহাদ। তার রক্তে ভিজে যায় মায়ের কোল।
সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পৌঁছন বাবা-মা। তবে আন্দোলনের জেরে গোটা হাসপাতালে তখন ভয়াবহ পরিস্থিতি। চারদিকে কাতরাচ্ছেন জখম আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ভিড়ে চিকিৎসায় দেরি হয়ে যায় আহাদের। শেষমেশ তাকে আইসিইউ-তে নিয়ে লাইফ সার্পোটে রাখলেও, শেষরক্ষা আর হয়নি।
গত শুক্রবার অর্থাৎ ১৯ জুলাইয়ের এই ঘটনায় এখনও স্তম্ভিত হয়ে আছেন আয়কর বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মচারী আবুল হোসেন। যেন বিশ্বাস হচ্ছে না, কী ঘটে গেছে জীবনে। তিনি জানান, আহাদের মাথার মধ্যে গুলি আটকে ছিল।
আইসিইউ-তে তাকে রাখার পরে চিকিৎসকরা বলেছিলেন, জরুরি সিটি স্ক্যান করতে হবে। তবে তার জন্য লাইফ সাপোর্ট খুলতে হবে, যাতে আহাদের মৃত্যুও হতে পারে। শনিবার সন্ধেয় লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থাতেই আহাদকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তাররা।
এর পরেই ছোট্ট আহাদের জায়গা হয় মর্গে, পোস্টমর্টেমের জন্য। আবুল হোসেন ও তাঁর পরিবার ঢাকা মেডিকেলের কাছে অনেক অনুরোধ করেন, ময়নাতদন্ত না করার জন্য। তবে কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেয়নি। ময়নাতদন্ত হয় নিয়মমতো, রোববার বিকেলে সেই কাটাছেঁড়া করা ছোট্ট দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারকে। এর পরে নিজের গ্রাম মানিকদাহে নিয়ে গিয়ে ছেলের কবর দেন বাবা আবুল হোসেন।