শেষ আপডেট: 8th March 2025 10:25
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা (Bangladesh law and order) পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত (India)। সে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের (Hindu minorities) উপর নিপীড়ন, নির্যাতনের ঘটনাগুলিকে যেভাবে মহম্মদ ইউনুসের (Md Yunus) সরকার খাটো করে দেখছে তাতেও সন্তুষ্ট নয়া দিল্লি (New Delhi)।
সেই সঙ্গে নয়া দিল্লি ফের স্পষ্ট করেছে, শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সম্পর্কে ভারতের অবস্থান অভিন্ন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে (former Prime Minister of Bangladesh) ফেরানোর বিষয়ে ভারত এখনও পর্যন্ত কোনও আগ্রহ দেখায়নি। অবস্থানের যে পরিবর্তন হয়নি, সম্ভবত সেই বার্তা দিতেই হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে বাংলাদেশের চিঠির এখনও কোনও জবাব দেয়নি ভারত।
বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (external affairs minister of India S Jayshankar) দিন দশ আগে বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় কিনা বাংলাদেশকে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন (Touhid Hossian) বলেন, ভারতকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি চায় কি না। বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা দুই পেশাদার কূটনীতিক জয়শঙ্কর এবং তৌহিদ হোসেনের ‘গরম’ বক্তব্যে সম্পর্কের শীতলতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
উল্টো সুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস চলতি সপ্তাহেই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল-আছে-থাকবে। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের পদাধিকারীরা যাতায়াত করছেন। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সে সব মিটে গিয়েছে।
ইউনুসের বক্তব্য নিয়ে সরকারিভাবে প্রতিক্রিয়া না দিলেও ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের (Randhir Jsiswal, spoke person of India’s foreign affairs ministry) কথায় স্পষ্ট নয়া দিল্লি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নয়। নয়াদিল্লির পররাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, মহম্মদ ইউনুস বাংলাদেশ নিয়ে ভারত সরকার উত্থাপিত প্রশ্ন এবং উদ্বেগ, উৎকণ্ঠাকে লঘু করে দেখাতেই ‘সম্পর্ক ভাল’ বলে দাবি করেছেন।
বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের আপত্তির একাধিক কারণের অন্যতম হল সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতনের ঘটনাগুলি। ইউনুস সরকার সেগুলিকে সাম্প্রদায়িক বলে মানতে নারাজ। তারা রাজনৈতিক সংঘর্ষ বলে দাবি করে তদন্ত লঘু করে দিয়েছে। ভারতের বক্তব্য, গত বছরের ৬ অগাস্ট থেকে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের ওপর বাংলাদেশে ২৩৭৪টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে মাত্র ১২৫৪টি পুলিশ যাচাই করেছে এবং এর মধ্যেও ৯৮ শতাংশ হামলাই রাজনৈতিক চরিত্রের বলে ঢাকার প্রশাসনিক কর্তারা দাবি করেছেন। ইউনুস-সহ সরকারি কর্তারা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, হিন্দুরা মূলত আওয়ামী লিগের সমর্থক। আওয়ামী লিগের উপর রাগ থেকে তাদের উপর হামলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্রের কথায়, ভারতের দ্বিতীয় আপত্তির কারণ, জেল ভেঙে এবং জামিনে মুক্তি জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত মানুষদের পুনরায় কারাগারে পাঠাতে কোনও পদক্ষেপ করছে না ইউনুস প্রশাসন। নয়া দিল্লি মনে করছে ওই লোকেরা ভারত-সহ গোটা উপমহাদেশের জন্য চিন্তার কারণ।
ইউনুস বলেছিলেন, দুই দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে যাতায়াত, যোগাযোগ হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র দুই দেশের আধিকারিকদের সফর এবং আলোচনাকে সেখানে ‘রুটিন’ আখ্যা দিয়ে এই ধরনের বৈঠককে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চাননি।
এই পরিস্থিতিতে আগামী মাসে ব্যাঙ্ককে বিমস্টেক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও সরকারিভাবে দুই দেশ এই ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কিছু জানায়নি। তবে কূটনৈতিক পর্যায়ে কথা শুরু হয় বাংলাদেশের আগ্রহের কারণে। মহম্মদ ইউনুস চাইছেন নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখোমুখি বসতে। কিন্তু ইউনুস সরকার সম্পর্কে নয়া দিল্লির মনোভাবের এখনও বদল হয়নি।