শেষ আপডেট: 6th January 2025 09:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চিকিৎসার জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অবশেষে আগামীকাল মঙ্গলবার লন্ডন যাচ্ছেন। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়াল অ্যাম্বুলেন্সে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর লন্ডন হওনা হওয়ার কথা তাঁর। এটি সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত বিমান।
খালেদার সঙ্গে যাবেন তাঁর প্রয়াত বড় ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চিকিৎসক, বিএনপি-র কয়েকজন নেতা এবং ব্যক্তিগত কর্মীরা।
লন্ডনের পর আমেরিকায় চিকিৎসা করাতে যাওয়ার কথা তাঁর। সেখান থেকে সৌদি আরব যাবেন তীর্থ করতে। ফলে তাঁর দেশে ফেরার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। রবিবার রাতে শীর্ষ বিএনপি নেতারা খালেদার ঢাকার বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। নেতারা বিদায় শুভেচ্ছা জানান নেত্রীকে। দু’দিন আগে বাংলাদেশের সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামান সস্ত্রীক দেখা করেন খালেদার সঙ্গে। সেই বৈঠক নিছকই সৌজন্যের নাকি চলমান রাজনীতির যোগ রয়েছে তা নিয়ে জল্পনা বিদ্যমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
যেমন খালেদার বিদেশ সফর নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দু রকমের ভাবনা রয়েছে। একাধিক জটিল অসুখে আক্রান্ত খালেদাকে আগের শেখ হাসিনা সরকার বিদেশে চিকিৎসা করতে দিতে যেতে অনুমতি দেয়নি। ৫ অগাস্ট গণ অভ্যুত্থানের পরই তাঁকে বিশেষ ক্ষমতাবলে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন। সেই থেকে তাঁর বিদেশ যাত্রা নিয়ে আলোচনা চললেও একদিনে পাঁচ মাস কেটে গিয়েছে।
বিএনপি সূত্রের খবর, নেত্রীর বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা হওয়ায় দল একদিকে খুশি। অন্যদিকে, সুস্থ হওয়ার পর খালেদার স্বদেশে ফেরা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলে। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও অনেকেই মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনও ছুঁতোয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরা আটকে দিতে পারে।
এই সুবাদেই রাজনীতির আলোচনায় ফিরে এসেছে ‘মাইনাস ফোর’ ফরমুলার প্রসঙ্গ যা প্রায় দু-দশক আগে যা সে দেশের রাজনীতিতে ঝড় তুলেছিল। সেনা নিয়ন্ত্রিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া এবং তাঁদের পুত্র যথাক্রমে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছিল। হাসিনা ও খালেদাকে গৃহবন্দি রেখে নির্বাচন করিয়ে আমেরিকার পুতুল সরকার গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে তা ভেস্তে যায়।
তারেক জিয়া বর্তমানে বিএনপির কার্যনির্বাহী সভাপতি। দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত তারেক বহু বছর লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে, হাসিনা পুত্র জয় আমেরিকার নাগরিক। ৫ অগাস্টের পর থেকে দেশ ছাড়া আওয়ামী লিগ নেত্রী হাসিনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদে থাকায় দিল্লির বাসিন্দা হাসিনা কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। অর্থাৎ চারজনের মধ্যে তিনজন বর্তমানে দেশের বাইরে। একমাত্র খালেদাই দেশে আছেন। তাঁকে বিদেশে আটকে দেওয়া গেলে মাইনাস ফোর ফরমুলার ষোলকলা পূর্ণ হয়।
স্বভাবতই বিএনপি নেতারা খালেদার বিদেশ যাত্রা নিয়ে একদিকে যেমন খুশি, একই সঙ্গে উৎকণ্ঠাও গ্রাস করেছে তাঁদের। বিএনপি নেত্রী তথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার বিদেশে চিকিৎসা ছাড়া উপায় নেই। অন্যদিকে, বিদেশে যাওয়ার পর দেশে ফেরা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও তার সমর্থক শক্তি কোনও ষড়যন্ত্র করবে না, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না বিএনপি নেতৃত্ব।
রবিবার রাতে খালেদা দলীয় নেতাদের মাধ্যমে দলকে বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন দেশের জন্য লড়াই করতে। মুক্তি পাওয়ার পরও খালেদার বিদেশ যাত্রা বিলন্বিত হয় উপযুক্ত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স না মেলায়। বিএনপি সূত্রের খবর, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি জেনে রাজকীয় বহরের এই বিশেষ বিমান দিয়েছেন। এই বিমানটি সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।