খালেদা জিয়া
শেষ আপডেট: 6 May 2025 16:55
অমল সরকার
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া (BNP Supremo Khaleda Zia) ঢাকায় (Dhaka) ফিরেছেন। চিকিৎসার জন্য মাস চারেক আগে লন্ডনে (London) গিয়েছিলেন। উঠেছিলেন বড় ছেলে তারেক রহমানের (Tarek Zia) বাড়িতে। কাতারের রাজ পরিবারের (royal family of Qatar) দেওয়া বিশেষ বিমানে মঙ্গলবার দেশে ফেরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে ফেরেন দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান (Zubaida Rahman) ও সৈয়দা শামিলা রহমান (Shamila Rahman) । শামিলা হলেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে অকাল প্রয়াত আরাফাত রহমানের স্ত্রী। বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা।
দলনেত্রীকে স্বাগত জানাতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এবং শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বিএনপি সমর্থকেরা ভিড় করেছিলেন। বাংলাদেশ সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। ঢাকায় খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’য় ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।
১৭ বছর আগে স্বামী তারেক জিয়ার সঙ্গে দেশ ছাড়েন জুবাইদা। গত জানুয়ারিতে খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রার সময় বিএনপি-র নেতা-কর্মীরা আশা করেছিলেন, মায়ের সঙ্গে তারেক জিয়াও দেশে ফিরবেন। ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মামলায় তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশেরপ আদালত। তারপরও তারেক জিয়া কেন মায়ের সঙ্গে দেশে ফিরলেন না তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। তার উপর তারেক পত্নী জুবাইদা শাশুড়ির সঙ্গে দেশে ফেরায় বিএনপির অন্দরে দলে জিয়া পরিবারের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দেড় যুগের বেশি জুবাইদা যখন লন্ডনে স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে কাটিয়েছেন তখন দেশে শাশুড়ির দেখভাল করেছেন ছোট বউমা শামিলা। বিএনপি-র অন্দরের খরব, তারেক জিয়া নিজে এখনই ফিরতে পারছেন না বুঝে স্ত্রী জুবাইদাকে পাঠিয়ে দিলেন। এই সুবাদে জুবাইদা রহমানের নির্বাসিত জীবনের অবসান হল মঙ্গলবার।
খালেদা জিয়ার আগের তুলনায় অনেকটা সুস্থ হলেও দৌড়ঝাঁপ করে দলের দৈনন্দিন কাজ দেখার মতো শারীরিক সক্ষমতা ফেরেনি। সেই কাজটাই জুবাইদা করবেন বলে মনে করছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই।
কিন্তু মায়ের সঙ্গে ফিরলেন না তারেক জিয়া? বিএনপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা তাঁদের নেতা আইনের শাসনের প্রতি নিষ্ঠাবান। সব মামলা থেকে রেহাই না পাওয়া পর্যন্ত লন্ডনে থাকবেন তারেক। যদিও ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, বকেয়া মামলাগুলি মামুলি। সেগুলির কারণে তারেক জিয়ার দেশে ফিরতে কোনও বাধা নেই। বরং তিনি দেশে ফিরে সশরীরে আদালতে হাজির হলেই বরং ভাল বার্তা যেত।
তাহলে কেন ফিরলেন না বিএনপির কার্যনির্বাহী চেয়ারপারসন তারেক? একটি মহলের খবর, ২০০৮-এ তারেক লন্ডনে চিকিৎসা করানোর উদ্দেশে দেশ ছাড়ার সময় রাজনীতিতে ফিরবেন না বলে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের কাছে হলফনামা দিয়ে থাকতে পারেন।
তারেক দেশ ছাড়ার আগে তিনি ও মা খালেদা, দু’জনেই দুর্নীতির মামলায় কারাগারে ছিলেন। মামলা করেছিল তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই সময় বাংলাদেশে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ছিলেন জেমস এফ মরিয়ার্টি। গোপন তারবার্তায় তিনি মার্কিন প্রশাসনকে তখন জানান, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলওয়ার হোসেন, জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল আলি আহসান মহম্মদ মুজাহিদ এবং বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের পদস্থ কর্তা এটিএম আমিন বৈঠক করেন। উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া সেই বার্তায় জানা যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত তখন জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওই বৈঠকে তারেক জিয়াকে জামিন দেওয়া নিয়ে কথা হয়।
ওই বৈঠকের বিষয়টি পরে বিএনপি নেতা তথা খালেদা জিয়ার আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মহদুদ আহমেদ তাঁর ‘কারাগারে কেমন ছিলাম’ বইয়ে উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, বৈঠকে লিখিতভাবেই তারেক জিয়ার রাজনীতিতে না ফেরার বিষয়ে কথা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। অনেকে মনে করছেন, তারেক জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে তখনকার হলফনামা ঘিরে আইনি জটিলতা এখনও কাটেনি।
বিএনপি নেতৃত্ব তারেক রহমানের দেশে না ফেরা নিয়ে অনেক দিন ধরেই চিন্তিত। খালেদা জিয়া একটা সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিএনপি-তে জিয়া পরিবারের রাশ আলগা হয়ে পড়েছিল। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আশা করেছিল তারেক জিয়া দেশে ফিরলে পরিস্থিতি বদলে যাবে। দল পুরনো মেজাজে ফিরে যাবে। সেই দলে এখন নতুন চিন্তা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফেরা জুবাইদা রহমানকে নিয়ে।
শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের ধারণা, জুবাইদাকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে দলে জিয়া পরিবারের আগল শক্ত করার চেষ্টা হবে। তাতে ছোট বউমা শামিলা বেঁকে বসতে পারেন। তাছাড়া জুবাইদা দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আয়বহির্ভূত সম্পদ করার অভিযোগে ২০০৮ সালে স্বামী তারেক রহমান এবং জুবাইদার মা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন। সেই মামলায় জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করে ঢাকার আদালত। গত বছর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ওই সাজার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে উচ্চ আদালত। কিন্তু মামলা বাতিল বা তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়নি।
সব মিলিয়ে বিএনপি-তে খুশির আবহেও চিন্তার ভাঁজ নেতাদের কপালে। খালেদা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরায় নেতারা খুশি। চিন্তায় পড়লেন শাশুড়িকে মাঝখানে রেখে দুই বউমার সম্ভাব্য ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।