শেষ আপডেট: 2nd September 2024 16:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: যে দেশে মসজিদ পাহারা দিতে হয় না, সে দেশে মন্দিরও পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আমরা তেমন একটা বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এই কথা বলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান। হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে শহিদ রুদ্র সেনের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন বাংলাদেশের জামাত প্রধান বা আমির।
জামাত প্রধান এর আগে ঢাকায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ের সুরক্ষায় দলের কর্মীদের নামানোর আশ্বাস দেন। সংখ্যালঘু নেতারা মানছেন, অনেক জায়গায় জামাতের কর্মীরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে কতিপয় দল আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুললেও জামাত তাতে গলা মেলাচ্ছে না। জামাত প্রধানের বক্তব্য, শেখ হাসিনা অন্যায়ভাবে আমাদের দলকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। সেই একই অপরাধ আমরা করতে পারি না। আওয়ামী লিগের রাজনীতি করার অধিকার আছে।
জামায়াতে ইসলামির প্রধান আরও বলেছেন তাঁরা ভারতের সঙ্গে আলোচনা চান। তাঁর কথায়, আমারা চাই ভারতবাসী এবং সে দেশের সরকারের আমাদের সম্পর্কে ধারণার পরিবর্তন ঘটাতে।' জামাতের আমিরের ওই প্রস্তাব উড়িয়ে দেননি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে অবশ্যই আলোচনা হতে পারে।
বাংলাদেশের মিডিয়া জামাতের আমিরের এই সব বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। তাঁকে নিয়ে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
বছর ৬৫-র জামাত প্রধান পেশা চিকিৎসক। হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা তদারক করছেন তিনি। তাঁর দুই মেয়েও চিকিৎসক। এমবিবিএস পড়ছেন ছোট ছেলেও।
বাংলাদেশের মৌলবী বাজারের আদি বাসিন্দা শফিকুর রহমান সিলেটে মহিলাদের জন্য তৈরি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালন সমিতির প্রধান। তিনি ছাত্র জীবনে গোড়ায় আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে জামাতের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের নেতা হন। ২০২০ থেকে দু দফায় জামাতের শীর্ষ পদে রয়েছেন তিনি।
হাসিনা দেশ ছাড়ার পর জামায়াতে ইসলামির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারপর থেকেই তিনি রাজনীতির ময়দানে সক্রিয়। সেই সক্রিয়তা নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে তাই-ই নয়, একদা শরিক বিএনপির সঙ্গে জামাতের দূরত্ব বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে।
বিএনপি যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর ভোটের জন্য চাপ দিচ্ছে, সেখানে জামাত যৌক্তিক সময় দিতে রাজি।
জামাতের তৎপরতা নিয়ে আলোচনায় উঠে আসছে আমেরিকার অবস্থানও। অতীতে এই দলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে বিরোধিতার অভিযোগ থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জামাতকে সামাজিক ও আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান মনে করে। অনেকেই মনে করছেন, জামাতকে সামনে রেখে আমেরিকা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চালাতে চাইছে। জামাতও এই সুযোগে বাংলাদেশে পায়ের তলায় মাটি ফিরে পেতে চাইছে। সেই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই জামাতের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়তে চাইছেন শফিকুর।
এই ব্যাপারে ভারতকেও পাশে পেতে জামাত নয়াদিল্লির সঙ্গে সখ্য তৈরিতে আগ্রহী। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক প্রস্তাব উড়িয়ে দেয়নি।